নেক্কারদের মৃত্যুর সময় আযরাঈলের আকৃতি


নেক্কারদের মৃত্যুর সময় আযরাঈলের আকৃতি


নেককার লোকগণ মৃত্যুর সময়ে মালাকুল মাউতকে এরূপ ভীষণ আকৃতিতে দেখে না, বরং স্বাভাবিক মনোরম আকৃতিতে দেখে থাকেন। সে সময় নেক্কার লোকগণ যে সব আরাম ভোগ করে থাকে, তা বাদ দিলেও মালাকুল মাউতের মনোরম আকৃতি দেখাই তার পুণ্যের জন্য যথেষ্ট পুরস্কার। হযরত সুলায়মান (আ) মালাকুল মাউতকে প্রশ্ন করলেন- "তুমি লোকদের প্রতি সমান বিচার কর না কেন? একজনের প্রাণ তাড়াতাড়ি বের কর, আবার অন্যকে অস্থিরভাবে নাড়াচাড়া করে আস্তে আস্তে মেরে থাক?" হযরত আযরাঈল (আ) উত্তর দিলেন- "এ সম্পর্কে আমার কোন স্বাধীন ক্ষমতা নেই। প্রত্যেক ব্যক্তির নামের তালিকা আমি পেয়ে থাকি, এতে যেভাবে প্রাণ হরণের নির্দেশ থাকে আমি সে অনুযায়ী কাজ করে থাকি।"

মালাকুল মাউত সম্পর্কে বুযুর্গগণের উক্তি

হযরত ওহাব ইবনে মুনাব্বেহ (রহ) বলেন- "কোন একদিন এক বাদশাহ্ ঘোড়ায় চড়ে বের হতে ইচ্ছা করলেন। এ উদ্দেশ্যে তিনি পোশাক চাইলে পোশাক আনা হল। সে পোশাক তার পছন্দ হল না, অবশেষে তিনি সর্বোৎকৃষ্ট পোশাক পরিধান করলেন। এরপর অনেকগুলো ঘোড়া তার সামনে উপস্থিত করা হয়। সেগুলোও তার পছন্দ হল না, শেষ পর্যন্ত বাদশাহ সবচেয়ে উৎকৃষ্ট একটি ঘোড়া বেছে নিয়ে তাতে আরোহণ করলেন। এরপর সুসজ্জিত সৈন্য বাহিনী নিয়ে ভ্রমণের উদ্দেশ্যে বের হয়ে গেলেন। অহংকারের কারণে আর কারও দিকে দৃষ্টিপাত করলেন না। এমন সময় হযরত মালাকুল মাউত মলিন পোশাক পরে দরিদ্র বেশে বাদশাহর সামনে এসে সালাম দিলেন। বাদশাহ তার সালামের উত্তর দিলেন না। মালাকুল মাউত বাদশাহর ঘোড়ার লাগাম ধরে ফেললেন। অবস্থা দেখে বাদশাহ বললেন "কতবড় বেয়াদবী! একে দূরে সরিয়ে দাও।" মালাকুল মাউত বললেন "মহারাজ। আপনার নিকট আমার কিছু কথা আছে।" বাদশাহ বললেন "থাম। আমি ঘোড়া হতে নেমে নেই।" মালাকুল মাউত বললেন "না। আমি এখনই বলব।" বাদশাহ্ বললেন, "তবে বল।" মালাকুল মাউত বাদশাহর কানে কানে বললেন "আমি যমদূত" এ মুহূর্তেই তোমার প্রাণ বের করার জন্য আমি এসেছি।" একথা শুনামাত্র বাদশাহর চেহারা মলিন হয়ে গেল। মুখে আর কোন কথা বলার মত শক্তি তার রইল না। অনেক কষ্টে বাদশাহ বলতে লাগলেন, "ঘরে গিয়ে স্ত্রী-পুত্রদের নিকট হতে বিদায় নেয়ার জন্য কিছুটা সময় দিন।" মালাকুল মাউত তাকে সময় দিতে অস্বীকার করলেন এবং সাথে সাথে বাদশাহর প্রাণ হরণ করে নিলেন। বাদশাহ্ ঘোড়ার উপর হতে পড়ে গেল আর মালাকুল মাউতও চলে গেলেন।

মালাকুল মাউত একজন মুসলমানকে দেখে বললেন- "আপনাকে একটি গোপন কথা শুনাতে চাই।" সে ব্যক্তি বললেন "কি কথা? বলুন!" মালাকুল মাউত বললেন "আমি যমদূত!" সে মুসলমান লোকটি বললেন "মারহাবা, অনেকদিন যাবৎ আমি আপনার জন্য অপেক্ষা করছিলাম! তাই আপনার আগমন আমার জন্য খুবই প্রিয়, এখন আমার প্রাণ বের করুন।" মালাকুল মাউত বললেন "আপনার যে সব প্রয়োজনীয় কাজ রয়েছে সেগুলো আগে সমাধা করে নিন।" সে লোকটি বলল, "আল্লাহকে দেখা ব্যতীত প্রয়োজনীয় কোন কাজ আমার আর বাকী নেই।" মালাকুল মাউত বললেন- "এখন আপনি যে অবস্থায় ইচ্ছা করেন সে অবস্থায়ই আমি আপনার প্রাণ বের করে নেব।" মুসলমান লোকটি বলল-"তবে এতটুকু বিলম্ব করুন যাতে আমি অযু করে নামায আরম্ভ করতে পারি। আমি যখন সিজদাহরত অবস্থায় থাকব তখন আমার প্রাণ বের করে নেরেন ।।" মালাকুল মাউত তাই করলেন।

হযরত ওহাব ইবনে মুনাব্বেহ (রহ) আরও বলেন, এক দেশে এক মহাপরাক্রান্ত বাদশাহ্ 'ছিলেন, তার মত পরাক্রমশালী বাদশাহ এ জগতে আর ছিল না। মালাকুল মাউত তার রুহ কবয করে আকাশে উপস্থিত হলে ফিরিশতাগণ জিজ্ঞেস করলেন-"হে আযরাঈল। প্রাণ হরণ করার সময় কখনও কি তোমার মনে কারও জন্য দয়া হয়েছিল? মালাকুল মাউত বললেন, হ্যাঁ এক গহীন জঙ্গলে এক গর্ভবতী মহিলা অসহায় অবস্থায় পড়েছিল। এমন সময় তার একটি পুত্র সন্তান ভূমিষ্ঠ হল। ঠিক সে সময় ঐ মহিলার প্রাণ হরণ করার জন্য আমার প্রতি নির্দেশ হল। সে অবস্থায় ঐ সদ্যপ্রসূত শিশুটিকে ধ্বংসের মুখে রেখে আমি উক্ত মহিলার জীবন হরণ করে নিয়ে এলাম। নির্জন বনের সে অসহায় মহিলা এবং তার সে শিশু সন্তানের জন্য আমার মনে দয়ার উদ্রেক হয়েছিল। ফিরিশতাগণ বললেন- "তুমি তো এ বাদশাহকে দেখেছ! যার মত পরাক্রমশালী কোন বাদশাহ পৃথিবীতে আর কেউই ছিল না?" মালাকুল মাউত বলল-"হ্যাঁ দেখেছি।" ফিরিশতাগণ বলতে লাগলেন- "এ বাদশাহ্ ঐ শিশু, যাকে তুমি নির্জন বনে অসহায়- অবস্থায় রেখেছিলে।" একথা শুনে মালাকুল মাউত আল্লাহর প্রশংসা ও পবিত্রতা বর্ণনা করলেন।

No comments

Powered by Blogger.