নামাযে খুশু খুযু
✅ নামাযে খুশু খুযু:
বিনম্র আত্মসমর্পণ ও একাগ্রতার সাথে নামায আদায় করার নাম খুশু-খুযু।
আল্লাহ্ তা'আলা এরশাদ করেছেন-
قَدْ أَفْلَحَ الْمُؤْمِنُونَ الَّذِينَ هُمْ فِي صَلُوتِهِمْ خَشِعُونَ .
-'নিশ্চয়ই মু'মিনরা সফলকাম, যারা নিজেদের নামাযে বিনয়ী।'
-সূরা মু'মিনুন: ১২
আয়াতে উল্লিখিত 'খুশু'র ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে অনেকের বক্তব্য হল, এটা আত্মার সাথে সম্পর্কিত আমল। যেমন ভয় ও শঙ্কার সম্পর্ক আত্মার সাথে, তেমনি খুশুও একটি আত্মিক আমল। আবার অনেকে খুশুকে বাহ্যিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সাথে সম্পর্ক করে এটা বাহ্যিক আমল বলে মন্তব্য করেছেন। যেমন দৈহিক স্থিরতা-ধীরতা, এদিক-সেদিক দৃষ্টি না করা, অযথা অঙ্গ সঞ্চালন না করা; নামাযের মাঝে এগুলো বাহ্যিক আমলের সাথে সম্পর্কিত বিষয়। তদ্রূপ অনেকের মতে, নামাযের জন্য খুশু অপরিহার্য, অর্থাৎ এটা একান্ত ফরয বিষয়। অপরদিকে অনেকে খুশুকে নামাযের জন্য ফযীলত ও মুস্তাহাব বলে আখ্যায়িত করেছেন। ফরয আখ্যাদানকারীরা দলীল হিসাবে যে হাদীস উপস্থাপন করে থাকেন তা হল:
ليْسَ لِلْعَبْدِ مِنْ صَلُونِهِ إِلَّا مَا عَقَلَ .
-'নামাযের যে পরিমাণ অংশ বান্দা বুঝে আদায় করে, তার নামাযের ওই পরিমাণ অংশই কবুল করা হয়।' তদ্রূপ তারা দলীল হিসাবে আয়াতও উল্লেখ করেছেন-
واقم الصلوة الذكرى.
-'এবং আমার স্মরণে নামায কায়েম কর।' -সূরা তোয়াহা : ১৪
আল্লাহর যিকির করতে হলে শৈথিল্য, উদাসীনতা ও অবহেলা পরিহার করতে হবে। কালামে পাকে এরশাদ হয়েছে-
وَلَا تَكُنْ مِنَ الْغَفِلِينَ .
-'এবং উদাসীনদের দলভুক্ত হয়ো না।' ।'-সূরা আ'রাফ: ২০৫
ইমাম বায়হাকী (রঃ) মুহাম্মদ ইবনে সীরীন (রঃ) থেকে বর্ণনা করেন, অত্র আয়াত নাযিলের কারণ হচ্ছে, নবী করীম (ছঃ) নামাযে আকাশপানে দৃষ্টি উঁচু করে দেখতেন, এ আয়াতে তা নিষেধ করা হয়েছে। মুসনাদে আবদুর রাযযাকের সূত্রে এ অংশটুকুও অতিরিক্ত বর্ণিত রয়েছে, অতঃপর তাঁকে নামাযে 'খুশু' অবলম্বন করার আদেশ করা হয়েছে। তজ্জন্য তিনি নামাযে দৃষ্টি সেজদার স্থানে নিবদ্ধ করে রাখতেন।
হাকেম ও বায়হাকী হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, নবী করীম (ছঃ) নামাযে দৃষ্টি আসমানের দিকে উঁচু করার প্রেক্ষিতে এ আয়াত অবতীর্ণ হয়; এর পর থেকে তিনি নামাযে দৃষ্টি নীচু করে রাখতেন।
হযরত হাসান (রঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম (ছঃ) বলেছেন, 'পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের উপমা হল, তোমাদের কারো বাড়ির সামনে যদি একটি নহর থাকে আর তাতে যদি প্রচুর পানি থাকে, সেখানে যদি সে দৈনিক পাঁচ বার গোসল করে, তবে তার দেহে কি সামান্যতম ময়লাও অবশিষ্ট থাকবে?'
নামায দ্বারা মানুষ পাপ পঙ্কিলতা থেকে মুক্ত পবিত্র হয়ে যায়, কবীরা গুনাহ ছাড়া অন্য সব ধরনের গুনাহ মাফ হয়ে যায়। এ মর্যাদা অর্জন করতে হলে বিনম্র আত্মসমর্পণ ও নিষ্ঠার সাথে নামায পড়তে হবে। মন নামাযে উপস্থিত রাখতেহবে,নতুবা নামাজ তার আদায়কারীর মুখে নিক্ষেপ করা হবে। রাসূলে করীম । (ছঃ) বলেছেন-
منْ صَلَّى رَكَعَتَيْنِ لَمْ يَحْدُتْ نَفْسَهُ فِيهِمَا بِشَيْ مِنَ الدُّنْيَا غَفَرَ الله ما تقدم من من ذنبه .
'যে ব্যক্তি পার্থিব ধান্ধা চিন্তা থেকে মুক্ত পবিত্র মন নিয়ে দু'রাকাত (নামায আদায় করবে, আল্লাহ্ পাক তার বিগত সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন।'
• অন্য এক হাদীসে বর্ণিত আছে, 'নামায, হজ্জ, তাওয়াফ এবং হজ্জের অন্যান্য বিধানাবলী ইত্যাদি ইবাদত এজন্য প্রদান করা হয়েছে যে, এসব ইবাদত দ্বারা আল্লাহ্ তা'আলাকে স্মরণ করা হবে, কিন্তু এগুলো পালনকালে যে মহান সত্তাকে স্মরণ করা উদ্দেশ্য, যদি তাঁকে স্মরণ করা না হয়, তবে এ যিকির ও ইবাদত অর্থহীন কাজে পরিণত হয়।' নবী করীম (ছঃ) আরও বলেছেন-
من لم تنهى صلونَهُ عَنِ الْفَحْشَاءِ وَالْمُنْكَرِ لَمْ يَزْدَهُ مِنَ الله إِلَّا بُعدًا .
'যে ফরয নামায তাকে অশ্লীলতা ও অপছন্দনীয় কর্ম থেকে বিরত রাখতে পারল না, সে ব্যক্তি ক্রমেই আল্লাহর নৈকট্য থেকে দূরে সরে যাবে।'
(বাকি অংশ আগামীকাল আসবে ইনশাআল্লাহ)
No comments