মেরাজের বয়ান ১ম পর্ব:

 


🌙🌙🌙 মেরাজের বয়ান
🌙🌙🌙 ১ম পর্ব:

২৭ তারিখে ভোরে বায়তুল্লাহর সামনে সাহাবীদের আমার নবী ডেকে বলেন, হে আবু বকর আজ রাতে আমার মেরাজ হয়ে গেল। আমি আল্লাহকে দেখে আসলাম। আকাশ ভ্রমণ করে আসলাম। আবু বকর (রাঃ) বলেন
صَدَقْتَ يَا حَبِيْبُ اللَّهِ )সাদাকতা ইয়া হাবীবাল্লাহ)
'আপনি যা বলেছেন, সব সত্য। হুযুর ডেকে বলেন, আবু বকর কোন প্রশ্ন নাই, জিজ্ঞাসা নাই এত তাড়াতাড়ি আমার মেরাজের ঘটনা কেমনে বিশ্বাস করে নিলে? আবু বকর বলেন, কি প্রশ্ন করব ছোটকাল হতে মক্কা নগরে আপনাকে চিনি। জিন্দিগিতে একটা মিথ্যা কথা বলতে শুনি নাই। হুযুর মক্কার কাফের বেঈমানেরা যদি আপনাকে আল আমিন বলতে পারে আমি আপনার প্রিয় সাহাবী হয়ে কি প্রশ্ন করব? যা বলেছেন সবই সত্য।
নবী আমার ডেকে বলেন, আবু বকর কোন প্রশ্ন ছাড়া আপনি যখন পারলেন আমার মেরাজের ঘটনা বিশ্বাস করে নিতে তাহলে আমি কিভাবে পারি আপনাকে খালি হাতে ফিরিয়ে দিতে, আবু বকর বললেন হুযুর কি দিবেন? নবী আমার ডেকে বলেন, এতদিন ছিলেন আপনি শুধু আবু বকর আজ হতে আপনার নামের সাথে সিদ্দীক উপাধী দিলাম। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তামাম পৃথিবীর মানুষের নেকী যদি এক পাল্লায় দেয়া হয়, আর আমার আবু বকরের নেকী যদি অপর পাল্লায় দেয়া হয়, ওজন দিলে দেখা যাবে আমার আবু বকরের নেকী অনেক বেশি হয়ে যাবে। ও সাহাবীরা! শুন, আমার কবরের ডান পার্শ্বে আমার আবু বকরকে কবর দিও। হাশরের ময়দানে আমি যখন উঠব, আমার আবু বকর আমার ডান দিক দিয়ে উঠবে। আমার হাজার হাজার গুনাহগার উম্মতকে আমার আবু বকর বিনা হিসেবে জান্নাতে নিয়ে যাবে। সাহাবীরা মেরাজের ঘটনা শুনতেছে আর বিশ্বাস করতেছে, ঐদিকে আবু জাহেল মক্কার দ্বারে দ্বারে ঘুরে চিৎকার করে বলে, ও মক্কার লোকেরা শুনছ? মুহাম্মদ পাগল হয়ে গেছে।
আকাশ থেকে তার জবাব নাযিল হচ্ছে, আমার আল্লাহ পাক ডেকে বলেন: وَمَا صَاحِبُكُمْ بِمَجْنُونٍ )ওয়ামা সাহিবুকুম বিমাজনুন) 'না না তোমাদের সাথী আমার বন্ধু পাগল হন নাই।' (সূরা তাকবীর, আয়াত, ২২)
আবু জাহেল আমার হুযুরের দরবারে এসে বলে, ওহে আব্দুল্লাহর ছেলে তুমি এভাবে পাগল হয়ে যাবা, তাহা আমি আগেও জানতাম। আমার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, কেমনে পাগল হইলাম? আবু জাহেল বলে সাত আসমান ভেদ করে, আল্লাহর সাথে দেখা করে আসছ! এই যে বলতেছ। নবী আমার ডেকে বলেন, তোমরা না আমাকে বলতেছ আল আমিন? জিন্দিগিতে একটা মিথ্যা কথা বলি নি। আজ মিথ্যা কথা বললাম! আবু জাহেল বলে, তুমি তো এমনিতে মিথ্যা বল না, তবে পাগল হলে তো মিথ্যা বল ভাই। আমার নবী বলেন, ওহে আবু জাহেল উপযুক্ত প্রমাণ পেশ করতে পারলে মেরাজের কথা বিশ্বাস করবে কিনা? আবু জাহেল প্রশ্ন করল আচ্ছা বলত বাইতুল মোকাদ্দাসের কয়টা দরজা? কয়টা জানালা? কয়টা সিড়ি? আমার নবী তো আল্লাহর সাথে দেখা করতে গিয়েছেন, তিনি তো বাইতুল মোকাদ্দাসের জানালা দরজা গুনতে যান নাই। তিনি জায়নামায বিছিয়ে সেজদায় পড়ে গেলেন, আমার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বেশি বিপদে পড়লে জায়নামায বিছিয়ে সেজদায় পড়ে যেতেন। তাই তিনি ফাতেমা (রাঃ)-কেও বলে ছিলেন কোন বড় বিপদে পড়ে গেলে জায়নামায বিছিয়ে সেজদায় পড়ে যাইও। ঈদের দিন হাসান হোসাইন (রাঃ) ফাতেমা কে বলে, মাগো সব বন্ধু বান্ধবেরা নতুন জামা গায়ে লাগিয়ে মসজিদে নামায পড়তে যায় নানাজীর পেছনে। মাগো আমাদের নতুন জামা কৈ? মাগো নতুন জামা পরে নানার পেছনে নামায পড়তে যাব। ফাতেমা ডেকে বলে, তোমাদের নতুন জামা দর্জির দোকানে আছে, তোমরা গোসল করে আস তারা গোসল করতে গেল, এদিকে ফাতেমা প্রভুর দরবারে জায়নামায বিছিয়ে সেজদায় পড়ে রোদন করে বলতেছেন, মাবুদগো তোমার বন্ধু বলেছেন, বিপদে পরলে সেজদায় পড়ে যেতে। মাবুদগো দর্জির দোকানেতো জামা নেই, ওরাতো গোসল করে আসতেছে। ওরাতো এসেই বলবে, নবীর মেয়ে হয়ে মিথ্যা কথা বল। ও মাবুদ বিপদে পড়েছি ফায়সালা না করে দেয়া পর্যন্ত সেজদা থেকে মাথা উঠাব না।
হাসান হোসাইন এসে মা মা বলে চিৎকার করছে, এসে দেখে মা দুঃখিনী সেজদায় পড়ে কাঁদতেছে। অমনি আকাশ থেকে খবর হয়ে গেল, আমার আল্লাহ পাক ডাক দিয়ে বলেন, জিবরাইলরে জান্নাত থেকে দুটি জামা নিয়ে দর্জির ভেসে ফাতেমার দরজায় হাজির হয়ে যা। দরজার খট খট আওয়াজ শুনে হাসান হোসাইন দৌড়ে গিয়ে বলে কেগো তুমি? জিবরাইল (আঃ) বলে, আমি দর্জি, আপনাদের জামা নিয়ে হাজির হয়েছি। সুবহানাল্লাহ।
আমার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এভাবে সেজদায় পড়ে গেলেন। আর বললেন, ও মাবুদ, মাবুদগো তোমার প্রেমের সমুদ্রের আমি দুঃখ মাগিলাম, মেরাজ করলাম, বাইতুল মোকাদ্দাসের কয়টি দরজা তাতো গুনিয়া দেখিলাম না। ঐখানেতো ইমামতিও করলাম। এখন যদি না বলতে পারি, মক্কার কাফেরেরা বলবে আমি মিথ্যাবাদী। আল্লাহ পাক ডাক দিয়ে বলেন, জিবরাইল আমার বন্ধু সেজদায় পড়ে কান্দেরে, আমার বন্ধুর • চোখের পানি আমার সহ্য হয় না। তুমি বাইতুল মোকাদ্দাসটা নিয়ে আমার বন্ধুর চোখের সামনে তুলে ধর। জিবরাইল ডেকে বলেন, হুযুর এবার মাথা উঠান, সামনের দিকে নজর করেন, গোটা বাইতুল মোকাদ্দাসটা আপনার চোখের সামনে নিয়ে এসেছি, এক একটা সাইড আমি ঘুরাব, আপনি গুণে গুণে বলে দিবেন কয়টা দরজা, কয়টা জানালা। এবার এক একটা সাইড ঘুরান আর নবী গুণে গুণে বলেন, দক্ষিণ দিকে এতটা জানালা, উত্তর দিকে এতটা জানালা, এতটা দরজা, এতটা সিড়ি। আবু জাহেলের মাথা নত হয়ে আসছে। মনে মনে ভাবে, ব্যাপার কি! সবই তো ঠিক বলছে। আবু জাহেল বলে তুমি যা বলেছ তা ঠিকই বলেছ, তবে তুমি যে আল্লাহর নবী তা মানি না। কপালে ইসলাম থাকা লাগবে তো? তার কপালে ইসলাম নাই।
এবার আসুন মেরাজের কথা আলোচনা করি। জিবরাইল (আঃ) উম্মে হানীর ঘর হতে হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে নিয়ে যম যম কুপের পাড়ে গেলেন। যমযম কুয়ার পানি দ্বারা হুযুরকে অযু করিয়ে সেখানেই দুই রাকাত নামায পড়ালেন। অতপর জিবরাইল (আঃ) নবীজীকে কাবা শরীফের হাতিমের উপর শোয়ায়ে অস্ত্রোপাচার করে বক্ষ ফেড়ে পাকস্থলি বের করে যমযম কুয়ার, পানি দ্বারা ধুয়ে ঈমান, নূর, হেকমত, দ্বারা পরিপূর্ণ করে দিলেন। এর পূর্বে আরো তিনবার নবীজীর জীবনে সীনা চাক হয়েছেল। এবার নিয়ে চারবার হলো। অন্য কোন নবীর জীবনে এমন হয় নাই। আলেমগণের মতে এই হতেই দুনিয়াতে মানুষের শরীরে পরীক্ষা নিরীক্ষা কাটা ছিড়ার দ্বারা চিকৎসা আরম্ভ হয়। এর পূর্বে মানুষ অপারেশনের কাজ জানতো না। হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বক্ষে এভাবে অস্ত্রোপাচার হয়েছিল ৫ বছর বয়সে একবার, ১২ বছর বয়সে একবার, ৪০ বছর বয়সে নবুওয়াত পাওয়ার সময় একবার, ৫৩ বছর বয়সে মেরাজে যাওয়ার পূর্বে একবার। জিবরাইল (আঃ) সীনা চাক সমাধা করে কাবা ঘরের পাশে বাঁধা বোরাকের নিকট নবীজীকে নিয়ে বেহেশত হতে আনা চার রং এর পোশাক বের করে বললেন, এর যে কোন একটা রংয়ের পোশাক বাছাই করে পরিধান করুন। হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাদা পোশাক পরিধান করলেন। তা দেখে জিবরাইল (আঃ) বললেন, মারহাবা। মারহাবা! ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনি সাদা পোশাক গ্রহণ করে উত্তম কাজ করেছেন। সাদা পোশাকই আল্লাহ পাকের মনোনিত পছন্দ করা পোশাক। সাদা পোশাকই ইসলামী পোশাক। সবুজ পোশাক জান্নাতীদের পোশাক। কিন্তু তা আখেরাতের জন্য। আপনি উহা না গ্রহণ করে বুদ্ধিমানের পরিচয় দিয়েছেন। আর যদি আপনি কালো রংয়ের পোশাক গ্রহণ করতেন, তাহলে আপনার অধিকাংশ উম্মতই জাহান্নামী হয়ে যেত। আর যদি গোলাপী রংয়ের পোশাক গ্রহণ করতেন, তাহলে আপনার অধিকাংশ উম্মতই ইহুদি ও খ্রিস্টান হয়ে যেত।
(২য় পর্ব আসিতেছে ইনশাআল্লাহ)

No comments

Powered by Blogger.