"ইন শা আল্লাহ" বলার গুরুত্ব. উচ্চারনঃ- "ইন শা আল্লাহ" বলার গুরুত্ব।
💕"ইন শা আল্লাহ" বলার গুরুত্ব. উচ্চারনঃ- "ইন শা আল্লাহ" বলার গুরুত্ব। আরবিঃ- লেখাঃ- শাহাব উদ্দিন তুহিম
মফস্বলের এক ছোট্ট গ্রামে থাকতো আব্দুল হাকিম নামে এক যুবক। আব্দুল হাকিম ছিলো অত্যন্ত পরিশ্রমী ও সৎ। সে ধান চাষ করতো এবং গ্রামে সবার কাছে একজন সৎ চাষী হিসেবে পরিচিত ছিলো। একদিন, আব্দুল হাকিমের পিতার বন্ধুর ছেলে শহর থেকে গ্রামে আসে এবং হাকিমের সাথে দেখা করে। শহরের লোকটি অনেক ধনী এবং তার জীবনের গল্প শুনে হাকিম খুবই প্রভাবিত হয়।
শহরের লোকটি হাকিমকে বিভিন্ন রকম ব্যবসায় বিনিয়োগের পরামর্শ দেয় এবং জানায় যে, ধান চাষ করে এত কষ্ট করে লাভ করা সম্ভব নয়। শহরে নতুন একটি ব্যবসা শুরু করার কথা বলে সে হাকিমকে তার সাথে যেতে প্রস্তাব দেয়। হাকিম প্রথমে কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত হলেও পরে রাজি হয়। কিন্তু, হাকিম এতটাই উত্তেজিত হয়ে পড়ে যে, সে শহরের লোকটির সাথে সবকিছু ঠিক করে ফেলে, কিন্তু কখনো "ইন শা আল্লাহ" বলতে মনে রাখে না।
শহরের লোকটি হাকিমকে তার ব্যবসায় অংশীদার করার জন্য শহরে নিয়ে আসে। তারা একসাথে একটি বড় অর্ডারের জন্য চুক্তি করে, কিন্তু হঠাৎ করেই তাদের পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়ে যায়। অর্ডারের মালামাল পৌঁছাতে দেরি হয়, আর সেখান থেকে লোকসান হতে শুরু করে। তাদের ব্যবসা দাঁড়াতে পারে না এবং কিছুদিনের মধ্যেই পুরো উদ্যোগ ব্যর্থ হয়ে যায়।
হাকিমের মন খুব খারাপ হয়ে যায়, এবং সে বুঝতে পারে যে কিছু একটা ভুল হয়েছে। এরপর তার মনে পড়ে যায় তার বাবার শিখিয়ে দেওয়া একটি কথা: "কোনো কাজ শুরুর আগে যদি আল্লাহর ইচ্ছার কথা স্মরণ না করো, তবে সেই কাজ সফল হতে পারে না। সবসময় 'ইন শা আল্লাহ' বলে কাজ শুরু করতে হয়।"
এতদিন হাকিম তার জীবনের ছোট ছোট কাজেও “ইন শা আল্লাহ” বলতো, কিন্তু এই বড় সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে সে ভুলে গিয়েছিলো আল্লাহর ইচ্ছার কথা।
তখন হাকিম আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং অঙ্গীকার করে যে, এরপর থেকে জীবনের যেকোনো কাজ বা সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে সে “ইন শা আল্লাহ” বলবে। এর মাধ্যমে সে আল্লাহর সাহায্য ও অনুমতি প্রার্থনা করবে, যেন সেই কাজে আল্লাহর ইচ্ছা অন্তর্ভুক্ত থাকে।
গ্রামে ফিরে হাকিম আবার তার ধান চাষ শুরু করে এবং এইবার সমস্ত কাজ আল্লাহর উপর নির্ভর করে করে। সে ব্যবসার সাথে সাথে সামাজিক কাজও করতে শুরু করে। প্রতিটি কাজে “ইন শা আল্লাহ” বলার অভ্যাস গড়ে তোলে। ধীরে ধীরে তার কাজের মধ্যে আল্লাহর বরকত আসতে শুরু করে এবং সে আবার সফল হতে থাকে।
ফজিলত ও আমলঃ- এই গল্প আমাদের শেখায়, কোনো কাজ শুরুর আগে “ইন শা আল্লাহ” বলা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। “ইন শা আল্লাহ” বলতে ভুলে গেলে, আমরা আল্লাহর ইচ্ছাকে উপেক্ষা করে কাজ শুরু করি, যা সফলতার পথে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
নামের ব্যাখ্যাঃ- আব্দুল হাকিমের গল্পটি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, জীবনের যেকোনো কাজ, ছোট বা বড়, শুরুর আগে আল্লাহর ইচ্ছার কথা স্মরণ করা উচিত। “ইন শা আল্লাহ” বলার মাধ্যমে আমরা আল্লাহর উপর ভরসা রাখি এবং তার সাহায্য প্রার্থনা করি। এতে করে আমাদের কাজের মধ্যে বরকত আসে এবং আল্লাহ আমাদের সেই কাজে সাফল্য দেন।
"আর কখনোই কোন বিষয়ে বলো না যে, আমি এটা কাল করব।"
"তোমার প্রতিপালক আল্লাহর ইচ্ছা ব্যতীত। এবং যখন তুমি ভুলে যাও, তখন তোমার প্রতিপালককে স্মরণ করো এবং বলো, হয়তো আমার প্রতিপালক আমাকে এর চাইতে অধিক সঠিক পথের দিকে পথপ্রদর্শন করবেন।" [সূরা আল-কাহাফ - ১৮/২৩-২৪]
No comments