মেরাজের বয়ান (৪র্থ পর্ব:)
মেরাজের বয়ান (৪র্থ পর্ব:)
অতঃপর বোরাকে আরোহণ করে তিনি বিদ্যুত গতিতে দ্বিতীয় আসমানের দরজায় উপস্থিত হলেন। এদিকে ৭ আসমান পর্যন্ত নবীজীর আগমনের বার্তা ছড়িয়ে পড়লে ফেরেশতাদের মধ্যে আনন্দের ঢেউ বয়ে যেতে লাগল, দ্বার রক্ষী কাবিল ফেরেশতা দ্বিতীয় আসমানের দরজা খুলে দিলেন। সব ফেরেশতা উচ্চ কণ্ঠে দরুদ ও সালাম পাঠ করতে লাগলেন। মারহাবা। মারহাবা। ইয়া রাসুলাল্লাহ! সালাতুন ইয়া রাসুলাল্লাহ আলাইকুম। সালামুন ইয়া হাবীবাল্লাহ আলাইকুম। নবীজী সামনে অগ্রসর হয়ে দেখলেন, দুটি সোনার কুরসিতে বসা দুই নুরানী চেহারার লোক। জিবরাইল (আঃ) বললেন, এদের একজন হচ্ছেন হযরত 'ঈসা (আঃ) আরেকজন হযরত ইয়াহইয়া (আঃ)। ঈসা (আঃ) চির কুমার ছিলেন। একটা জামা গায়ে দিয়ে থাকতেন, কোন ঘর দরজা করেন নাই। কোন মজাদার খানা জীবনে খান নাই। সর্বদা আল্লাহর জিকিরে লিপ্ত থাকতেন। মৃত ব্যক্তিকে জীবিত করতে পারতেন। কুষ্ঠ রোগীকে ভাল করতে পারতেন। হুযুর গিয়ে তাকে সালাম করলেন, তিনি সালামের উত্তর দিয়ে বললেন, মারহাবা হে পূণ্যবান নবী। জিবরাইল (আঃ) বললেন, উনি হযরত ইয়াহইয়া (আঃ), নবীজী তাকেও সালাম করলেন। তিনিও সালামের জাওয়াব দিয়ে ধন্যবাদ দিতে লাগলেন। নবীজী আর কিছুদূর অগ্রসর হয়ে দেখলেন, এক ভীষণ আকৃতির ফেরেশতা, তার ৭০ হাজার মাথা, প্রত্যেক মাথায় ৭০ হাজার মুখ, প্রত্যেক মুখে ৭০ হাজার ভাষায় কথা বলতে পারে। জিবরাইল (আঃ) বললেন, এর নাম হচ্ছে মেহেতের কাসেম। জগতের যাবতীয় রুজী বণ্টনের ভার তার হাতে।
তিসি সেখান হতে বোরাকে উঠে তৃতীয় আসমানের দরজায় পৌঁছলেন। জিবরাইল (আঃ) দরজায় করাঘাত করলে তৃতীয় আসমানের দ্বাররক্ষক মেহেতের মাঈল ফেরেশতা দরজা খুলে নবীজীকে সালাম জানালেন। তিনি একটু অগ্রসর হয়ে দেখলেন, এক সুদর্শন মহাপুরুষ তার রুপে সব আলোকিত হয়ে রয়েছে। নবীজী বললেন ভাই জিবরাইল! এত সুন্দর চেহারাতো কোনদিন দেখি নাই। ইনি কে? জিবরাইল (আঃ) বললেন, ইনি মানব জাতির রূপের মুকুট হযরত ইউসুফ (আঃ)। সারাজাহানের রুপের অর্ধেক উনাকে দেয়া হয়েছে। আর বাকি অর্ধেক সারা জাহানের লোককে দেয়া হয়েছে। হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে গিয়ে সালাম করার সাথে সাথে তিনি সালামের জবাব দিয়ে দাঁড়িয়ে গেলেন আর বললেন, ধন্যবাদ হে নেককার নবী আপনাকে অভিনন্দন জানাচ্ছি। আপনার মেরাজ মোবারক হোক। বিশ্বনবী সেখান হতে বিদায় হয়ে বোরাকে সওয়ার হয়ে চতুর্থ আসমানের দরজায় উপস্থিত হলেন। জিবরাইল (আঃ) করাঘাত করলে চতুর্থ আসমানের দ্বার রক্ষী মোতাঈল ফেরেশতা দরজা খুলে নবীজীকে সালাম করলেন আর ঝাঁকে ঝাঁকে ফেরেশতারা এসে নবীজীকে অভিনন্দন জানিয়ে একটি মূল্যবান বেহেশতী পোশাক উপহার দিলেন। যে পোশাকে সোণার অক্ষরে লিখা আছে,
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي أَنْزَلَ عَلَى عَبْدِهِ الْكِتَابَ
উচ্চারণ: বিসমিল্লাহির রাহমানী রাহীম, আলহামদু লিল্লাহীল্লাযী আনযালা আলা আবদিহিল কিতাব।
অর্থ: পরম করুনাময় দাতা আল্লাহর নামে আরম্ভ করছি। সমস্ত প্রশংসা একমাত্র সেই আল্লাহর জন্য, যিনি তার একান্ত বান্দার প্রতি কোরআন নাযিল করেছেন।
(সূরা কাহাফ, আয়াত, ১)
বিশ্বনবী পোশাকটি গ্রহণ করে সামনে অগ্রসর হয়ে দেখলেন, এক মহাপুরুষ সোনার কুরসিতে বসা, তার মূল্যবান পোশাকে স্বর্ণাক্ষরে লিখা আছে,
لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ مُحَمَّدٌ رَّسُوْلُ اللَّهِ.
উচ্চারণ: লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ।
জিবরাইল (আঃ) বললেন, ইনি হলেন ইদরীস (আঃ)। তাকে আল্লাহ পাক জীবিত অবস্থায় চতুর্থ আসমনে উঠিয়ে নিয়েছিলেন। একথা শুনার পর নবীজী তাঁকে সালাম করে বললেন, হে ভাই আপনার খোস নসিব যে, আল্লাহ পাক আপনাকে আসমানে উঠিয়ে আমার পূর্বেই বেহেশতে প্রবেশ করিয়েছেন। তিনি সালামের জবাব দিয়ে বললেন, নবীজীগো! আপনার খোশ নসিব আর আপনার উম্মতের খোশ নসিব। কেননা একদিন আমি জিব্রাইলের দেখা পেয়ে বললাম, ভাই আপনি আজরাইলের কাছে সুপারিশ করে দেখেন, একটু হায়াত বাড়ানো যায় কিনা? তাহলে আর কিছু ইবাদত করা যাবে। তিনি আমাকে নিয়ে এই চতুর্থ আসমানেই আজরাঈলের সাথে সাক্ষাত করে আমার জন্য সুপারিশ করার সঙ্গে সঙ্গেই আজরাইল (আঃ) বললেন, ইদরীস এখন কোথায়? তিনি বললেন, এই যে সে আমার পিঠে। ইহা শুনে আজরাইল (আঃ) বললেন, আমি তার জন্য চিন্তা করতে ছিলাম। আল্লাহ পাক আমাকে হুকুম করছেন এখনি যেন আমি এখানে বসে তার জান কবজ করি। আমি ভাবছিলাম যে, ইদরীস তো রয়েছে দুনিয়াতে। চতুর্থ আসমানে কি করে তার জান কবজ করব? এখন দেখি আপনি তাকে নিয়েই এসেছেন। হুযুর তাই আমি আসমানে এসেও মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচতে পারি নাই। এখানে বসে আমার মৃত্যু হয়। মৃত্যু যে কি কষ্ট! আমার মনে হচ্ছিল যেন আমার চামড়া ছিলে নেওয়া হচ্ছে। তারপর আমি আবার জীবিত হয়ে বেহেশতের দিকে রওয়ানা হলাম। প্রথম বেহেশতের দরজায় গিয়ে দাঁড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে আওয়াজ আসল সাবধান। এ বেহেশত তোমার জন্য নয়। দরজার উপর দিকে তাকিয়ে দেখি লেখা রয়েছে, মুহাম্মদ নবীর আগে কোন নবী এবং তার উম্মতের আগে অপর কোন নবীর উম্মত বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবেনা। এভাবে একে একে ৮ বেহেশত প্রত্যেকটির দরজায় গিয়ে ঐ একই কথা লেখা দেখতে পেলাম তাই আমি দুঃখিত যে, আমি যদি নবী না হয়ে আপনার উম্মত হতাম।
তিনি কিছুদূর অগ্রসর হয়ে দেখলেন, ভীষণ আকৃতি ভয়াবহ দীর্ঘদেহী এক ফেরেশতা বিরাট সিংহাসনে বসা, তার সামনে বিরাট এক টেবিল, তার দুই হাটুর উপরে দুনিয়াটা। তার ডান হাত দুনিয়ার পশ্চিমের শেষ মাথায়, আর বাম হাত পূর্বের শেষ মাথায় প্রসারিত রয়েছে। তার ডানে বামে অসংখ্য ফেরেশতা দাঁড়িয়ে আছে। টেবিলের উপর বিরাট একখানা ডাইরী বই খোলা রয়েছে। সে এক দৃষ্টে ডাইরীর উপর চেয়ে রয়েছে। তার ডানদিকে একটি গাছ আছে। জিবরাইল (আঃ) বললেন, হুযুর ইনিই যাবতীয় জীবের জান কবজ করে থাকেন। উনার নাম মালাকুল মাউত আজরাইল (আঃ)। চেয়ে দেখেন, উনার চারদিকে চারখানা চেহারা। সামনের দিকের চেহারা দিয়ে মুমিন লোকদের জান কবজ করেন। ডানদিকের চেহারা দিয়ে পাপী লোকদের জান কবজ করেন। বামদিকের চেহারা দিয়ে মুনাফিকদের রুহ বের করেন। পেছনের দিকের চেহারা দিয়ে কাফের মুশরেকের জান কবজ করেন। তার ৭০ খানা পাও, চারিখানা ডানা আছে। যত সংখ্যক মানুষ আল্লাহ পাক সৃষ্টি করেছেন, আর করবেন তত সংখ্যক চক্ষু ও জিহ্বা তার শরীরে আছে এবং তত সংখ্যক হাতও তার শরীরে আছে। তা দ্বারা তিনি রুহ বের করেন। তার একখানা পাও দোযখের পুলের উপর আর একখানা পাও বেহেশতের উপর। তার শরীর এত বড় যে, যদি তার মাথায় সারা দুনিয়ার পানিও ঢেলে দেয়া হয়, তবে একবিন্দু পানিও মাটিতে পড়বে না। সারা দুনিয়াই তার সামনে একখানা পানদানের মত ছোট, দুনিয়াতে যত প্রাণী আছে তার ডান পাশের গাছটায় তত সংখ্যক পাতাও আছে। গাছটির নাম শাজারাতুল ইয়াকীন। যখন কোন ব্যক্তির আয়ু শেষ হবার মাত্র চল্লিশ দিন বাকি থাকে, তখন ঐ গাছটির একটি পাতা তার সামনে ঝরে পড়ে, এতে ঐ লোকটার নাম লেখা থাকে তখন তিনি বুঝতে পারেন। আরশের নিচু হতে প্রত্যেক নামের উপর এক বিন্দু পানি পরে যার নামের উপর সবুজ বিন্দু পরে, বুঝবে সে বদকার। আর যে নামের উপর সাদা বিন্দু পরে বুঝবে সে নেককার। হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার নিকট গিয়ে বললেন,
السَّلَامُ عَلَيْكُمْ يَا مَلَكَ الْمَوْتِ.
আসসালামু আলাইকুম ইয়া মালাকাল মাউত।
উচ্চারণ: তিনি সালামের জবাব দিলেন কিন্তু ব্যস্ততার মধ্যে তাকাতে পারেন নাই। নির্দেশ বাণী ভেসে আসল, আল্লাহ পাক ডেকে বললেন, হে আজরাইল আমার পিয়ারা হাবীব যা জিজ্ঞেস করেন তার উত্তর দাও। সঙ্গে সঙ্গে নবীজীর দিকে মাথা তুলে তাকালেন। হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার ভয়াল চাহনি দেখে ভয় পেলেন। আজরাইল (আঃ) বললেন, আপনার মেরাজ শুভ হোক। ইয়া রাসুলাল্লাহ! আল্লাহ পাক আমাকে অত্যন্ত কঠিন দায়িত্বপূর্ণ কাজ দিয়েছেন। আমার এক মূহুর্ত সময় নেই যে, আমি কারও প্রতি এক নজর তাকাই। আজ আল্লাহর আদেশে সব কাজ বন্ধ করে আপনার সঙ্গে কথার বলার সুযোগ পেলাম। হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, ভাই আজরাইল রূহ কিরূপ পদার্থ? তিনি উত্তর দিলেন, রূহ যে কিরূপ পদার্থ তা আমিও জানি না। তবে যখন কোন ব্যক্তির রূহ কবজ করি, তখন আমার হাতের তালুতে একটু ভারী কিছু অনুভব করি। কিন্তু তার আকৃতি কেমন তা আমি কখনও দেখি নাই।
ঈমানদার ব্যক্তির রূহ কবজ করার সময় আমার ডান দিকের ফেরেশতাদের সাহায্য নেই এবং আসানীর সঙ্গে বের করে সুগন্ধি মাখা নরম কাপড়ে আবৃত করে আসমানের দিকে নিয়ে এসে আল্লাহ পাকের নিকট শান্তীর স্থান (ইল্লিয়িয়নে) পৌছিয়ে দেই। আর মৃত ব্যক্তি যদি আল্লাহর নাফরমান হয়, তবে আমার বাম পাশের ফেরেশতাদের সাহায্য নেই। এমন কষ্ট দিয়ে তার রুহ বের করি, যেমন জীবন্ত ছাগলেন চামড়া ভোতা ছুরি দিয়ে ছিলে নেয় এবং দুর্গন্ধ বিষাক্ত পঁচা কাপড়ে বেঁধে জাহান্নামের গর্ত সিজ্জিনে পৌছিয়ে দেই। ইহা শুনে আমার নবী উম্মতের চিন্তায় অস্থির হয়ে পড়লেন। আজরাইল (আঃ) বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ আপনার খাঁটি উম্মতের জান অত্যন্ত আসানের সাথে কবজ করা হবে। একথা শুনে নবীজী খুশি হয়ে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করলেন। আজরাইল (আঃ) এর সঙ্গে বিশ্বনবীর সাক্ষাতের স্থান নিয়ে মতভেদ আছে। কোন কোন আলেম বলেন, চতুর্থ আসমানে সাক্ষাত হয়েছে।
যাক অতঃপর নবীজী পঞ্চম আসমানে উপস্থিত হলেন, দ্বাররক্ষী ফেরেশতা আঈল দরজা খুলে দিয়ে অভিনন্দন জানালেন, এই আসমানের ফেরেশতারাও নবীজীকে একটি বেহেশতের পোশাক উপহার দিলেন। তিনি তা গ্রহণ করে সামনে অগ্রসর হয়ে হযরত হারুন (আঃ) এর সঙ্গে সাক্ষাত করেন। গিয়ে দেখেন তিনি ওয়াজ করতেছেন। চতুর্দিকে বহু লোক তা শুনতেছে। জিবরাইল (আঃ) বললেন, হুযুর, ইনি হযরত মুসা (আঃ) এর ভাই হারুন (আঃ)। যারা ওয়াজ শুনতেছে তারা হলো ঐ সব বনী ইসরাইলের আত্মা যারা দুনিয়াতে ওয়াজ নসিহত শুনে আমল করত। হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত হারুন (আঃ) কে গিয়ে সালাম করলেন। তিনিও সালামের উত্তর দিয়ে খুশিতে উঠে বললেন, মারহাবা, ধন্যবাদ হে নবী সম্রাট। তথা হতে রওয়ানা হয়ে নবীজী ষষ্ঠ আসমানে উপস্থিত হলেন। দ্বাররক্ষী ফেরেশতাদের নেতা মেহতের হায়িল তাকে অগণিত ফেরেশতাসহ স্বাগতম জানালেন। কিছুদূর অগ্রসর হয়ে তিনি হযরত মুসা (আঃ)-কে দেখলেন। জিবরাইল (আঃ) বললেন, ইনি হযরত মুসা (আঃ)। ইনি আল্লাহ পাকের সঙ্গে সরাসরি কথা বলতেন। বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম গিয়ে তাকে সালাম করলেন।
তিনি সালামের জাওয়াব দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে নবীজীকে ধন্যবাদ জানালেন আর বললেন, নবীজীগো! আপনি কোথায় রওয়ানা করছেন? আপনার খবর আছে কি? তথায় আল্লাহর নূরের আগুন আর আগুন। আপনি নিশ্চয়ই জানেন যে, আমি আল্লাহ পাকের সাথে সরাসরি কথা বলতাম। তাই একদিন বললাম, হে আল্লাহ আপনি মেহেরবাণী করে আমাকে দেখা দেন। তিনি বললেন, হে মুসা আমাকে দেখার শক্তি তোমার নাই। আমি বললাম, মাবুদগো! আমি আপনাকে শুধু এক নজর দেখব। তখন তিনি বললেন, ঐ পাহাড়ের দিকে নজর কর, আমি ৭০ হাজার নূরের পর্দা ভেদ করে আমার নূরের এক জাররা তাজাল্লি বর্ষণ করছি। নবীজীগো! আমি পাহাড়ের দিকে তাকিয়ে দেখি পাহাড় জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে গেল এবং আমি বেহুশ হয়ে পড়ে রইলাম। আমার সঙ্গী সাথী ৭০ জন আলেম সব পুড়ে কয়লা হয়ে গেল। আমি জ্ঞান ফিরে পেয়ে বললাম, হে আল্লাহ আমি আর কোন দিনও আপনাকে দেখতে চাইব না। আমার সাথী আলেমদের কে আপনি জীবিত করে দিন। আল্লাহ পাক তাদের সবাইকে জীবিত করে দিলেন। আমি আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করলাম। আপনি কোন সাহসে রওয়ানা করেছেন। ফিরে যান নিজের জীবন নিয়ে। তিনি বললেন, ভাই মুসা আপনিতো আল্লাহকে দেখতে চেয়ে বেয়াদবী করেছেন। আর তিনি আমাকে দাওয়াত করে আনতে পাঠিয়েছেন। আমার বিপদ বলতে কিছুই নেই। হযরত মুসা (আঃ) বললেন, হে আল্লাহর পেয়ারা হাবীব, আপনিতো আল্লাহ পাকের সাক্ষাতে যাচ্ছেন। তাঁর সঙ্গে আপনার কি আলাপ আলোচনা হয় এবং আপনার উম্মতের জন্য কি হাদিয়া দেন, তা অবশ্যই যাওয়ার সময় আমার সাথে দেখা করে বলে যাবেন। হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেখান হতে আর একটু অগ্রসর হয়ে এমন এক আশ্চার্য আকৃতির ফেরেশতা দেখলেন, তার মাথা একটি কিন্তু তার চেহারা বহুত। জিবরাইল (আঃ) বললেন, এর নাম রূহ ফেরেশতা। এর চেহারা এক লক্ষ, প্রতিটি চেহারায় এক লক্ষ করে মুখ, প্রতিটি মুখে এক লক্ষ ভাষা। তার যিকিরে আসমান জমিন কাঁপতে থাকে। তার প্রতিটি যিকিরের সঙ্গে সঙ্গে এক একজন ফেরেশতা পয়দা হতে থাকে। এসব ফেরেশতাগণ উম্মতে মুহাম্মদীর জন্য দোয়া করে। হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে সালাম জানিয়ে সপ্তম আসমানের দিকে রওয়ানা হলেন।
(৫ম পর্ব আসিতেছে ইনশাআল্লাহ)
No comments