মুমূর্ষু অবস্থায় মু'মিন ব্যক্তির অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের জান কবজে বাধা প্রদান



★★ মুমূর্ষু অবস্থায় মু'মিন ব্যক্তির অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের জান কবজে বাধা প্রদান: 


হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে, কোন মু'মিন বান্দার মৃত্যুর সময় উপস্থিত হলে হযরত আযরাঈল (আঃ) জান কবয করার জন্য তার মুখের দিকে এগিয়ে আসলে মুখ বলে, হে মৃত্যুদূত! আর এগিও না। কেননা, আমার দ্বারা আল্লাহর এ বান্দা সর্বদা আল্লাহর যিকির করেছে। সুতরাং তোমার মনোবাসনা পূর্ণ হবে না।

আযরাঈল (আঃ) তখন আল্লাহর নিকট আরজ করবেন, হে আল্লাহ্! আপনার বান্দা তো এরূপ কথা বলছে, এখন আমার করণীয় কি? আল্লাহ্ তা'আলা বললেন, অন্য পথে অগ্রসর হও! তখন আযরাঈল (আঃ) হাতের দিকে অগ্রসর হবেন। হাত বাধা দিয়ে বলবে, হে আযরাঈল! অন্য দিকে যাও! কেননা, আমি আল্লাহ্ পথে দান করেছি, আল্লাহর দ্বীন প্রচারে তরবারি চালিয়েছি এবং লিখনীর মাধ্যমে দ্বীনের বর্ণনা করেছি। অতঃপর আযরাঈল (আঃ) পদযুগলের দিকে অগ্রসর হলে পদদ্বয় বাধা দিয়ে বলবে, হে আযরাঈল! এ পথে নয়, আমি হেঁটে হেঁটে জুমআ এবং পাঞ্জেগানার জামায়াতে অংশ গ্রহণ করেছি, রোগীর সেবা-শুশ্রূষার জন্য গিয়েছি, দ্বীন শিক্ষা ও উপদেশ গ্রহণের জন্য আল্লাহর বান্দাদের দরবারে গিয়েছি। এখানে বাধা পেয়ে তিনি কর্ণদ্বয়ের দিকে এগিয়ে গেলে। কর্ণদ্বয় বাধা দিয়ে বলবে, হে আযরাঈল! আর নয়, ক্ষান্ত হও। আমার দ্বারা আল্লাহর এ বান্দা পবিত্র কালাম ও আল্লাহর যিকির শ্রবণ করেছে। তারপর তিনি চক্ষুদ্বয়ের দিকে অগ্রসর হলে তারা বলবে, আল্লাহর এ বান্দা আমার দ্বারা পবিত্র কালাম এবং আলেম ও অলীদের মুখমণ্ডল দর্শন করেছে। সুতরাং আমার দিক হতে তুমি ফিরে যাও।

এভাবে সর্বদিক থেকে যখন হযরত আযরাঈল (আঃ) জান কবজে বাধাপ্রাপ্ত হবেন, তখন তিনি মহান আল্লাহর নিকট নিবেদন করবেন, হে আল্লাহ্! তোমার বান্দা আমাকে কোন দিক থেকেই সফল হতে দিচ্ছে না, এখন আমার করণীয় কি? আল্লাহ্ তা'আলা বলবেন-না, এভাবে তুমি কোন ভাবেই তোমার কর্মে সফল হতে পারবে না; বরং তুমি তোমার হাতের তালুতে আমার নাম লিখে তা আমার বান্দার চোখের সামনে তুলে ধরে দেখ কি ফলাফল দাঁড়ায়।

হযরত আযরাঈল (আঃ) স্বীয় হাতের তালুতে আল্লাহর পবিত্র নাম লিখে বান্দার চোখের সামনে ধরতেই তার রূহ আল্লাহর নামে পাগল হয়ে সমস্ত জ্বালা-যন্ত্রণা ভুলে গিয়ে অনন্তে বিলীন হয়ে যাবে। যাদের অন্তরে আল্লাহর প্রেমের মোহর অঙ্কিত হয়েছে, একমাত্র তারাই আল্লাহর দেয়া শাস্তি, যাতনা ও দুঃখ-কষ্ট হতে পরিত্রাণ পেয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ তা'আলা ইরশাদ করেন-

أولَئِكَ كَتَبَ فِي قُلُوبِهِمُ الْإِيمَانِ .

উচ্চারণ: "উলা-ইকা কাতাবা ফী কুলুবিহিমুল ঈমা-ন।"

অর্থাৎ- এরাই হলো তারা, যাদের অন্তরে আল্লাহ্ তা'আলা ঈমানের মোহর অঙ্কিত করে দিয়েছেন।

আল্লাহ্ তা'আলা আরও ইরশাদ করেন-

উচ্চারণ : আফামান শারাহাল্লা-হু ছদরাহু লিল ইসলা-মি ফাহুয়া 'আলা- নূরিম মির রব্বিহী।

অর্থ: আল্লাহ্ তা'আলা যাদের অন্তর ইসলামের জন্য প্রসারিত করে দিয়েছেন অবশ্যই তারা আল্লাহর দত্ত জ্যোতিতে বিরাজমান। -সূরা যুমার: ২২

হাদীস শরীফে বর্ণিত রয়েছে- যখন কোন বান্দার প্রাণবায়ু বের হতে শুরু হয় তখন আল্লাহর নির্দেশ মত কেউ উচ্চৈঃস্বরে বলতে থাকে, হে আযরাঈল! ক্ষান্ত হও, তাকে একটু বিশ্রাম নিতে দাও। রূহ যখন বক্ষদেশে আসে তখন আবার ডেকে বলে ক্ষান্ত হও, তাকে আরও একটু সময় বিশ্রাম করতে দাও। তারপর রূহ যখন কণ্ঠদেশে এসে পৌঁছে তখন বলা হয়-হে আযরাঈল। তাকে জীবনের সাথী অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ হতে বিদায় নিতে আরেকটু অবকাশ দাও। এমতাবস্থায় তার হাত, পা, চক্ষু, কর্ণ, নাসিকা, ইত্যাদি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তাকে চির বিদায় দিয়ে বলে- "কেয়ামত পর্যন্ত তোমার উপর আল্লাহর অসীম কৃপা বর্ষিত হোক। এর পরই আসে চরম পরিণতি। হাত, পা নিস্তেজ হয়ে যায়, চক্ষু হয়ে পড়ে জ্যোতিহীন, কর্ণদ্বয় হারায় তার শ্রবণ শক্তি এবং দেহরাজ্য রূহহীন অবস্থায় নিস্তেজ হয়ে পড়ে থাকে।

✪ মিছা মিছি কাটাইলাম জিন্দীগী 
চোখে দেইখ্যা হারাইলাম বন্দেগী 
অন্ধকার কবরে হবে বসতী 
কারবা বাড়ী, কারবা ঘর, কারবা কী? 
কখন চলিয়া যাবেরে প্রান পাখী 
অন্ধকার কবরে হবে বসতী। 
বড় বাড়ী, বড় ঘড় রাখিয়া 
সাড়ে তিন হাত জায়গায় রবে পড়িয়া 
ডানে মাটি, বামে মাটি, নিচে মাটি 
উপরে বাশের কাঠি 
অন্ধকার কবরে হবে বসতী।
মিছামিছি কাটাইলাম জিন্দীগী 
চোখে দেইখ্যা হারাইলাম বন্দেগী 
অন্ধকার কবরে হবে বসতী।

☞কিতাবের নাম: মরণের আগে ও পরে।
☞লেখক: হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম গাযালী (র.)

No comments

Powered by Blogger.