রুহ কবজ ও কবরের ঘোষণা (২য় পর্ব)
➤........রুহ কবজ ও কবরের ঘোষণা (২য় পর্ব)........➤
আল্লাহ্ পাকের আরশের নীচে একটি গাছ আছে, দুনিয়াতে যত প্রাণী আছে, সেই গাছে তত সংখ্যক পাতাও আছে। গাছটির নাম শাজারাতুল মুনতাহা। যখন কোন ব্যক্তির আয়ু শেষ হইবার মাত্র চল্লিশ দিন বাকী থাকে, তখন ঐ গাছটির একটি পাতা আজরাইল (আঃ) এর সামনে ঝরিয়া পড়ে, ইহাতে ঐ লোকটার নাম লিখা থাকে, তখন আজরাইল (আঃ) বুঝতে পারেন, আরশের নীচ হইতে প্রত্যেক নামের উপর এক বিন্দু পানি পড়ে এবং তার রূহ নিবার জন্য তৈয়ার হন। যার নামের উপর সবুজ বিন্দু পড়ে বুঝিবে সে বদকার, আর যে নামের উপর সাদা বিন্দু পড়ে বুঝিবে সে নেককার। হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, জবান যখন বন্ধ হয়ে যায়, তখন তার নিকট পাঁচজন ফেরেশতা আসে, প্রথম ফেরেশতা এসে বলে, ওহে আল্লাহর বান্দা! আমি তোমার রিজিকের ব্যবস্থা করিতাম, আজ সারা জাহান ঘুরিয়াও তোমার জন্য এক লোকমা খাদ্য আনতে পারলাম না, তোমার রিজিকের দরজা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। দ্বিতীয় ফেরেশতা এসে বলে, ওহে আল্লাহর বান্দা! আমি তোমার পানির ব্যবস্থা করে আসছিলাম, আজ সারা জাহান ঘুরিয়াও তোমার জন্য এক বিন্দু পানি পাইলাম না। তৃতীয় ফেরেশতা এসে বলে, ওহে আল্লাহর বান্দা! আমি তোমার চলা ফিরার ব্যবস্থা করিতাম, আজ সারা জাহান ঘুরিয়াও তোমার জন্য এক কদম জায়গাও পাইলাম না। চতুর্থ ফেরেশতা এসে বলে, ওহে আল্লাহর বান্দা তোমার শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যবস্থাকারী আমি ছিলাম, আজ সারা জাহান ঘুরিয়াও তোমার শ্বাস ফেলিবার একটু জায়গাও আমি পাইলাম না। অবশেষে পঞ্চম ফেরেশতা এসে বলে, ওহে আল্লাহর বান্দা, তোমার হায়াতের ব্যবস্থা আমার হাতে ছিল, আজ সারা জাহান ঘুরিয়াও আমি তোমার জন্য এক মুহুর্ত হায়াতও পাইলাম না। তাই আমরা সবাই বিদায় হয়ে গেলাম। ইহার পর কেরামান কাতেবীন ফেরেশতা এসে বলে, ওহে আল্লাহর বান্দা আমরা তোমার নেকী বদি লিখিয়া রাখিতাম, আজ তোমার নেকী বদি কিছুই পাইলাম না। এই কথা বলে দুই জনে দুইখানা পুস্তিকা বের করে তার সামনে ধরে, তখন তার শরীর দিয়ে ঘাম বাহিয়া পড়ে, আমলনামা পড়ার ভয়ে ভীত হয়ে ডানে-বামে তাকাইতে থাকে, তখন ফেরেশতারা চলে যায়। আজরাইল (আঃ) এসে হাজির হয়ে যায়, তার ডান দিকে রহমতের ফেরেশতা থাকে, বাম দিকে আজাবের ফেরেশতা থাকে, নেককার হইলে রহমতের ফেরেশতাগণকে ডাক দেওয়া হয়। বদকার হইলে আজাবের ফেরেশতাগণকে ডাক দেওয়া হয়। দুনিয়াতে সবচেয়ে কঠিন সময় হলো জান কান্দানির সময় তখন চক্ষু দুইটি খাড়া হয়ে যাবে, নাকের ছিদ্র মোটা হয়ে যাবে, ঠোঁট দুইখানা লটকিয়ে যাবে, চেহারা হলুদ হয়ে যাবে, নখগুলি সবুজ রং ধারণ করবে, কপাল হইতে ঘাম বাহির হবে, জবান বন্ধ হয়ে যাবে, কিছু জিজ্ঞাসা করলে উত্তর দিতে পারবে না। মাল দৌলত ছেলে-মেয়ে আত্মীয়-স্বজন বন্ধু-বান্ধব ঘর-বাড়ী যাহা ত্যাগ করে যাইতেছে, সবই খেয়ালে আসবে। মনে হবে হায়রে জীবনটা বৃথাই কাটাইয়াছি। শিরাগুলি শিথিল হয়ে আসবে আশা ভঙ্গ হয়ে যাবে, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলি অকেজো হয়ে যাবে। ছেলে-মেয়ে আত্মীয়-স্বজন তাকে বিদায় দিবার জন্য দৌড়িয়ে আসবে। পানির পিপাসায় কলিজা ফাটিয়া যাবে, মনে চাহিবে সাত দরিয়ার পানিও যদি মুখে ঢেলে দেওয়া হয় তবুও বুঝি পিপাসা যায়না। বুদ্ধি-বিবেচনা বদলায়ে যাবে, শয়তান ঈমান নিবার জন্য তখন বরফের পানি ভরা পেয়ালা এনেছি বলে পেয়ালা নাড়ায়। আর বলে তোমাকে পানি দিব, তুমি বল আল্লাহ্ দুই, তাহলে এই ভয়ানক কষ্ট হতে রেহাই পাবে। নেককার বন্ধু বা ওস্তাদ থাকলে, তাকে ডান পাশে দেখতে পাবে। সে বলবে, তুমি ঐ পানি পান করিওনা, তুমি বল,
لا حَولَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ الْعَلِيِّ الْعَظِيمِ
(লা হাওলা ওয়ালা কুওওয়াতা ইল্লা বিল্লাহিল আলিয়ি্যল আযীম)
আর নেককার বন্ধু বা ওস্তাদ না থাকলে ঐ সংকট মুহুর্তে পিপাসায় ধৈর্য ধরতে না পেরে তার সাথে একমত হয়ে পড়ে, শয়তানের প্রস্রাব খেয়ে কাফের হয়ে দুনিয়া ত্যাগ করে ইমাম আবু হানিফা (রহ.) বলেন, যারা ঈমান লাভের কারণে শোকর করে না, মউতের ভয় করে না, মানুষের উপর জুলুম করে অধিকাংশ এমন লোকগুলো মৃত্যুর সময় ঈমান হারায়ে কাফের হয়ে দুনিয়া ত্যাগ করে। (নাউজুবিল্লাহ)
আজরাইল (আঃ)-এর সাহায্যকারী ফেরেশতাগণ রূহকে টেনে গলা পর্যন্ত আনলে, আজরাইল (আঃ) নিজেই রূহ বাহির করেন। তখন প্রাণপাখী উড়ে যাবে শূন্য খাঁচা পড়ে রবে। দুইখানা হাত, দুইখানা পা গতিহীন হয়ে পড়ে থাকবে।
(৩য় পর্ব আসিতেছে ইনশাআল্লাহ)
No comments