দানের ফল শেষ পর্ব


∞........................দানের ফল............................∞


শেষ পর্ব: হযরত ঈসা (আঃ)-এর জামানায় এক ধোপা ছিল। তার কার্যকলাপে অতিষ্ট হইয়া স্থানীয় লোকজন সবাই ঈসা (আঃ)-এর নিকট গিয়া নালিশ করিল, হুজুর অমুক ধোপার জ্বালাতন আর সহ্য হয় না। সে সব সময় কাপড় ধুইতে নিয়া বদলাইয়া দেয়। আপনি বদ দোয়া করুন, যাহাতে সে মারা যায়। সকলের অনুরোধে ঈসা (আঃ) ধোপার মৃত্যু কামনা করে আল্লাহর নিকট বদ দোয়া করিলেন, আর সবাইকে খবর দিলেন আজকের এই দিনটাই শুধু ধোপার আয়ু আছে। আজ কাপড় ধোয়ার জন্য ঘাটে গেলে সে কিছুতেই জিন্দা অবস্থায় বাড়ি ফিরিবে না। হযরত ঈসা (আঃ)-এর পাক জবানে ইহা শুনিয়া সবাই বিশ্বাস করিল। ধোপা তার অভ্যাস অনুযায়ী নিজের খাওয়ার তিনটি রুটি লইয়া কাপড় ধোয়ার জন্য ঘাটের দিকে রওয়ানা হইল। পথের মধ্যে এক ভিক্ষুক বলিল, অনাহারে আছি দয়া করে আল্লাহর ওয়াস্তে একটা রুটি খাইতে দাও। ইহা শুনিয়া ধোপা একটা রুটি তাকে দান করিল। রুটি পাইয়া ভিক্ষুক দোয়া করিল আল্লাহ যেন তোমার জীবনের সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেয় আর তোমার অন্তরকে পাক করে দেয়। ইহা শুনিয়া ধোপা আরো একটা রুটি তাকে দান করে দিল। এবার ভিক্ষুক দোয়া করিল, আল্লায় যেন তোমার অতীতের এবং ভবিষ্যতের যাবতীয় পাপ ক্ষমা করে দেয়। ইহা শুনিয়া সে আর একটি রুটিও তাহাকে দিয়া দিল। এইবার ভিক্ষুক দোয়া করিল, আল্লাহ তোমাকে যাবতীয় আসমানী জমিনী বালা মছিবত হইতে নিরাপদে রাখুক। তোমার হায়াত বাড়াইয়া দেউক। তোমার জন্য বেহেশতে একটা বালাখানা তৈরী করুক। ইহার পর ভিক্ষুক চলে গেল আর ধোপা ঘাটে গিয়া আপন কাজে লাগিয়া গেল। অপর দিকে ধোপার কি হয়, তাহা দেখার। জন্য লোকেরা অপেক্ষা করিতে লাগিল। সকলেরই বিশ্বাস তার আর বাঁচিবার উপায় নাই, কিন্তু শেষ পর্যন্ত দেখা গেল সে নিরাপদে কাপড়ের বোঝা লইয়া বাড়ি ফিরিয়া আসিতেছে। সকলেই আশ্চর্য্য হইয়া ঈসা (আঃ)-এর নিকট গিয়া বলিলেন হুজুর, আপনি যা বলেছেন, তাহাতো সত্য হইলো না। ঈসা (আঃ) বলিলেন, ধোপাকে আমার নিকট নিয়া আস। তাহাকে আনা হইলে তিনি জিজ্ঞাসা করিলেন, আজ তুমি কি কি কাজ করেছ, ধোপা বলিলো, যাওয়ার সময় এক ভিক্ষুকের সহিত আমার দেখা হয়, তিনটা রুটি সবই তাহাকে দান করে ফেলি, সে প্রত্যেক রুটির বদলে আমার জন্য এক একটি দোয়া করে। ঈসা (আঃ) বলিলেন, তোমার কাপড়ের গাট্টি খোল, গাট্টি খোলার সাথে সাথে উহার ভিতর হইতে মুখে লাগাম লাগানো একটি কাল সাপ বাহির হইয়া আসিল। ঈসা (আঃ) বলিলেন, হে কাল সাপ তুমি কেন এখানে এসেছ? সাপ জওয়াব দিল আমার প্রতি আল্লাহর তরফ হইতে হুকুম হইল, অমুক কুয়ার পাড়ে অমুক ধোপাকে তুমি এমনভাবে দংশন কর যেন তখনই তাহার প্রাণ বাহির হয়ে যায়।

এইজন্য আমি তার গাট্টির ভিতর ঢুকে সুযোগের অপেক্ষায় থাকি, কিন্তু সে আজ আল্লাহর রাস্তায় রুটি দান করেছে। ভিক্ষুক তার জন্য দোয়া করেছে, আল্লাহ পাক সেই দোয়া কবুল করে একজন ফেরেশতা আমার নিকট পাঠাইয়া দেন। সেই ফেরেশতা আমার মুখের মধ্যে এমনভাবে লাগাম লাগাইয়া দিলেন যে, আমি ধোপাকে দংশন করিতে অক্ষম হইয়া পড়ি।

ইহা শুনিয়া ঈসা (আঃ) ধোপাকে বলিলেন,

"হে ধোপা তুমি নতুন করে আমল আরম্ভ কর। ছদকার বরকতে আল্লাহ পাক তোমার অতীতের সমস্ত গুণাহ মাফ করে দিয়াছেন"।

তবে যার যেমন নিয়ত সে তেমনই বদলা পাইবে। লোক দেখানোর নিয়তে দান করে কেহ কি ঐ ব্যক্তির সমান নেকী পাইতে পারে? যে শুধু মাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় দান করিয়া থাকে। তাহা কখনও নয়, মানুষকে দেখাইবার নিয়তে কোন নেক আমল করিলে উহা আল্লাহর দরবারে কবুল হওয়ার উপযুক্ত হয় না। যে কোন নেক আমলই হউক না কেন, রিয়া হইতে পাক না হইলে উহা অর্থহীন। ঐ রূপ আমলের কোনই প্রতিদান আল্লাহর দরবারে পাওয়া যাইবে না। কাহারও কোন উপকার করে পরে সুযোগ পাইলে তাকে উহার খোটা দিলে উপকারের বদলা হইয়া যায়, তখন আল্লাহর দরবারে আর কোন প্রতিদান পাওনা থাকিবে না।
আল্লাহ পাক কুরআনে মজিদে বলেন-

نَايُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تُبْطِلُوا صَدَقَاتِكُمْ بِالْمَنِّ وَالأذى .

(ইয়া আইউহাল্লাযীনা আমানু লা-তুবতিলু ছদাক্বাতিকুম বিল মান্নি ওয়াল আযা)

• “হে ঈমানদানগণ! তোমরা কাহারও কোন উপকার করিলে তাহাকে খোটা দিয়া অথবা কোন রকম কষ্ট দিয়া নিজেদের দান খয়রাত বা উপকারের নেকী নষ্ট করিওনা।"

(সূরা বাকারা, আয়াত: ২৬৪)

পোকা মাকড় যেমন ক্ষেতের ফসল ধ্বংস করিয়া দেয়, তেমনি আন্তরিকতার অভাব দান খয়রাতের ছওয়াব নষ্ট করে দেয়। সুতরাং যাহা কিছু দান করিবে আল্লাহর সন্তুষ্টির নিয়তেই করিবে। বদ নিয়তে অর্থ ব্যয় করিলে পাপী হইবে আমরা রাত দিন নামায পড়ি, রোজাও রাখি, অন্যান্য নেক আমল করি, কিন্তু বাস্তব জীবনে এর প্রভাব প্রতিফলিত হয় না। ইহার কারণ হইল আন্তরিকতা নাই। হুজুরী কলব ব্যতীত নামায পরিপূর্ণ হয় না।

No comments

Powered by Blogger.