হযরত ফাতেমা (রাঃ)-এর শৈশব কাল (পার্ট ২)
হযরত ফাতেমা (রাঃ)-এর শৈশব কাল (পার্ট ২) |
হযরত ফাতেমা (রাঃ)-এর শৈশব কাল (পার্ট ২ )
অন্য আর এক দিনের ঘটনা প্রিয় নবী (সঃ) কাবা গৃহের মধ্যে নামাজ পড়তেছিলেন এমনি সময় একদল খোদাদ্রোহী কুরাইশ অদূরে দণ্ডায়মান হয়ে হযরতকে নানা অকথ্য ভাষায় গালি গালাজ ও উপহাস করছে। প্রিয় নবী (সঃ) নামাজ রত অবস্থায় সিজদায় গেলেন এমনি সময় নরপিচাশ খোদাদ্রোহী কুরাইশরা একটা উটের নাড়ীভূড়ি এনে চাপিয়ে দিল নবী মুহাম্মদের (সঃ) মাথার উপর।
মুহূর্তের মধ্যে তার পরিধেয় জামা কাপড় নষ্ট হয়ে গেল, শুধু জামা কাপড় নষ্ট হয়ে হল তা নয় নাড়ি ভূড়ির চাপে কোন ভাবে প্রিয় নবী (সঃ) মাথা তুলতে পারছিলেন না, নবী মুহাম্মদের (সঃ) এহেন দৃশ্য দেখে নরপিচাশ কোরাইশ অট্টহাসিতে ভেঙ্গে পরলেন।
এহেন সময় নবী দুলালী খাতুনে জান্নাত হযরত ফাতেমা তথায় উপস্থিত হয়ে পিতার এরূপ অবস্থা দেখে নিজেকে স্থির রাখতে পারলেন না বরং কেঁদে দিলেন। তিনি তৎক্ষণাৎ চোখের পানি মুছতে মুছতে প্রিয় নবী (সঃ)-এর মাথার উপর হতে নারীভুরিগুলো ফেলে দিলেন।
নারীভুরি ফেলে দিয়ে মনের চাপা ক্ষোভ দূর করতে পারলেন না বরং পিতার পার্শ্বে দাণ্ডায়মান হয়েই কঠোর ভাষায় তাদেরকে তিরস্কার করতে লাগলেন। হযরত ফাতিমা (রাঃ)-এর তিরস্কারমূলক কথা শুনে খোদাদ্রোহী কাফেরগণ লজ্জিত হয়ে সেখান হতে চলে গেলেন।ঐতিহাসিক ওহুদের যুদ্ধে সময়ের এক ঘটনা খোদাদ্রোহী কুরাইশগণ আবু সুফিয়ানের নেতৃত্বে তিন সহস্রাধিক সৈন্য নিয়ে নবী মুহাম্মাদের (সঃ)-এর বিরুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়লেন। নবী মুহাম্মদ (সঃ) তাদের সাথে মোকাবেলা করার জন্য কেবল মাত্র সাত শত সৈন্য নিয়ে তাদের সম্মুখীন হন।
নবী মুহাম্মাদের (সঃ) সৈন্য কাফেলা সুনিশ্চিত জয়ের মুখে আনন্দে মেতে উঠে এমন কি মনের খুশীতে পশ্চাতে সুরক্ষিত গিরিপথ ছেড়ে গণিমতের মাল সংগ্রহ করার জন্য সৈন্য কাফেলা প্রত্যেকেই ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েন।
নবী মুহাম্মাদের (সঃ) সৈন্য দলের আনন্দ ও গণিমতের মাল সংগ্রহের সময়ের সুবর্ণ সুযোগে খালেদ ইন ওয়ালিদের নেতৃত্বে আবু সুফিয়ানের একদল সৈন্য পিছনে অরক্ষিত গিরি পথ দিয়ে নবী মুহাম্মাদের (সঃ) সৈন্য কাফেলার উপর অতর্কিতভাবে আক্রমণ চালায়।
এ আক্রমনের কারণেই সুনিশ্চিত জয়ের মুখে মুসলিম দলের পরাজয় ঘটে কাফিরগণ পাথর মেরে প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ)-কে ভু-পাতিত করে এমনকি পাথরের আঘাতে তার পবিত্র দাঁত ভেঙ্গে যায়। নবী কুলের শিরুমণি হযরত মুহাম্মাদ (সঃ)-এর এই ঐতিহাসিক পরাজয় এ আহত হওয়ার সংবাদ পেয়ে বিবি ফাতেমা অস্থির হয়ে পড়লেন; শুধু অস্থিরই হলেন না বরং ঐ মুহুর্তে তার শিশুপুত্র হাসান কে রেখে কতিপয় মুসলিম রমনীসহ উহুদ ময়দানে উপস্থিত হন।
বিবি ফাতেমা (রাঃ) উহুদ ময়দানে উপস্থিত হয়েই দেখতে পেলেন তার আব্বা জানের পবিত্র দত্ত ও ললাট মুবারক হতে অঝরে রক্ত ঝরছে। অজ্ঞান হয়ে তিনি মাটিতে পড়ে আছেন। এহেন হৃদয় গ্রাহী দৃশ্য দেখেই হযরত ফাতিমা (রাঃ) প্রিয় নবীর (সঃ) পবিত্র মুস্তক কোলের উপর তুলে নিলেন। আর তার দুচোখ থেকে ঝরঝর করে পানি পড়ে বক্ষস্থল প্লাবিত হয়ে গেল ।
ইসলামের বীর সৈনিক শেরে খোদা হযরত আলী (রাঃ) ঢালে করে পানি এনে দিলেন সেই পানি দ্বারাই ফাতিমা তার আব্বাজানের ক্ষতস্থান ধৌত করে শুষ্ক ঘাস পুড়ে ক্ষত জায়গার মধ্যে প্রলেপ লাগিয়ে দিলেন।
উল্লেখ্য বিষয় হল এমনি অনেক ঘাটনার মধ্যেই হযরত ফাতিমা (রাঃ)-এর অগাধ পিতৃভক্তির পরিচয় পাওয়া গিয়াছে। যে পিতৃভক্তির কথা আজও ইতিহাসের পাতায় চিরস্মরমীয় হয়ে আছে। বাল্যকাল হতেই হযরত ফাতেমা (রাঃ) আরাম আয়েশ ও অনাড়ম্বর জীবন যাপন মোটেই পছন্দ করতেন না। কোন ক্ষেত্রে ই তার মধ্যে অহংকারের প্রতিচ্ছবি দেখা যেত না।
তবে দেখার কথা ও না যেহেতু তিনি পার্থিব জগতের সুখ শান্তি ভোগ বিলাস পরিত্যাগ করে পরকালের পাথেয় সংগ্রহে সর্বদা ব্যস্ত হযরত ফাতেমা (রাঃ) থাকতেন তবে পরকালের পাথেয় সংহে ব্যস্ত বলে সাংসারিক কাজকর্মে কোন সময়ই উদাসীন ছিলেন না।
কোন এক সময়ের ঘটনা তখন হযরত ফাতিমা (রাঃ)-এর বয়স মাত্র সাত বছর। বাড়ীর সকলেই এক বিবাহ অনুষ্ঠানে যাবার জন্য প্রস্তুতি নিতে লাগলেন তার বড় বোনেরা ভাল ভাল জামা কাপড় পরিধান করে প্রস্তুতি নিলেন, আর হযরত ফাতেমা (রাঃ) পড়ছিলেন মাত্র একখানা ছেড়া কাপড় । তিনি সেই ছেড়া কাপড়া খানা পরেই বোনদের সাথে বিবাহ অনুষ্ঠানে রওয়ানা হলেন ।
তার ছেড়া কাপড় দেখে বোনেরা ভাল কাপড় নিতে বললে তিনি জবাব দিলেন । হে বোনগণ । ভাল ও নতুন কাপড়ের কি প্রয়োজন । আমাদের আব্বাজান
তো সর্বক্ষেত্রেই অনাড়ম্বর জীবন যাপন পছন্দ করেন। বিবি ফাতিমা (রাঃ) বাল্যকালে পাড়া প্রতিবেশী বাজে ছেলেমেয়েদের সাথে রং তামাশা ও চলাফেরা করা তো মোটেই পছন্দ করতেন না।
তবে এটা নয় যে তার সমবয়সীদের সাথে মিলতনা বরং তিনি উত্তম চরিত্রের ছেলে মেয়ের সাথে ভাল সম্পর্ক স্থাপন করত ইতিহাসের পাতা খুললে দেখা যায় পরবর্তীকালে যে সমস্ত নারীরা সমাজের প্রতিটি মানুষের হৃদয়কে তাদের উত্তম চরিত্র ও গুণের দ্বারা জয় করেছিলেন তারা প্রত্যেকেই ছিলেন খাতুনে জান্নাত হযরত ফাতেমা (রাঃ)-এর বাল্যকালের খেলার সাথী ইসলামের প্রথম খলিফা হযরত আবুবকর সিদ্দিক (রাঃ)-এর দুই কন্যা হযরত আসমা এবং হযরত আয়েশা সিদ্দিকা, হযরত উমর (রাঃ)-এর কন্যা হাফসা এবং হযরত জোবায়রের কন্যা ফাতেমা ওরা সকলেই ছিলেন নবী দুলালী হযরত ফাতেমাতুজ জোহরা (রাঃ)-এর বাল্যকালের খেলার সাথী।
হযরত ফাতেমা শৈশবকাল হতেই বাহিরে ঘুরাফিরা মোটেই পছন্দ করতেন না। তনি গৃহে মাতার সাহচার্য অধিক পছন্দ করতেন। কেননা মায়ের চালচলন কথা বার্তা আদেশ উপদেশ অনুকরণ করে তার মত জীবন গঠন করার ইচ্ছে শৈশব কাল হতেই তার মধ্যে জাগ্রত ছিল। ও প্রবল ইচ্ছা থাকা সত্বেই পরবর্তী কালে জ্ঞানে-গুণে আদর্শে ওা চরিত্রে সকল নারীদের শীর্ষে তার নাম স্থান পেয়েছে।
No comments