আল্লাহর যিকিরের বয়ান (১নং পর্ব)

📖 আল্লাহর যিকিরের বয়ান (১নং পর্ব)


হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যিকিরের দ্বারা যে জিহ্বা তাজা রাখবে, হাশরের দিন সে হাঁসতে হাঁসতে বেহেশতে চলে যাবে। যে পাত্রে যা থাকে, কাত করলে তাই পড়ে। ঠিক যেই ব্যক্তির দিলে আল্লাহ্ যিকির থাকবে। মউতের সময় তার কলব থেকে তার জবান থেকে আল্লাহ্

যিকির বাহির হয়ে যাবে। 

مست عاشق مست معشوق + پادشایان مال مست

(মস্তে আশেক মস্তে মাশুক পাদশাহা মালে মস্ত) দুনিয়াতে সবাই পাগলের দল, কেউ ছেলেমেয়ের পাগল, কেউ সম্মানের পাগল, কেউ আরামের পাগল, কেউ ভাল-ভাল খাদ্যের পাগল, কেউ মালের পাগল, কেউ টাকার পাগল, কেউ পোশাক ও অলঙ্কারের পাগল কেউ ঘর-বাড়ী দালান  কোঠার পাগল। আর এক দল মানুষ হইলো আল্লাহর পাগল। আহারে দুনিয়ার পাগলেরা! চক্ষু বন্ধ হওয়ার সাথে সাথে সব খতম হয়ে যাবে, যাদের জন্য পাগল ছিলা কিছুই কাজে লাগবে না। আল্লাহ্ পাক বলবেন, যাদের জন্য - পাগল ছিলি তারা তোর খবর লউক, আমি তোর কোন খবর নিব না। যারা আল্লাহ্ পাগল তারা নামাজের পাগল, পর্দার পাগল, তালিমের পাগল, - যিকিরের পাগল। তারা চিন্তা করে কি কাজ করলে আল্লাহ পাক খুশি হবেন। দুনিয়ার পাগলদের তো হাশরের ময়দানে, তামার জমিনের উপরে সূর্যের গরমে, মাথার তালুটা টাস্ টাস্ করে ফেটে মগজগুলো উৎলাতে থাকবে, জিহ্বাটা ঝুলে নাভিস্থল পর্যন্ত পড়ে যাবে। ময়দানে সাড়া পড়বে পানি পানি বলে, তখন জাকেরিনরা,

عاشقان را روز محشر با قیامت کارنیست +

عاشقان را جز تماشائی جمال یار نیست

(আশেকাঁরা রোজে মাহশার বা কেয়ামত কারে নিস্ত, আশেকাঁরা জুষ তামাশায়ে জামালে ইয়ারে নিস্ত) অর্থাৎ, তখন আল্লাহ্ আশেকরা দৌড়াবে আর বলবে, আমার আল্লাহ কৈ? তখন আল্লাহ পাক তার সত্তর হাজার নূরের পর্দা উঠিয়ে কুদরতী হাত বাড়ায়ে বলবেন, আস আমার পাগলেরা আস দুনিয়াতে তোমাদেরকে খুব ঘুরায়েছি, আজ আর ঘুরাব না। আল্লাহর পাগলদের কিসের কবর আযাব, কিসের আবার হিসাব-নিকাশ 


"অর্থ:


আল্লাহ্ আল্লাহ্ কেয়া মুবারক নাম হায়, আল্লাহ্ আল্লাহ্ আশেকোঁকা কাম হায় 

আল্লাহ আল্লাহ যতই জপি ততই মধুর লাগে, আশেক যারা কেবল তারা আল্লাহ আল্লাহ জপে

اندر این راه میتراش و میخراش * تادم آخر دمے فارغ مباش

আন্দরী রাহ মী তরাশ ও মী খরাশ তা দমে আ-খের দমে ফা-রেগ মবাশ

অর্থঃ আল্লাহকে পাওয়ার এ পথে তোমাকে অবিরাম চেষ্টা প্রচেষ্টা - চালিয়ে যেতে হবে, শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগের আগ পর্যন্ত এক মুহূর্তের জন্যও উদাসীন থাকলে চলবে না।

- আল্লাহ্ দরজায় বসে তুমি এমন কাঁদা কাঁদো, অবোধ শিশুর মত কাঁদো। এমন এক দিন আসবে আল্লাহ্ পাক তোমাকে ক্ষমা করে দিবেন।

- আল্লাহ্ পাক বলেন, أَنَا جَلِيْسُ مَنْ ذَكَرَنِی )আনা জালিছু মান যাকারানী( বান্দারে তুমি আমার যিকিরে যখন বসে যাও, তখন আমিও কুদরতীভাবে তোমার সঙ্গে বসে যাই (আল্লাহর পাগল হতে পারলে মনে আসবে, দুনিয়ার সবাই আমাকে ছেড়ে চলে যেতে পারে বেজার হতে পারে, আমি আল্লাহকে ছাড়তে পারি না, বেজার করতে পারি না। দুনিয়ার সবাইর হুকুম অমান্য করা - সম্ভব। আল্লাহ্র হুকুম অমান্য করা সম্ভব নয়। কবরে গেলে কেউ জিজ্ঞাসা করবে না, কবরটা আগুনের কুয়া হয়ে যাবে ৯৯টা সাপে কামড়াবে, শত চিৎকার মারলেও ছেলে-মেয়ে টাকা-পয়সা, বাড়ী-গাড়ী কেউ জওয়াব দিবে না। চক্ষু বন্ধ হওয়ার সাথে সাথে এই দালানের কোঠা হতে সবাই ধরাধরি করে কবরে রেখে চলে আসবে, ঘরে এসে বাতি জ্বালাবে, আমার কবরে কেউ বাতি ■ দিবে না। তখন যদি আল্লাহ পাক খবর না নেন কে খবর নিবে? কবরে না - যেয়ে তো উপায় নেই। আল্লাহ পাক শান্তনা দেন-

لَا يَغُرَّنَّكَ تَقَلُّبُ الَّذِينَ كَفَرُوا فِي الْبِلَادِ ، مَتَاعٌ قَلِيلٌ ثُمَّ مَاؤُهُمْ -

جَهَنَّمُ وَبِئْسَ الْمِهَاه .

লা ইয়াগুররান্নাকা তাকাল্লুবুল্লাযিনা কাফারু ফিল বিলাদ, মালাউন কালিলুন, ছুম্মা মাওয়া হুম জাহান্নামু ওয়া বিছাল মিহাদ)

ওহে আমার বিশ্বাসী মুমেনরা! কাফেরদের আরাম দেখে তোমরা কষ্ট পাইওনা। তারা দুনিয়াতে অল্প কাল ভোগ করবে। অতঃপর তাদের ঠিকানা হবে জাহান্নাম এবং তা কতই না নিকৃষ্ট বিছানা।"

(সূরা আলে-ইমরান, আয়াত: ১৯৬)

ওদের নামাজ নাই, অজু গোসল নাই, রোজা নাই, পর্দা নাই, ঘুষ খায়, সূদ খায়, গান-বাজনা শুনে কত আমোদ করে। ছেলে-মেয়ের বিবাহে কত কত বেহুদা খরচ করে, করে নাজায়েয কাজ করে। তা দেখে তোমরা তা করোনা, ভুলে পড়ো না।

مَتَاعٌ قَلِيلٌ ثُمَّ مَا وَهُمْ جَهَنَّمُ

(মাতাউন কালিলুন ছুম্মা মাওয়াহুম জাহান্নাম)

"ওদেরকে অল্প কয়েক দিনের জন্য আরাম দেওয়া হয়েছে, এর পরের জায়গা হয়ে যাবে জাহান্নাম।"

(সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৯৭)

তাই দুনিয়ার মহব্বতে পড়ে আল্লাহর মহব্বত ভুলিও না, চেষ্টা কর আর কান্দো যে, আল্লাহগো দুনিয়ার পাগল বানাইওনা। তোমার পাগল বানাইয়া লও। জমিন যেখানে নিচু থাকে পানি গড়ায়ে সেই জায়গায় যায়। তেমনি আল্লাহ্র দরবারে নিচু হয়ে যাও, কান্দ আর বল আমার চেয়ে গোনাহগার সারাজাহানে নাই, আল্লাহ্ তোমাকে বুঝি আমি পাইলাম না। তোমাকে তো আমি রাজী-খুশী করতে পারলাম না, আমার উপায় নাই। তখন আল্লাহ্ পাকের রহমত এসে ঐ নিচু জায়গায় ভরে যাবে। .

আল্লাহ্ পাক হাদীসে কুদসিতে বলেন,

أَنَا عِنْدَ الْمُنْكَرَةِ قُلُوبُهُمْ

(আনা ইন্দাল মুনকাছিরাতি কুলুবুহুম) "আমি ভাঙ্গা দিলের কাছে থাকি।"

আল্লাহ পাক কুরআন মাজীদে বলেন,

فَلْيَضْحَكُوا قَلِيلًا وَلْبَبْكُوا كَثِيرًا

(ফাল ইয়াদ হাকুক্কালিলাওঁ ওয়াল ইয়াবকু কাছিরা)

"বান্দারে হাস কম, কান্দ বেশী”।

(সূরা তাওবা, আয়াত: ৮২)

হাসিও না কান্দ বেশী ফালাও চোখের পানি, 
না কান্দিলে পাইবা না যে আল্লাহর মেহেরবাণী। 
আল্লাহর ভয়ে মহব্বতে কান্দিয়া যে বুক ভাসাইবে। 
তাহার চোখের পানি দোজখে পড়িলে, 
দোজখের আগুন তখন নিভিয়া যাইবে।”
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সা:


No comments

Powered by Blogger.