বিবি মরিয়ম (আঃ) জীবনী



✅ বিবি মরিয়ম (আঃ) জীবনী :


বিবি মরিয়মের পিতার নাম ছিল ইমরান (আঃ)। মাতার নাম ছিল বিবি হান্না। তিনি মান্নত করলেন, হে আল্লাহ্ আমার গর্ভে যেই ছেলে হবে, তাকে বায়তুল মোকাদ্দাস মসজিদের খেদমতের জন্য তোমার জন্যেই আজাদ করে দিব'। এর পর বিবি মরিয়ম জন্মগ্রহণ করলেন, তখন বিবি হান্না চিন্তিত হয়ে পড়লেন, কেননা, তিনি আশা করছিলেন ছেলে হবে, এখন মেয়েকে কিভাবে মসজিদে দিবেন, তিনি আকাশের দিকে তাকায়ে বললেন, হে প্রভু! আমি একটি মেয়ে সন্তান প্রসব করেছি, আর তার নাম রাখলাম মরিয়ম, তাকে তোমার আশ্রয়ে সোপর্দ করতেছি, এমন সময় এলহাম হলো হে হান্না! আমি তাকে কবুল করেছি বিবি হান্না মান্নত পুরা করার জন্য বায়তুল মোকাদ্দাসে উপস্থিত হলেন, সমবেত বুযুর্গগণের নিকট আরয করলেন, এই মেয়েটি মান্নতের, ইহাকে রাখুন। সকলেই মেয়েটির রূপে মুগ্ধ হয়ে তাকে লালন-পালন করার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করলেন, কেননা, সে তাহাদের ইমাম ইমরানের কন্যা। তখন সাব্যস্ত হল লটারী দেওয়া হউক। প্রত্যেকে নিজ নিজ কলম জর্দান নদীতে ফেলে দিবে। যার কলম ডুবে যাবে না, পানির উপর ভেসে থাকবে আর স্রোতের বিপরীত দিকে যাবে, সে মরিয়মের দায়িত্ব ভার গ্রহণ করবে। এরপর সকলে কলম ফেলে দিল। সকলের কলম ডুবে গেল। শুধু জাকারিয়া (আঃ)-এর কলম পানির উপর ভেসে রইল এবং স্রোতের বিপরীত দিকে অগ্রসর হলো, তখন জাকারিয়া (আঃ) তার দায়িত্ব ভার গ্রহণ করলেন।

তার স্ত্রী মরিয়মের খালা ছিলেন। তিনি তার লালন-পালন করতে লাগলেন এবং তার জন্য মসজিদে একটি হুজরা নির্মাণ করলেন। মরিয়ম দিনের বেলায় সেই হুজরায় ইবাদত করতেন, রাত্রে জাকারিয়া (আঃ) তাহাকে নিজের সঙ্গে বাড়ীতে নিয়া যাইতেন। একদিন মরিয়মকে হুজরার ভিতরে রেখে তালা লাগায়ে তিনি কোথায় যেন চলে যান। মরিয়ম তিন দিন পর্যন্ত সেখানে আবদ্ধ ছিলেন। জাকারিয়া (আঃ) তার কথা ভুলে গিয়েছিলেন। চতুর্থ দিন তার কথা স্মরণ হওয়া মাত্র তিনি চিৎকার দিয়ে দৌড়ায়ে গেলেন, আর আফসোস করে বলতে লাগলেন(আহা আমি কি করলাম, নিরাপরাধ মেয়ে হয়তো ক্ষুধা তৃষ্ণায় মারা গিয়াছে। মসজিদে গিয়ে মরিয়মের হুজরার দরজা খুলে দেখেন তার সামনে নানা প্রকার ফল। তিনি মরিয়মকে জিজ্ঞেস করেন তুমি এই খাবার কোথায় পেয়েছ? মরিয়ম বলেন, ইহা আল্লাহর পক্ষ হইতে আসিয়াছে। ফেরেশতাগণ মরিয়মকে বলিলেন, হে মরিয়ম। আল্লাহ পাক তোমাকে সমগ্র জগতের মহিলাদের উপর মর্যাদা ও সম্মান দান করেছেন, পবিত্র করেছেন, তুমি তোমার প্রভুর বন্দেগী কর, তাকে সিজদা কর। রুকু কর।মরিয়মের বয়স যখন চৌদ্দ বৎসর, তখন তিনি হায়েজের গোসল করার জন্য গোসলখানায় ঢোকেন, ইহাই তার প্রথম হায়েজ ছিল, যখন গোসল করে অবসর হলেন, তখন দেখলেন অতি সুন্দর চেহারার এক যুবক তার পিছনে দাঁড়ায়ে আছে, সেই যুবকটা ছিল জিব্রাঈল (আঃ)। তিনি যুবককে দেখে ভয় পাইলেন, আর বললেন আমি সতী নারী, আমি আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করি, যুবকটি বললো আমি জিব্রাইল (আঃ) তোমাকে একটি পবিত্র ছেলে দান করার জন্য এসেছি। মরিয়ম বললো আমার ছেলে হবে কি করে, অথচ কোন পুরুষ আমাকে স্পর্শ করে নাই, তাছাড়া আমি যিনাকারিণী নই। জিব্রাইল (আঃ) বললেন, তোমার প্রভু বাপ ছাড়া ছেলে দান করে মানুষের জন্য একটি নিদর্শন রাখতে চান, এই বলে তার মুখের উপরে একটি ফুঁক দিয়ে চলে যান, সেই ফুঁকটি যাইয়া মরিয়মের পেটের মধ্যে ঢুকিয়া হাওয়া হইতে আওয়াজ আসল, আমি আল্লাহ্র বান্দা। আল্লাহ্ একা তারপর মরিয়ম মসজিদে গিয়া আল্লাহর ইবাদতে মশগুল হয়ে গেলেন। কয়েক মাসের মধ্যে এই কথা প্রচার হয়ে গেল। ইহুদীগণ বলিল, হে মরিয়ম! তুমি অবিবাহিত মেয়ে হয়ে এই গর্ভ কোথায় পাইলে, তুমি বদকার নারী। মরিয়মের যখন প্রসব বেদনা শুরু হলো তিনি কাঁদতে লাগলেন, আর বলতে লাগলেন, হে আল্লাহ্ গো, সন্তান প্রসব হওয়ার পূর্বে আমি যদি মারা যেতাম কতই না ভাল হইত। এই বলে বায়তুল মোকাদ্দাস মসজিদ হইতে বের হয়ে গোপন এক ময়দানে চলে গেলেন, সেখানে গিয়ে তিনি একটি মরা খেজুর গাছের গোড়ায় বসিলেন, আর খেজুর গাছের সাথে ঠেস দিয়া নির্জনে বসিয়া কাঁদিয়া কাঁদিয়া বলতে লাগলেন, হে আল্লাহ গো! মেয়েদের প্রসব বেদনা আরম্ভ হলে, মা, চাচী কাছে থাকে, নানি, দাদী কাছে থাকে, আমার তো কেহ নেই, আমি কোথায় যাইবো, কি করিব এই বলে রোদন করতেছেন। এই সময় আমার আল্লাহ্ পাক ডাক দিয়ে বলেন, মরিয়মরে! তোর পাশে আমি আছি, তখন সেখানে ঈসা (আঃ)-এর জন্ম হলো। ফেরেশতারা আর বেহেশতের হুরগণ এসে তার সেবা যত্ন করতে লাগলেন, আল্লাহ পাকের হুকুমে মরা খেজুর গাছ তাজা হয়ে উহার মধ্যে খেজুর ধরল এবং উহার নীচে একটি ঝরনা হল, হাউজে কাউসারের পানি এনে হুরগণ ঈসা (আঃ) কে গোসল করায়ে বেহেশতের পোশাক পরায়ে দিলেন। তারপর মরিয়মের কোলে তুলে দিলেন। এমন সময় তার পুত্র ঈসা (আঃ) একটি চিৎকার দিয়ে বললেন, হে আমার আম্মাজান! আমাকে দেখে আপনার চক্ষু শীতল করুন। মরিয়মের পায়ের নীচ হইতে একটি আওয়াজ এলো, হে মরিয়ম, তুমি দুঃখিত হইওনা! তোমার প্রভু তোমার জন্য একটি ঝরণা সৃষ্টি করে দিয়েছেন মরিয়ম তাকায়ে দেখেন, একটি ঝরণা, প্রাণ ভরে পানি পান করলেন, খেজুর গাছের দিকে তাকায়ে দেখেন কাঁচা ও পাকা খেজুর ঝুলতেছে, তিনি আওয়াজ শোনতে পেলেন, কে যেন বলতেছে, তোমার দিকে খেজুরের ডাল নাড়া দাও। ইহাতে তোমার উপর তাজা ও পাকা খেজুর পড়বে। তুমি তাহা খাও। তিনি আরজ করলেন, হে এলাহী যখন জাকারিয়া (আঃ) আমাকে তিন দিন পর্যন্ত ভুলে হুজরার মধ্যে তালা বন্ধ করে গিয়েছিল, তখন তুমি আমাকে বিনা কষ্টে রিজিক দিয়েছ। আর এখন হুকুম দিলা গাছ হইতে খেজুর পাড়িয়া খাইতে। তখন আল্লাহর পক্ষ হতে আওয়াজ আসল- হে মরিয়ম, তখন তুমি আমাকে ছাড়া আর কাহাকেও মহব্বত কর নাই। এখন তুমি ছেলেকে মহব্বত করতেছ। তাই এখন তোমার মেহনত করে খাইতে হবে কয়েক দিন পর তুমি বায়তুল মোকাদ্দাস মসজিদে চলে যেও, কেহ কোন কথা জিজ্ঞেস করলে তুমি ঈসা (আঃ)-এর দিকে ইশারা করিও।

No comments

Powered by Blogger.