মেরাজের বয়ান ৩য় পর্ব:
মেরাজের বয়ান ৩য় পর্ব:
আমার নবী আসমানের দরজা খোলার পরে দেখেন এক মহাপুরুষ শাহী সিংহাসন জুড়ে বসে আছেন। তিনি ডানে তাকিয়ে হাসেন আর বামে তাকিয়ে কাঁদেন। তার ডানে বহু সাদা সবজীর গাছ থেকে সুঘ্রাণ বের হচ্ছে, বামে বহু কালো সবজীর গাছ হতে দুর্ঘন্ধ বের হচ্ছে, ইহা দেখে হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ভাই জিবরাইল! এই ব্যক্তি কে? জিবরাইল (আঃ) বললেন, ইনি আদি পিতা হযরত আদম (আঃ), তার ডানে তার পূণ্যবান সন্তান বেহেশতীদের আত্মা। তার বামে গুনাহগার সন্তান, জাহান্নামীদের আত্মা। নবী গিয়ে বললেন,
السَّلَامُ عَلَيْكُمْ يَا أَبِي آدَمُ عَلَيْهِ السَّلَامُ
উচ্চারণ: আসসালামু আলাইকুম ইয়া আবি আদামু আলাইহিস সালাম। অর্থ: ও হে আমার বাবা আদম আমার সালাম গ্রহণ করুন।
আদম (আঃ) বললেন, মারহাবা ধন্যবাদ ওহে পূণ্যবান নবী, আপনার মেরাজ মোবারক হোক। কিছুদূর অগ্রসর হয়ে দেখলেন বিরাট এক মোরগ বসে আছে, জিবরাইল (আঃ) কে বললেন, ভাই জিবরাইল এত বড় মোরগ তো জিন্দেগিতে দেখিনাই। জিবরাইল (আঃ) বললেন, হুযুর এটা মোরগ না, মোরগ বেশে একটা ফেরেশতা আল্লাহ বানিয়ে রেখেছেন। তিনি বললেন, ভাই জিবরাইল এতবড় মোরগ বেশে ফেরেশতা আল্লাহ বানিয়ে রেখেছেন তার কারণ কি? জিবরাইল (আঃ) বললেন, হুযুর! এই মোরগ শেষ রাতে চিৎকার করে ডাকে আকাশে বলে সুব্বুহুন কুদ্দুসুন রাব্বুনা ওয়া রাব্বুল মালাইকাতি ওয়ার রূহ। হুযুর এই মোরগের ডাক শুনে দুনিয়ার সমস্ত মোরগের ঘুম ভেঙ্গে যায়। এই মোরগের কণ্ঠের সাথে কণ্ঠ মিলিয়ে দুনিয়ার মোরগেরা ডাকতে থাকে সুব্বুহুন কুদ্দুসুন রাব্বুনা ওয়া রাব্বুল মালাইকাতি ওয়ার রূহ। আর আমরা শুনি কুক কুরু কুক। দুঃখ রাখার জায়গা নেই, মোরগ হয়ে আমাদের আগে ঘুম থেকে উঠে আল্লাহর যিকির করেরে। আমরা পাগল হইলামরে দুনিয়ায়, ঘুম ভাঙ্গলোনা ঘুম ভাঙ্গলো সাড়ে আটটায়। টেলিভিশনের আসর কমপ্লিট করে ঘুমাইছে। আল্লাহর নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যারা অধিক ঘুমায় সেই ঘুমের কারণে হাশরের মাঠে মিসকিন হয়ে উঠবে। আল্লাহর তরফ হতে শেষ রাতে একটা বাতাস বইতে থাকে। সেই বাতাসে নেককারদের যিকির আযকার, কাকুতি মিনতি, তাহাজ্জুদের নামায, তওবা বহন করে আল্লাহর দরবারে পৌছিয়ে দেয়। রাতের প্রথম প্রহরে আরশের নিচ হতে এক ফেরেশতা ডেকে বলে, হে আল্লাহর বান্দারা সাবধান হও। এ সময় আল্লাহর বান্দারা জাগ্রত হয়ে নামায ও এস্তেগফার পড়তে থাকে। দ্বিতীয় প্রহরে আর এক ফেরেশতা ডেকে বলে, সাবধান হও। এই সময় অনেক নেককার বান্দারা জাগ্রত হয়ে নামায বন্দেগীতে মশগুল হয়ে যায়। শেষ রাতে আর এক ফেরেশতা ডেকে বলে, হে ক্ষমা ভিক্ষাকারীগণ! এই সময় উঠে যাও। ইহা শুনে আল্লাহর বহু বান্দা বান্দীরা জাগ্রত হয়ে নামায, যিকির ও তওবা এবং রোনাজারী করতে থাকে। আর যখন সকাল হয়ে যায়, তখন অন্য আর এক ফেরেশতায় ডেকে বলে, খবরদার এই মুহুর্তে গাফেলদেরও জেগে যাওয়া উচিত। তখন অলস গাফেলেরা এমনভাবে উঠে যেন মৃত ব্যক্তিকে কবর হতে উঠানো হল।
লোকমান (আঃ) তার সন্তানকে বলেছিলেন, প্রিয় সন্তান হুশিয়ার! মোরগ যেন তোমাকে ছাড়িয়ে যেতে না পারে। শেষরাতে তারা যখন আল্লাহকে ডাকতে থাকে, তখন যেন তুমি অলস হয়ে বিছানায় পড়ে না থাক। দুঃখের বিষয় শেষরাতে গাছের ডালে বসে পাখিরা বিলাপ করে মাওলাকে ডাকতে থাকে, আর আমরা তখন সুখের নিদ্রায় অচেতন হয়ে থাকি। আহা আমরা মাওলার প্রেমের মিথ্যা দাবিদার। আমরা যদি সত্যিকার প্রেমিক হতাম, তবে পাখিরা আমাদের উপর প্রাধান্য নিতে পারত না। আমরা তো মনে করি যে, আমরা আল্লাহর মহব্বতে একেবারে বেকারার হয়ে রয়েছি। কিন্তু অবোধ প্রাণীরা যেভাবে মাওলার প্রেমে রোদন করে, আমরা কেন সেভাবে মাওলার জন্য রোদন করি না। অবোধ শিশুর মত কেন কাঁদি না। হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেখান হতে আর একটি অগ্রসর হয়ে দেখলেন, এক ফেরেশতা দাঁড়িয়ে আছে। তার শরীরের অর্ধেক আগুনের, অর্ধেক বরফের। কিন্তু আগুন বরফকে গলাতে পারে না এবং বরফও আগুনকে নিভাতে পারে না। নবীজী তার পরিচয় জানতে চাইলে জিবরাইল (আঃ) বললেন, এর নাম মেহতের রাআদ। ইনিই দুনিয়াতে মেঘ বর্ষণ করে থাকেন। হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও কিছুদূর অগ্রসর হয়ে দেখলেন, একদল লোককে ফেরেশতারা পাথর মেরে মাথা চূর্ণ বিচূর্ণ করে দিতেছে। আবার ভাল হয়ে যাচ্ছে। পুনরায় চূর্ণ বিচূর্ণ করে দিতেছে। জিবরাইল (আঃ) বললেন, এরা অলস বে নামাযী। নামায পড়লেও ঠিকমত পড়ত না। এজন্য তাদের এরূপ শাস্তি হচ্ছে। হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিছুদূর অগ্রসর হয়ে দেখলেন, একদল লোককে উলঙ্গ অবস্থায় পেশাবের রাস্তায় উত্তপ্ত লোহার শলা বিদ্ধ করছে, আর পেশাবের রাস্তায় বিষাক্ত পোকা জোক জড়িয়ে আছে। জিবরাইল (আঃ) বললেন, এরা হলো আপনার উম্মতের মধ্যে ব্যভিচারী দল। এরপর নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একটু অগ্রসর হয়ে দেখলেন, একদল লোক ক্ষুধার যাতনায় দোযখের বিষময় কাঁটা ওয়ালা জাকুম ফল খাচ্ছে। জিবরাইল (আঃ) বললেন, এরা আপনার মালদার উম্মত, তারা যাকাত, ফেতরা, কোরবানী আদায় করত না। হকদারের হক বুঝিয়ে দিত না। নিজেরা পেট পুরে খেত, গরীব দুঃখীর প্রতি দয়া করত না। নবীজী সামনে কিছুদূর অগ্রসর হয়ে দেখলেন, একদল পুরুষ ও মেয়েলোক তাদের সামনে উত্তম খাবার রয়েছে, কিন্তু তারা তা না খেয়ে দুর্গন্ধ পঁচা মাংস খাচ্ছে। জিবরাইল (আঃ) বললেন, এসব লোক যেনাখোর। নিজের স্ত্রী ঘরে রেখে বেগানা নারীদের সাথে অপকর্ম করত এবং এসব স্ত্রীলোক নিজের স্বামীতে তৃপ্ত না হয়ে পর পুরুষের সাথে যেনা করত।
নবীজী আরো কিছুদূর অগ্রসর হয়ে হয়ে দেখলেন, ফেরেশতাগণ একদল লোককে আগুনের শুলে চড়াচ্ছে, তারা ভীষণ চিৎকার করছে। জিবরাইল (আঃ) বললেন, এরা লোকদেরকে ঠাট্টা বিদ্রূপ করত, অন্যকে ছোট নিজেকে বড় মনে করত। লোককে অপমান করার জন্য খারাপ নামে ডাকত এবং নিজেকে অন্যের চেয়ে শ্রেষ্ঠ বলে গর্ব করত। তিনি আর একদল লোককে দেখলেন, তাদের মাথায় এত বড় বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছে
। তারা ঘাড় ফিরাতে না ফেরে চিৎকার দিচ্ছে। জিবরাইল (আঃ) বললেন, এরা আমানতের মাল খিয়ানত করত। পাওনাদারের পাওনা পরিশোধ করত না। তিনি আর একদল লোককে দেখলেন, ফেরেশতাগণ ওদের শরীরের মাংস কেটে ওদেরেই খাওয়াচ্ছে। জিবরাইল (আঃ) বললেন, এরা মুসলমানদের দুর্নাম ও নিন্দা করত। আর একদল লোককে দেখলেন, ফেরেশতাগণ আগুনের কেচি দ্বারা জিহ্বা কেটে দিচ্ছে। জিবরাইল (আঃ) বললেন, এরা স্বার্থ উদ্ধারের জন্য আমীরদের তোষামোদী করত এবং সত্যকে মিথ্যা আর মিথ্যাকে সত্যরূপে বানিয়ে সাজিয়ে বর্ণনা করত এবং অন্য লোককে উপদেশ দিত, কিন্তু নিজেরা তা পালন করত না। তিনি আর একদল লোককে দেখলেন, চেহারা ভীষণ কালো, চক্ষু নীল, ভয়াবহ আকৃতি, তাদের নিচের ঠোট পা পর্যন্ত ঝুলে আছে, উপরের ঠোট ফুলে মাথার উপর পর্যন্ত উঠে গেছে। মুখ হতে রক্ত, পুজ ও পায়খানা পড়ে দুর্গন্ধ বের হচ্ছে। জিবরাইল (আঃ) বললেন, এরা মদখোর ছিল। আরও সামান্য অগ্রসর হয়ে নবীজী দেখলেন, একদল লোকের জিহ্বা টেনে মাথার উপর দিয়ে পিছনের দিকে নিয়ে আগুনের শিকল দ্বারা বেঁধে আগুনের কেচি দ্বারা কেটে দিচ্ছে। তাদের আকৃতি শুকরের মত দেখা যাচ্ছে। তাদের চারদিকে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। জিবরাইল (আঃ) বললেন, এরা দুনিয়াতে মিথ্যা কথা বলত, মিথ্যা সাক্ষী দিত। নবীজী আর একটু সামনে অগ্রসর হয়ে দেখলেন, একদল লোকের পেট ফুলে প্রকাণ্ড হয়ে আছে। 'তাদের হাতে পায়ে আগুনের শিকল বাঁধা। পেটের মধ্যে অসংখ্য সাপ বিচ্ছু কিলবিল করছে, তাদের চারদিকে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। জিবরাইল (আঃ) বললেন, এরা দুনিয়াতে সুদ-ঘুষ খেত। তাই আজ বিষাক্ত সাপ বিচ্ছুর ছোবল খেয়ে আকাশ ফাটা চিৎকর করছে। যন্ত্রণায় এদিকে সেদিকে ছুটাছুটি করতে চেষ্টা করে কিন্তু বিরাট বিরাট ঘোড়া এসে ঐ পেট পাড়িয়ে ধরাশায়ী করে দেয়। ইহা দেখে নবীজীর কোমল হৃদয় কেঁদে উঠল আর বলল হায়রে হতভাগারা।
পরকালে সুদখোরের নমুনা কি হবে দুনিয়ার বুকে তা চাক্ষুষ দেখা গেছে। জৈনপুরের মাওলানা মরহুম মাগফুর কেরামত আলী সাহেব কোন এক মাহফিলে সুদ খাওয়া যে হারাম তা আল্লাহ পাকের কোরআন ও নবীজীর হাদীস উল্লেখ করে শ্রোতাদের মাঝে বয়ান করছিলেন। অমনি এক সুদখোর প্রকাশ্যে মাহফিলে সুদ খাওয়া ছাড়ব না বলে দাঁড়িয়ে গেল। সরাসরি আল্লাহ পাকের বিরুদ্ধাচারণ, কোরআন শরীফ অস্বীকার ও আল্লাহর ওলীর সাথে বেয়াদবী করার কারণে ইসলাম প্রিয় জনতা উত্তেজিত হয়ে ঐ সুদখোরকে মেরে ফেলে এবং তার পাশেই কবর দিয়ে রাখে। মোনাফিকরা মাওলানা কেরামত আলী সাহেবকে আসামী করে থানায় খুনের এজাহার দিল। তাদের পরিকল্পনা ছিল এই সুযোগে আল্লাহর ওলীকে খুনের দায়ে ফাঁসী দিয়ে ইসলামের বাতিকে নিভিয়ে দেয়া। খুনের দায়ে মাওলানা কেরামত আলী সাহেবকে গ্রেফতার করার জন্য দারোগা এসে গ্রেফতারী পরওয়ানা দেখান। তিনি নির্ভিকচিত্তে উত্তর দিলেন, মানুষ খুন হলে আমি খুনী বিচার মেনে নেব, কিন্তু কোন জানোয়ার খুন হলে আমাকে গ্রেফতার করা চলবে না। দারোগা বলল, হুযুর আপনিত মানুষ খুন করেছেন। তিনি বললেন, না না, শুকর খুন হয়েছে। এখনই তার কবর খুদে দেখ। আল্লাহর ওলীর এজাজতে কবর খুদে দেখে লাশের চেহারা শুকরের সূরতে পরিণত হয়ে গেছে। ইহা দেখে দারোগাসহ উপস্থিত জনতা হতভম্ভ হয়ে গেল। সে হতেই তার নাম হলো মাওলানা কেরামত আলী সাহেব। সুদখোরের আযাব সম্পর্কে আল্লাহর বাণী নবীজীর হাদীস দুনিয়ার বুকে চাক্ষুষ প্রমাণিত হল।
হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো একটু অগ্রসর হয়ে দেখলেন, একদল মেয়ে লোককে আগুনের পোশাক পরিয়ে আগুনের মুগর দ্বারা পিটানো হচ্ছে। তারা কুকুরের মত চিৎকার করছে। জিবরাইল (আঃ) বললেন, এরা মানুষের কুৎসা রটাতো। আর তাদের স্বামীর মনে কষ্ট দিত পুনরায় স্বামীর কাছে ক্ষমা চেয়ে নেয় নাই। তাই উত্তপ্ত লোহার শলাকাও তাদের মুখে ঢুকানো হচ্ছে। হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দঃখিত মনে কিছুদূর সামনে অগ্রসর হয়ে দেখলেন, একদল লোককে যাঁতায় পিষিয়া ছাতু করে পুনরায় ভাল করে আবার পিষছে। তাদের আকৃতি অত্যন্ত কুশ্রী। জিবরাইল (আঃ) বললেন, এরা মুনাফিক ছিল, এদের মুখে ছিল হাসি আর অন্তরে ছিল হিংসা। পিছনে টেরা চোখে মানুষের বিদ্রূপ করত। তিনি কিছুদূর অগ্রসর হয়ে দেখলেন, একদল লোককে বন্দি করে জ্বলন্ত আগুনে জ্বালিয়ে ছারখার করছে। আবার জীবিত করা হচ্ছে। আবার আগুনে ফেলা হচ্ছে। জিবরাইল (আঃ) বললেন, এরা মাতা-পিতার অবাধ্য ছিল। মাতা-পিতার কথা শুনত না, তাদের সাথে তর্জন গর্জন করে কথা বলত। তাদেরকে খাওয়া পরায় কষ্ট দিত। হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আর একটু অগ্রসর হয়ে দেখলেন, একদল লোকের গলা উটের ন্যায় লম্বা, ফেরেশতাগণ তাদের মুখের উপর আগুন নিক্ষেপ করছে আর শীশা গলিয়ে তাদের মুখে ঢেলে দিচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গেই আবার তা পায়খানার রাস্তা দিয়ে বের হয়ে পড়ছে। যন্ত্রণার চোটে তারা আকাশ ফাটা চিৎকার করছে, জিবরাইল (আঃ) বললেন, এরা ছল চাতুরী করে এতিমের বাড়ি- ঘর ছাড়া করে এতিমের মাল খেয়েছে। অথচ আল্লাহ পাক বলেছেন,
مَا يَأْكُلُونَ فِي بُطُونِهِمْ إِلَّا النَّارَ
উচ্চারণ: মা ইয়াকুলুনা ফী বুতুনীহিম ইল্লান্নার।
অর্থ: যারা যুলুম করে এতিমের মাল আত্মসাৎ করে খায়, নিঃসন্দেহে তারা তাদের পেটে দোযখের আগুন ভরে। (সূরা বাকরা, আয়াত, ১৭৪)
তিনি আর একটু অগ্রসর হয়ে দেখলেন, একদল মেয়েলোকের পাগুলো তাদের মাথার চুলের গোছা দ্বারা কষে বেঁধে আগুনের চাবুক দিয়ে
পেটাচ্ছে। তাদের শরীরের চামড়া খসে পড়ছে। আঘাত সহ্য করতে না পেরে তারা আকাশ ফাটা চিৎকার করছে। জিবরাইল (আঃ) বললেন, এই হতভাগিনীরা বিয়ের পূর্বেই পর পুরুষের সঙ্গে হারাম কাজ করে জারজ সন্ত ান জন্ম দিয়ে আবার গোপনে ঐ সন্তানকে হত্যা করেছে। নবীজী কিছুদূর গিয়ে দেখলেন, একদল লোকের মুখে উত্তপ্ত লোহার শলাকা ঢুকিয়ে দিয়ে তাদের জিহ্বা ও ঠোট টেনে টেনে কেচি দিয়ে কেটে দিচ্ছে। তারা ভীষণ চিৎকার করে কাঁদছে। কাটা শেষ হতে না হতেই আবার ভাল হয়ে যায়, পুনরায় আবার বারবার কাটে। জিবরাইল (আঃ) বললেন, হুযুর এরা হল আপনার উম্মতের মধ্যে বে-আমল আলেম, এরা চিরজীবন মানুষকে ওয়াজ করে বুঝাত, কিন্তু নিজে আমল করত না। একথা শুনে নবীজী কেঁদে বুক ভাসাতে লাগলেন। জিবরাইল (আঃ) বললেন, হুযুর! আপনি এর চেয়েও বড় বড় আযাব দেখলেন, কিন্তু আপনিত এত হয়রান, পেরেশান হয়ে কাঁদেন নি। এ আযাব দেখে কেন এত কাঁদেন? তিনি বললেন, ভাই জিবরাইল কি বলব আমার ইন্তেকালের পর এই আলেমেরাই আমার ওয়ারেছ হয়ে দ্বীন ইসলামের প্রচার প্রসার করবে। আমার উম্মতের মাঝে দ্বীন ইসলামের রীতি নীতি আদর্শ পৌছাবে। তখন তারা যদি এমনভাবে ভুল করে বসে, তবে দ্বীনের খেদমত কে করবে? আর আমার উম্মতের
অবস্থা কি হবে?
সেখান হতে অগ্রসর হয়ে হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একটা বিরাট ময়দান দেখতে পেলেন। সেখান হতে মেশক আম্বরের সুগন্ধি ভেসে আসছে, আর একটা আওয়াজ আসল। হে আল্লাহ! আপনি যে ওয়াদা করেছেন তা পূর্ণ করুন। এই অসংখ্য নিয়ামত ভোগ করার লোক আমার সীমানায় পাঠিয়ে দিন। সঙ্গে সঙ্গে আরেকটি মধুর আওয়াজ আসল, ওহে বেহেশত তুমি কোন চিন্তা করনা আমি তোমার এলাকায় আমার প্রিয় বান্দাদেরকে অবিলম্বে পাঠিয়ে দিচ্ছি। তার আমার অফুরন্ত নেয়ামত ভোগ করে আনন্দ পাবে আর আমার শোকর আদাই করবে। আরো কিছুদূর অগ্রসর হয়ে হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একটি বিকট আওয়াজ শুনতে পেলেন, আর দুর্গন্ধ ভেসে আসতেছিল। আর অসংখ্য শিকলের ঝনঝনী আগুনের ঘুমঘুম শুনা যাচ্ছিল। জিবরাইল (আঃ) বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! উহা দোযখের গর্জন আর দোযখীদের বান্ধনের শিকলের শব্দ। দোযখ চিৎকার করে বলতেছে, হে আল্লাহ আপনি তাড়াতাড়ি আপনার নাফরমান লোকদেরকে পাঠিয়ে দিয়ে আপনার ওয়াদা পূরণ করুন। আর আমার ক্ষুধা দূর করুন। আমার পেটের মধ্যে দাউ দাউ কারে আগুন জ্বলছে। অসংখ্য বিষধর সাপ বিচ্ছু তাদেরকে দংশন করার জন্য ফনা ধরে আছে। বিষাক্ত পুঁজ, রক্ত, ঝাক্কুম গাছ, ফুটন্ত গরম পানি, হাতুরী, শিকল সবকিছু প্রস্তুত আছে। আল্লাহ পাক জবাব দিচ্ছেন, হে জাহান্নাম! তুমি অস্থির হইওনা, আমার নাফরমান ও আমার রাসুলের আদেশ অমান্যকারীকে আমি শীঘ্রই তোমার কাছে পাঠিয়ে তোমার উদর পূর্ণ করে তোমার ক্ষুধা নিবারণ করব। এই সকল কথা শুনে দয়ার নবী উম্মতের চিন্তায় অস্থির হয়ে পড়লেন। আহারে! না জানি আমার কোন উম্মতের দোযখ নসীব হয়ে যায়।
(৪র্থ পর্ব আসিতেছে ইনশাআল্লাহ)
No comments