হযরত ফাতেমা (রাঃ)-এর শৈশব কাল (পার্ট ১ )
হযরত ফাতেমা (রাঃ)-এর শৈশব কাল
হযরত ফাতেমা (রাঃ)-এর শৈশব কাল
একথা সর্বজন বিদিত যে নিখিল বিশ্বের ত্রানকর্তা সুপারিশীর কান্ডারী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ছিলেন দয়ার আধার। যেমন ছিলেন তিনি কষ্ট সহিষ্ণ, তেমনি ভাবে সততা বিশ্বস্ততা, আমানতদারী এক কর্মঠ প্রভৃতির জন্য বাল্যকাল থেকেই তিনি ছিলেন গম্ভীর ও ভাবুক প্রকৃতির। নবী মুহাম্মাদের (সাঃ) মন ছিল সরল উদার, আর স্বভাব ছিল নম্র, হঠাৎ কোন ব্যাপারেই রেগে যেতেন না বরং ধৈর্য্য সহকারে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনার সর্বাত্মক চেষ্টা চালাতেন।
যার কারণেই তো তিনি রাহমাতুললিল আলামীন উপাধিতে ভূষিত হয়ে দুনিয়ায় আগমন করেছেন। নবী নন্দিনী হযরত ফাতেমা (রাঃ) বাল্যা কাল হতেই আদর্শ পিতার ছাচেই গড়ে উঠেছিলেন। হযরত ফাতেমাতুজ জোহরা (রাঃ)-এর গোটা জীবনের দিকে চোখ বুলালে দেখা যায় প্রিয় নবী (সাঃ)-এর চরিত্রের প্রতিটি গুনই তার জীবনে প্রতিফলিত হয়েছিল।
বাল্যকাল হতেই তিনি সত্যের পূজারী ও আমানত দারী, লাজুক নম্র ও সরল মনা ছিলেন। আশ্চার্যের বিষয় হল নবী মুহাম্মদ (সাঃ) যে বিষয়ের প্রতি । বিশেষ ভাবে সজাগ থাকতেন তিনি ও সেই সকল বিষয়ের প্রতি সর্বদা সজাগ থাকতেন । যেমন সততা, আমানতদারী লাজুকতা । তিনি বর্তমান যুগের ছেলে মেয়েদের মত বেহুদা সময় নষ্ট করে বাজে ছেলে মেয়েদের সঙ্গে ধুলাবালি নিয়ে রং তামাশা করতে আদৌ পছন্দ করতেন না।
তবে এই নয় যে পড়াপড়শী ছেলে মেয়েদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতেনা বরং তিনি তার সমবয়সী সহপাঠীদের সাথে সর্বদা সদ্ভাব বজায় রাখতেন। এমন কি যারা প্রিয় নবী (সাঃ)-এর প্রধান শত্রু ছিল অর্থাৎ তাকে চিরতরে দুনিয়া হতে বিদায় করা জন্য বিভিন্ন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হত তাদের সঙ্গেও এক মুহূর্তের জন্যও খারাপ ব্যবহার করতেন না। সেই শত্রুরাও নবী নন্দিনী হযরত ফাতেমা (রাঃ)-এর চরিত্রের ভূয়াষী প্রশংসা করতেন ।
তবে একথা সর্বজন বিদিত যে কেহ যদি উত্তম চরিত্র ও ভাল গুনের অধিকারী হয় তাহালে প্রধান শুক্র তাকে খারাপ জানলে ও তার আদর্শ বাদ ও চরিত্র সম্পর্কে সর্বদা প্রশংসা করে যা ঘটেছিল হযরতের কলিজার টুকরা নয়নের মনি হযরত ফাতেমার (রাঃ)-এর বেলা ।
হযরত ফাতেমা (রাঃ)-এর বাল্যকালের আনন্দ মুহূর্তের দিনগুলির প্রতি তাকালে ও দেখা যায় তিনি কোন সময়ই পাড়া প্রতিবেশীর ছেলে মেয়েদের সাথে ঝগড়া বিবাদ কররেননি বরং এমন ও দেখা গেছে ঐ বাল্য বয়সে পাড়া প্রতিবেশী ছেলেমেয়েদের ঝগড়া বিবাদের মিমাংশা মিটায়ে তাদের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করেছেন, এটা ছিল তার বাল্য কালের চরিত্র।
তিনি কোন সময়ই পাড়াপ্রতিবেশি ছেলেমেয়েদের দোষত্রুটি ও কোন অভিযোগ পিতা মাতার কাছে দিতেন না । আবার পাড়া প্রতিবেশী ছেলে মেয়েরাও তাদের পিতা মাতার কাছে ফাতেমা (রাঃ)-এর বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ তুলতেন না। বরং পিতা মাতার কাছে ফাতিমার (রাঃ) বিভিন্ন গুণাবলী আলোচনা করতেন । প্রিয় পাঠক, পাঠিকাগণ এ থেকেই অনুধাবন করা যেতে পারে যে, শৈশব ও 'বাল্যকালে তিনি কেমন শান্তি প্রকৃতির লোক ছিলেন।
আল্লাহর হাবীব হযরত মুহাম্মদ (সঃ)-এর সাংসারিক জীবনের দিকে দৃষ্টিপাত করলে দেখা যায় তার সংসারে অভাব অনটন সর্বদা লেগেই থাকত। কিন্তু আল্লাহর নবী কোন সময়ই অত্যাধিক অভাব অভিযোগের মধ্যে থেকে ও নাখোশ হন নি।
বরং সর্বদা আল্লাহর শুকরিয়া জ্ঞাপন করেছেন যাই হোক এহেন অভাব অনটনের সংসারে লালিত পালিত হয়ে ও ফাতিমা (রাঃ) কোন সময়ই পাড়া প্রতিবেশি ছেলে মেয়েদের মত এটা নেই ওটা দাও এরকম আবদার করতেননা। সত্যি।
ফাতিমা (রাঃ)-কে দেখে মনে হত পার্থিব কোন ভোগ বিলাসের প্রতিই তার কোন মনোযোগ নেই সত্যি। ফাতেমা (রাঃ) যে জগত বরেণ্যা আদর্শময়ী হয়ে ইতিহাস তথা প্রতিটি মানুষের হৃদয় মন্দিরে চির জাগ্রত হয়ে থাকবে তা তার বাল্য কালের আচরণ থেকেই প্রমাণিত হয়েছিল। তিনি তার বাল্যকালেই সবচেয়ে বেশি পছন্দ করতেন এ সময় সুযোগ হলেই পিতার নিকট অবস্থান করে তার উপদেশ বাণী শ্রবণ করাতে কেবল পিতার উপদেশ গুলি শ্রবণ করতেন তা নয় বরং তা বাস্তব জীবনে অক্ষরে অক্ষরে প্রতিপালন করতেন।
অনেক ক্ষেত্রে এমন ও দেখা গেছে অন্যকে যে
উপদেশ দিতেন তা শ্রবণ করে ঐসব আদেশ উপদেশনিজের জীবনে প্রতিফলিত করতেন। পূর্বেই আলোচনা করা হয়েছে যে হযরত ফাতিমা (রাঃ) দয়ার প্রতীক ছিলেন, যার কাররণেই বাল্যকালে কার দুঃখ কষ্টের কথা শুনলে নিজে অস্থির হয়ে যেতেন।
নবী মুহাম্মাদের (সঃ) কোন বিপদ ও দুঃখ কষ্টের কথা শুনলে নিতান্ত অস্থির হয়ে পড়তেন, শুধু অস্থির নয় তা সমাধানের জন্য ও মাতা সাহেবানীর সাথে আলাপ আলোচনা করতেন এবং বিপদ আপদ থেকে মুক্তি ও মঙ্গলের জন্য রাহমানুর রাহীম আল্লাহ তায়ালার দরবারে কান্না ভেজা কণ্ঠে দুহাত তুলে মুনাজাত করতেন।
শৈশব হতেই ফাতিমা(রাঃ) ছিলেন নির্ভীক, তেজস্বিনা, ও বক্তা তিনি উচিত কথা বলতে শত্রু মিত্র কাউকে পরওয়া করতেন না, বরং বাধা বিপত্তি পেরিয়ে সর্বদা উচিত ও সত্য কথা বলতেন । ভাগ্যবতী নারী হযরত খাদিজা (রাঃ) সর্বদা হযরত ফাতেমা (রাঃ)-কে চোখে চোখে রাখাতেন।
কেননা তাঁর ও একান্ত ইচ্ছা ছিল মেয়েকে আদর্শ নারী হিসেবে গড়ে তোলা, তিনি ফাতেমা (রাঃ)-কে বাল্যকালে ধর্মের কথা শুনাতেন এবং বাস্তব জীবনে হাতে নাতে শিক্ষা দিতেন প্রিয় পাঠক পাঠিকাগণ মনে রাখাবেন একজন আদর্শ মা ই আদর্শ শিশু গড়ে তুলতে পারে। যার জলন্ত প্রমাণ হল হযরত খাদিজা ও ফাতেমা অর্থাৎ যেমন মা তেমন মেয়ে ।
পরবর্তী পার্ট এর জন্য চোখ রাখুন আমার প্রোফাইলের টাইম নাইনে ধন্যবাদ।
No comments