নামাযের খুশু খুযুর বাকি অংশ
নামাযের খুশু খুযুর বাকি অংশ:
হযরত আবু বকর ইবনে আবদুল্লাহ (রঃ) বলেন, 'তুমি যদি অনুমতি ব্যতীত এবং কোন মাধ্যম ছাড়াই তোমার রবের নিকট যেতে চাও, তবে যেতে পার।' জিজ্ঞেস করা হল, তা কি করে সম্ভব? তিনি বললেন, 'সুন্দরভাবে পরিপূর্ণরূপে ওষু করে জায়নামাযে দাঁড়িয়ে যাও; এভাবে তুমি বিনা অনুমতিতে মাওলার দরবারে প্রবেশ করলে, অতঃপর মাধ্যম ছাড়া কথা বল।'
• হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, 'অনেক সময় এমন হত যে, রাসূলুল্লাহ (ছঃ) আমাদের সাথে কথাবার্তায় মগ্ন রয়েছেন এবং আমরাও তাঁর সাথে কথাবার্তায় মগ্ন রয়েছি; ইতোমধ্যে নামাযের সময় উপস্থিত হয়েছে, তখন রাসূলুল্লাহ (ছঃ)-এর অবস্থা এমন হত যেন তিনি আমাদের চেনেন না এবং আমরাও তাঁকে চিনি না; আল্লাহ্ তা'আলার আযমত ও প্রতাপ তাঁকে আচ্ছন্ন করে ফেলত।'
নবী করীম (ছঃ) বলেছেন, 'নামাযে দাঁড়ানোর পর বান্দার দেহ যেমন হাজির থাকে, তেমন যদি তার অন্তরও হাজির না থাকে, তবে আল্লাহ্ তা'আলা এরূপ নামাযের প্রতি মোটেও দৃষ্টিপাত করেন না।'
হযরত ইবরাহীম (আঃ) নামাযে দাঁড়ানোর পর ভয়ে এতই কাঁপতেন যে, দূর থেকে তাঁর হৃৎপিণ্ডের কম্পনের শব্দ শোনা যেত।
হযরত সাঈদ তানুখী (রঃ) নামাযে দণ্ডায়মান হলে তাঁর অবারিত অশ্রু ধারা প্রবাহিত হয়ে গণ্ডদেশ ভিজে শাশ্রুতে পৌঁছত।
একদা এক ব্যক্তিকে নবী করীম (ছঃ) নামাযে হাতে দাড়ি সঞ্চালন করতে দেখে বলেন, 'এ ব্যক্তির অন্তরে খুশু ও একাগ্রতা থাকলে তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গও স্থির থাকত।'
বর্ণিত আছে, হযরত আলী (রাঃ) নামাযে দাঁড়ালে ভয়ে কাঁপতেন এবং চেহারা বিবর্ণ হয়ে যেত। একদিন তাঁকে প্রশ্ন করা হল, 'হে আমীরুল মোমিনীন! নামাযে আপনার এ অবস্থার কারণ কি?' তিনি বললেন, 'তখন আল্লাহ্ তা'আলার
সেই আমানত আদায়ের সময় এসে যায়, যে আমানত বহন করতে আকাশ, পৃথিবী ও পর্বতসমূহ অস্বীকৃতি জানিয়েছিল; অথচ আমি তা বহন করেছি।'
হযরত আলী ইবনে হুসাইন (রাঃ) সম্পর্কে বর্ণিত আছে, তিনি যখন ওযূ করতেন তখন তাঁর চেহারা বিবর্ণ হয়ে যেত। লোকজন এর কারণ জানতে চাইলে তিনি বলতেন, 'তোমরা কি জান না, এরপর আমি কার দরবারে দণ্ডায়মান হব?
হযরত হাতেম আসাম (রঃ)-এর নিকট তাঁর নামায সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বললেন, যখন নামাযের সময় আসে, তখন আমি পরিপূর্ণরূপে ওযু করি। এর পর জায়নামাযে এসে কিছুক্ষণ ধীরস্থিরভাবে অপেক্ষা করি। এভাবে সম্পূর্ণ শান্ত হওয়ার পর নামাযের জন্য দাঁড়াই। তখন আমার অবস্থা এমন হয় যে, আমি মনে দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে ধ্যান করি, আল্লাহর পবিত্র ঘর কাবা আমার সামনে, পুলসেরাত আমার নীচে, জান্নাত আমার ডানে, জাহান্নাম আমার বামে এবং মৃত্যুর ফেরেশতা আযরাঈল (আঃ) আমার পিছনে। সে সঙ্গে এ কথাও দৃঢ়ভাবে মনে করি, এটাই আমার জীবনের শেষ নামায, এর পরেই আমার মৃত্যু, এর পর আর কোন নামাযের সুযোগ হবে না। এ চিন্তা করেই আমি আল্লাহ্ প্রতি ভয় ও আশার মধ্যবর্তী স্তরে থেকে অত্যন্ত বিনয়াবনত হয়ে, নম্রতা ও একাগ্রতার সাথে 'আল্লাহু আকবার' বলে নামায শুরু করি। এরপর সুস্পষ্ট ও ধীরস্থিরভাবে কেরাআত পাঠ করি। রুকু করি অত্যন্ত বিনয়ের সাথে। সেজদায় অবলম্বন করি পরিপূর্ণ একাগ্রতা ও নিষ্ঠা। বাম পা বিছিয়ে দিয়ে বাম নিতম্বে উপবেশন করি, ডান পা খাড়া রেখে অঙ্গুলি কেবলার দিকে ফিরিয়ে রাখি এবং অন্তরে পরিপূর্ণ একাগ্রতা ও আল্লাহর ভয় জাগ্রত রাখি। এরপরেও আমি বলতে পারি না, আমার নামায আল্লাহর দরবারে গৃহীত হয়েছে কি না?
হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, 'আন্তরিক নিষ্ঠা ও ধ্যানমগ্নতা সহকারে দু'রাকাত নামায পড়া উদাসীন অন্যমনস্ক অবস্থায় সারারাত নামায পড়ার চেয়ে উত্তম।'
○ নবী করীম (ছঃ) বলেন, 'আখেরী যমানায় আমার উম্মতের মধ্যে কিছু লোক এমন হবে, যারা মসজিদে হাজির হবে, কিন্তু সেখানে মজলিস অনুষ্ঠান করে তারা পার্থিব আলোচনায় লিপ্ত হবে; তাদের অন্তরে দুনিয়ার মহব্বত বিরাজিত। সাবধান, এসব লোকের সংস্পর্শে যেও না। কেননা, আল্লাহ্ তা'আলা এদের প্রতি অসন্তুষ্ট।'
- হযরত হাসান (রঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী করীম (ছঃ) বলেছেন, "আমি কি তোমাদের বলব, পৃথিবীর নিকৃষ্টতম চোর কে?' সাহাবায়ে কেরাম আরজ করলেন, নিশ্চয়ই বলুন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! নবী করীম (ছঃ) বললেন,
সবচেয়ে নিকষ্ট চোর হচ্ছে সে ব্যক্তি যে নামাযে চুরি করে।' সাহাবীরা আরজ করলেন, 'ইয়া রাসূলাল্লাহ! নামাযে চুরি করা হয় কিভাবে? আল্লাহর রাসূল (ছঃ) বললেন, 'রুকু সেজদা পরিপূর্ণভাবে আদায় না করাই নামাযে চুরি করা।'
✅✅✅✅✅✅✅✅✅✅✅✅✅✅
রাসূল (ছঃ) বলেন, কেয়ামত দিবসে সর্বাগ্রে নামায পরিত্যাগকারীদের জিজ্ঞেস করা হবে। কেউ পরিপূর্ণভাবে নামায আদায় করে থাকলে তার অন্যান্য বিষয়ের হিসাব সহজ করা হবে। আর ফরয নামাযে কোন ত্রুটি থাকলে আল্লাহ্ তা'আলা ফেরেশতাদের বলবেন, দেখ আমার বান্দার কোন নফল নামায আছে কি না; সেগুলো দিয়ে তার ফরয নামাযের ত্রুটি মুছে দাও।
✅✅✅✅✅✅✅✅✅✅✅✅✅✅
নবী করীম (ছঃ) বলেন, 'বান্দার জন্য সর্বোৎকৃষ্ট নেয়ামত হচ্ছে দু'রাকাত নামাযের তওফীক পাওয়া।'
✓ হযরত ওমর (রাঃ) যখন নামাযে দণ্ডায়মান হতেন, তখন তাঁর পাঁজর কাঁপত এবং উপর ও নীচের দাঁতগুলো পরস্পরের সাথে লেগে শব্দ হতে থাকত। এর কারণ জানতে চাইলে তিনি বলতেন, 'আল্লাহর আমানত আদায়ের সময় সন্নিকটে, জানি না আমি এ আমানত কিভাবে আদায় করব।'
• খালফ ইবনে আইয়ুব (রঃ) সম্পর্কে বর্ণিত আছে, একদিন তিনি নামায শুরু করলে তাঁকে ভীমরুল হুল ফুটিয়েছিল। ফলে হুল ফুটানো স্থান থেকে রক্ত বের হয়; অথচ তিনি তা মোটেও অনুভব করতে পারেননি। অবশেষে ইবনে সাঈদ এসে তাঁকে জানালে তিনি কাপড় ধৌত করেন। এর কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'যে ব্যক্তি মহাপরাক্রমশালী সত্তার সামনে দাঁড়ায়, পিছনে যার মৃত্যুর ফেরেশতা দণ্ডায়মান থাকে, যার বামে জাহান্নাম আর ডানে জান্নাত থাকে এবং তার পা থাকে পুলসেরাতের উপর, সে-কি এসব বিষয় কখনও অনুভব করতে পারে?'
হযরত ইবনে যর (রঃ)-এর হাতে এক সময় একটি ফোঁড়া হয়েছিল। তিনি অধ্যাত্ম জগতে অতি উচ্চ মর্যাদার অধিকারী ছিলেন। চিকিৎসকরা বলেছিলেন, 'এ মারাত্মক ফোঁড়া হতে বাঁচতে হলে আপনার হাত কেটে ফেলতে হবে।' তিনি অনুমতি দিয়েছিলেন। চিকিৎসকরা বলেন, 'তবে আপনাকে রশি দিয়ে ভালভাবে বেঁধে তারপর কাটতে হবে, অন্যথা আপনি অসহনীয় কষ্টে ছুটাছুটি করতে থাকবেন, এতে আরো মারাত্মক ক্ষতি হয়ে যাবে।' তিনি বললেন, না, এসবের প্রয়োজন নেই; বরং আমি নামায শুরু করলে তোমরা আমার হাত কেটে নিও।' অনন্তর নামাযরত অবস্থায় তাঁর হাত কাটা হয়েছিল, তিনি তা মোটেও অনুভব করতে পারেননি।
No comments