➤➤➤নেককারের মৃত্যু ও কবর➤➤➤

➤➤নেককারের মৃত্যু ও কবর➤➤➤

নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আল্লাহ্ পাক যদি কোন বান্দার প্রতি খুশি থাকেন, তার মৃত্যুর সময় আজরাঈল (আঃ)-কে বলেন, অমুক বান্দার রূহ নিয়া আস। তার পরীক্ষা হয়ে গেছে, সে পাশ করেছে। তখন আজরাঈল (আঃ) পাঁচশত ফেরেশতাকে সঙ্গে করে নিয়ে আসে। প্রত্যেক ফেরেশতা নতুন নতুন সুসংবাদ শুনায় এবং রাইহান ফুলের ডাল ও জাফরানের শিকড় হাতে নিয়া দুই কাতারে লাইন ধরে দাঁড়ায়ে যায়। তাদের নিকট জান্নাতের কাফন থাকে এবং সাদা রুমালের মধ্যে মেশকের তীব্র সুগন্ধি ছড়াইতে থাকে। আজরাঈল (আঃ) তার মাথার দিকে বসে, ফেরেশতাগণ চারিদিকে ঘিরিয়া বসে। মেশকওয়ালা সেই রুমাল তার থুতনীর নিচে রাখে। জান্নাতের দরওয়াজা তার নজরের সামনে খুলিয়া দেওয়া হয়। তার মনকে জান্নাতের নতুন নতুন জিনিসের দ্বারা প্রলোভন দেওয়া হয়। যেমন কান্নার সময় বাচ্চার মনকে প্রলোভন দেয়, তেমনিভাবে বেহেশতের ফল, ফুল, পোশাক পরিচ্ছদের বাহার দেখানো হয়। এটি

 এই সব দৃশ্য দেখে তার রূহ শরীর হইতে বাহির হইবার জন্য এইভাবে ছটফট করিতে থাকে, যেমন খাচার মধ্যে পাখি করিয়া থাকে। তখন আজরাঈল (আঃ) তাকে বলে হে নেককার রূহ, কাটাবিহীন ফুল এবং থোকা থোকা আঙ্গুর ও কলা গাছের লম্বা লম্বা ছায়া এবং প্রবাহিত পানিওয়ালা জান্নাতের দিকে চল। সূরা ওয়াকেয়ার মধ্যে আল্লাহ পাক বলেন, আজরাঈল (আঃ) সেই রূহের সাথে খুব নম্র ব্যবহার করে থাকে। তারপর রূহ শরীর হইতে বের করা হয়। যেমন, আটা হইতে পশম বের করা হয়। রুহ বাহির হইবার পর সমস্ত ফেরেশতা তাকে সালাম করে আর শরীর হইতে রূহ বিদায়ের কালে বুলে যায়, আল্লাহ পাক তোমাকে ভাল প্রতিদান দেউক। তুমি আল্লাহ পাকের এবাদতে জলদি করিতে, আর তার নাফরমানিতে অলসতা করিতে। আজ তুমি আজাব হতে মুক্তি পেয়েছ। আমাকেও মুক্ত করেছ।

• তার বিচ্ছেদে জমীনের ঐ অংশগুলো কাঁদিতে থাকে, যেখানে যেখানে বসে সে এবাদত করিত। আকাশের ঐ সব দরওয়াজা কাঁদিতে থাকে যেখান দিয়া তার আমলগুলো নূর হয়ে উপরে উঠিত। তারপর সেই 'পাঁচশত ফেরেশতা মুর্দারের গোছলের মধ্যে শরীক হয়। মুর্দারকে কাৎ করাইলে ফেরেশতাগণ তাকে কাৎ করাইয়া দেয় ও কাফন পরাইবার আগে আগেই ফেরেশতাগণ তাকে জান্নাতের খুশবু লাগাইয়া দেয় এবং তার দরওয়াজা হইতে কবর পর্যন্ত ফেরেশতারা কাতার বান্ধিয়া দাঁড়াইয়া যায় ও দোয়া এবং এস্তেগফার দ্বারা তার জানাযায় শরীক হয়ে যায়।

এই সব দৃশ্য দেখে শয়তান জোরে জোরে কেঁদে কেঁদে নিজের দলকে ধিক্কার দিয়ে বলে, তোমরা কৈ ছিলে? এই লোকটা কি করে বাঁচিয়া গেল? আজরাঈল (আঃ) সেই রূহ নিয়া যখন উপরে উঠেন, জিবরাঈল (আঃ) তখন ৭০ হাজার ফেরেশতাসহ তাকে সম্মান করে আগাইয়া নেন। যখন রূহকে আরশ পর্যন্ত পৌঁছান হয়, তখন রূহ সেজদায় পড়ে যায়। আল্লাহ পাক বলেন, আমার বান্দার রূহকে ইল্লিয়িনে পৌঁছায়ে দাও

• স্বপ্নের রূহ তার লাশের মধ্যে থাকিয়া যায় 'যখন কবরে রাখা হয়, নামাজ তার ডান পাশে আসিয়া দাঁড়াইয়া যায়। রোজা তার বাম পাশে এসে দাঁড়ায়ে যায়। কুরআন শরীফ ও জিকির মাথার দিকে দাঁড়ায়ে যায়। ইসলাম প্রচার করার জন্য বা ওয়াজ তালিম শুনার জন্য যে কদম হেঁটে ছিল, উহা পায়ের দিকে দাঁড়ায়ে যায়। আর বিপদাপদে সবর ও পাপ কাজ হতে ধৈর্য কবরের এক দিকে দাঁড়ায়ে যায়। তখন কবরের মাটি ও নানান রকম আজাব মুর্দারের নিকট পৌঁছিতে চায়। যখন ডান দিকে আসতে চায় নামাজ তাহা সরায়ে দেয়, বাম দিকে আসিলে রোজা উহাকে সরায়ে দেয়, মাথার দিকে আসলে কুরআন শরীফের তেলাওয়াত ও জিকির তাহা বাধা দেয়।

• এইভাবে আল্লাহ পাকের ওলীকে চারি দিক হইতে এবাদতে ঘিরিয়া রাখে। কবর আজাবে কোন পথ খুঁজে না পেয়ে যখন ব্যর্থ হয়ে ফিরে যায়, তখন ছবর ও ধৈর্য বলে উঠে আমি এই প্রতিক্ষায় ছিলাম, যদি কোন এবাদতে দুর্বলতা দেখা যায় আমি সেই দিক হতে বাধা দিব, তবে তোমরা আজাবকে রোধ করতে পেরেছ। এখন আমি আমল নামা ওজন দিবার সময় ডান পাল্লায় উঠে তার কাজে আসব। এরপর মুনকার নাকীর দুই ফেরেশতা আসে, তাদের চক্ষু বিজলীর মত চমকিতে থাকে। আওয়াজ মেঘের গর্জনের মত, দাঁতগুলো গরুর শিং এর মত, নাক মুখ হইতে নিঃশ্বাসের সহিত আগুনের ফুলকী বের হতে থাকে। মাথার চুল পা পর্যন্ত লটকানো। উভয়ের কাঁধের দূরত্ব কয়েক দিনের পথ। দয়া মায়া কি তাহা তাহারা জানে না। তবে মু'মিনদের সহিত তারা কড়া ব্যবহার করে না। কিন্তু তাদের ছুরতই কি কম ভয়ের কথা? তাদের হাতে এত বড় হাতুর যে, সারা জাহানের মানুষ একত্র হয়েও উহা উঠাইতে পারিবে না।

• তারা এসে বলে, বসিয়া পড়। মুর্দার কাঁপতে কাঁপতে বসিয়া পড়ে তখন কাফনের কাপড় মাথা হইতে কোমর পর্যন্ত খুলে যায়। মুনকার নাকীর বলে তোমার রব কে? তোমার দ্বীন কি? তোমার নবীর নাম কি? সে বলে আমার রব আল্লাহ্, আমার দ্বীন ইসলাম, আমার নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আখেরী নবী। ফেরেশতারা বলে, তুমি ঠিক বলেছ। এরপর তারা কবরের চারিদিক খুলে দেয়, কবর প্রশস্ত হয়ে যায়। তারা মুর্দারকে বলে উপরের দিকে নজর কর। সে উপরের দিকে নজর করে একটা দরজা দিয়া বেহেশতের বাগান দেখতে পায়, তখন ফেরেশতারা বলে, হে আল্লাহর ওলী ঐ তোমার ঠিকানা। এখন আবার তোমার পায়ের দিকে তাকাও। পায়ের দিকে নজর করে একটি দরজা দিয়া জাহান্নামের হালাত দেখতে পায়। ফেরেশতারা বলে, হে আল্লাহর ওলী তুমি উহা হইতে নাজাত পেয়েছ, ইহা শুনিয়া খুশিতে তার মন ভরে উঠে। তারপর বেহেশতের দিক হতে কবরের মধ্যে ৭৭টি দরওয়াজা খুলে দেয়। উহা দিয়া বেহেশতের সুশীতল হাওয়া ও খুশবু আসতে থাকে, কিয়ামত পর্যন্ত সে এভাবে শান্তিতে থাকে। সুবহানাল্লাহ।

ডাকরে বান্দা ডাক, মনের মত ডাক।
মনের মত ডাকলে বান্দা, গুনাহ পাবি মাফ।
ডাক তারে অন্তর দিয়া, দিল হবে তোর পরিষ্কার,
ডাকার মত ডাকলে আল্লাহ কেন শুনবে না?
তোমরা কি ডাকতে জানো না?

আল্লাহ আল্লাহ আল্লাহু, লা ইলাহা ইল্লাহু।
আল্লাহ আল্লাহ আল্লাহু, লা ইলাহা ইল্লাহু।
আল্লাহ আল্লাহ আল্লাহু, লা ইলাহা ইল্লাহু।

No comments

Powered by Blogger.