রুহ কবজ ও কবরের ঘোষণা (৩য় পর্ব)
➤......রুহ কবজ ও কবরের ঘোষণা (৩য় পর্ব).......➤
হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তখন আসমান হইতে ঘোষণা করা হয়, হে আদম সন্তান। তুমি দুনিয়া ত্যাগ করেছ, না দুনিয়া তোমাকে ত্যাগ করেছে? কোথায় তোমার সেই বাকপটু জিহ্বা? কে তোমার জবান শক্তি হরণ করে নিয়েছে? কোথায় তোমার শ্রবণকারী কান? কে তোমাকে বধির করেছে? কোথায় তোমার বন্ধু-বান্ধব? কে তোমাকে একাকী করে রেখেছে? যখন গোসল দেওয়ার জন্য তক্তার উপর রাখা হয়, তখন আসমান হতে চিৎকার দিয়ে বলা হয়: হে আদম সন্তান! তোমার সেই বলবান শরীর কোথায়? কে তোমাকে এত দুর্বল করে দিয়েছে? তোমাকে ধন্যবাদ, যদি তুমি জান্নাতবাসী হয়ে থাক, আর তোমার প্রতি আক্ষেপ যদি তোমার স্থান দোযখে হয়ে থাকে যখন কাফন পরানো হয়, তখন তিনবার উচ্চস্বরে ডেকে বলা হয়, হে আদম সন্তান, তোমাকে ধন্যবাদ যদি আল্লাহ পাককে তুমি সন্তুষ্ট করে থাক, আর তোমার প্রতি আক্ষেপ যদি আল্লাহ্ পাক তোমার প্রতি নারাজ হয়ে থাকেন। পথ খরচ ছাড়া তুমি দীর্ঘ দিনের সফরে চলেছ। এই যে, নিজের ঘর-বাড়ী হইতে বের হয়ে যাইতেছ, আর কোন দিন এই বাড়ীতে কখনও ফিরে আসতে পারবে না। তুমি কোন ভয়াবহ স্থানের দিকে রওয়ানা করেছ যিখন খাটের উপর রেখে জানাজার দিকে চারি জনে কাধে লয়ে অগ্রসর হয়। তখন সন্তানেরা হায় আমার মা! হায় আমার বাবা! বলে পিছনে পিছনে দৌড়ায়ে ছুটে। আর মা-বাপে হায় ছেলে হায় মেয়ে বলে রোদন করতে থাকে। এই হৃদয় বিদারক সময় মুর্দার এমন জোরে চিৎকার মারে, যাহা জ্বিন আর মানুষ ব্যতীত সকল প্রাণী শোনে। মুর্দার বলে ভাইগণ! আল্লাহর কসম একটু থাম। আমি চির বিদায় হয়ে যাইতেছি। হায়রে মা-বাপ! হায়রে সন্তানেরা। হায়রে বন্ধু-বান্ধব আত্মীয়-স্বজনেরা আজ বুঝি দিলা আমায় জনমের বিদায়। আমাকে জর্জ ঘর ছায়ায় হইতে বের করে দিয়েছ। আর বুঝি কোন দিন এই ঘরে আসতে পারবো না? রং বে-রংয়ের দামি শাড়ি তোমার বাক্সে থাকবে, তাহা না দিয়ে সাদা কাপড় পরায়ে তোমায় কবরে নামাবে? আমার ঘরে আমি থাকব, কেন তোমরা বের করো? কেহ তাহা শোনবে না গো! যতই তুমি কান্দো কাটো। ভাইগণ! একটু থাম এত তাড়াতাড়ি করিওনা। আমার সন্তানেরা আজ এতীম তোমরা
তাদেরকে কষ্ট দিও না। আর কোন দিন তাদের কথা শুনতে পারবে না। হে আমার সন্তানেরা দুনিয়া আমাকে যেভাবে ঠকায়েছে, সাবধান তোমাদেরকে যেন তেমন ঠকাইতে না পারে, দুনিয়া আমাকে নিয়ে যেভাবে খেলা করেছে, সাবধান তোমাদের সাথে তেমন যেন না করতে পারে। দেখ আমি যাহা জমা করেছিলাম সবই ছেড়ে যাইতেছি, তোমরা তাহা দিয়া শান্তি করবে, কিন্তু আমার পাপের ভাগ তোমরা নিবা না। হিসাব গ্রহণকারী আমার নিকট হইতে হিসাব নিবে। কিন্তু তোমরা আমাকে ভুলে যাইবে, তোমরা আমাকে চির বিদায় দিতেছ, আর কোন দিন সন্ধান লইবে না। তখন আসমান হইতে ঘোষণা করা হয়, হে আদম সন্তান! তোমার প্রতি ধন্যবাদ যদি তোমার আমল নেক হয়ে থাকে এবং তোমাকে ধিক্কার যদি তোমার আমল বদ হয়ে থাকে। তোমাকে ধন্যবাদ যদি তুমি তওবাকারী হয়ে থাক। তোমাকে ধিক্কার যদি আল্লাহ পাক তোমার উপর না রাজ হয়ে থাকেন। যখন জানাযার নামাজের জন্য সামনে রাখা হয়, তখন আসমান হইতে তিনবার চিৎকার দিয়ে বলা হয়, হে আদম সন্তান! তুমি যে যে আমল করেছ তাহা এখনই তুমি দেখতে পাবে, যদি নেক আমল করে থাক, তবে ভাল পুরস্কার পাবে, আর যদি বদ আমল করে থাক, তবে এর প্রতিফল এখনই ভোগ করতে হবে। তোমাকে ধন্যবাদ যদি তুমি তোমার জীবনটাকে নেককাজে ব্যয় করে থাক, আর তোমার প্রতি আক্ষেপ যদি তুমি তোমার মূল্যবান জীবনটা বদ আমলে বরবাদ করে থাক, যখন খাট বহন করে কবরের দিকে নিয়ে যাওয়া হয়, তখন মুর্দার রোদন করে বলে, হে ভাই বন্ধুগণ। আমার ওয়ারিশগণ, আল্লাহর কসম তোমরা আমাকে এত তাড়াতাড়ি ভুলে যেও না, আমি অনেক মাল-দৌলত দালান কোঠা তোমাদের জন্য জমা করে রেখে গেলাম, তোমরা আমার জন্য দান করতে ভুলে যেও না, তোমাদেরকে আমি এলেম, আদব শিখায়ে গেলাম তোমরা আমার জন্য দোয়া করতে, কবর যিয়ারত করতে ভুলে যেও না যখন কবরে রেখে লোকেরা মাটি দিয়ে চল্লিশ কদম দূরে চলে যায়, তার আমলসহ একাকী তাকে আল্লাহর হাওলা করে বাড়ী ফিরে যায়। তখন আল্লাহ্ পাক ডেকে বলেন, ওহে আমার বান্দা! তুমি যাদের জন্য আমার এত নাফরমানী করেছ তারা এখন কোথায়? তখন কবরের মাটি বিকট আওয়াজে বলে, হে মানুষ! তুমি আমার উপর থাকিয়া আল্লাহর নাফরমানী করেছিলে, এখন আমার পেটের ভিতরে ইহার প্রতিফল ভোগ করতে হবে। তুমি আমার উপর দিয়ে হাঁটিয়া বেড়ায়েছিলে, এখন আমার পেটের ভিতরে তোমার কাঁদিয়া কাল কাটাইতে হবে। আমার উপর থাকিয়া তোমার কতই না অহংকার ছিল। এখন আমার পেটের ভিতরে তুমি অপমানিত লাঞ্ছিত হবে। আমার উপর তুমি আলো বাতাসের মধ্যে চলিয়াছিলে, এখন আমার পেটের ভিতরে তোমাকে অন্ধকারে থাকতে হবে। আমার উপর তোমার অনেক সঙ্গীসাথী ছিল, এখন আমার পেটের ভিতরে তোমার একা থাকতে হবে।
"মাটির বাড়ি মাটির ঘর মাটির হবে বিছানা,
আইতে একা যাইতে একা, সঙ্গে কেহ যাবে না।"
• হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, কবর প্রত্যহ পাঁচ বার উচু আওয়াজে বলে, আমি নির্জনতা ও একা থাকার ঘর, তুমি কোন সাথী নিয়ে আস। সেই সাথী হলো প্রতিদিন কুরআন শরীফ তেলাওয়াত করা। আমি অন্ধকার ঘর তুমি সাথে বাতি নিয়ে আসিও। তাহা হলো রাত্রের এবাদত বা রাত্রের নামাজ। আমি মাটির ঘর তুমি বিছানা সঙ্গে নিয়ে আসিও, তাহা হলো অন্যান্য নেক আমল। আমি সাপ বিচ্ছুর ঘর তুমি সাপের ঔষুধ সাথে নিয়ে আসিও। তাহা হলো বেশি বেশি করে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম পড়িও এবং নির্জনে বসে পাপের কথা স্মরণ করে আল্লাহর দরবারে চোখের পানি ফেলিও। আমি মুনকার নাকীরের সওয়ালের ঘর তুমি জবাব দানের জন্য বেশি বেশি করে (লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু) এর যিকির সাথে নিয়ে আসিও।
"গুনাহের বোঝা মাথায় নিয়া এই দুনিয়ায় চলেছি,
দয়া করে মাফ করে দাও হে মা'বুদ ইলাহি।
আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা সাইয়্যিদিনা মুহাম্মাদ
ওয়া আলা আলি সাইয়্যিদিনা মুহাম্মাদ (সা:)"
(সমাপ্ত)
No comments