মেরাজের বয়ান ৫ম পর্ব:

 


 মেরাজের বয়ান ৫ম পর্ব:

সপ্তম আসমানের গেটে পৌছলে গেট খোলা হয়। ঝাঁকে ঝাঁকে ফেরেশতা এসে নবীকে সালাম জানালেন, তিনি একটু অগ্রসর হয়ে গিয়ে দেখেন, বায়তুল মামুরের সঙ্গে টেক লাগিয়ে বসে আছেন ইব্রাহীম (আঃ)। মুসলমানদের জাতির পিতা হলেন ইব্রাহীম (আঃ)। নবী দেখেন লক্ষ লক্ষ ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা চারদিকে ঘুরছে। আল্লাহর খলিল ঐ ছেলে মেয়েগুলোকে আল্লাহর নামের তসবীহ তাহলীল শিখিয়ে দিতেছেন। নবী আমার ডেকে বলেন, ও ভাই জিবরাইল! এ ছেলে মেয়েরা ইব্রাহীম (আঃ) এর চারদিকে ঘোরার কারণ কি? জিবরাইল (আঃ) বললেন, হুযুর গো এগুলো ঐ সমস্ত ছেলে মেয়ে, যারা বালেগ হওয়ার আগে জমিন থেকে মৃত্যুবরণ করেছে। যেহেতু তিনি জাতির পিতা, তাই কেয়ামতের আগ পর্যন্ত ছোট ছেলে মেয়েরা ইব্রাহীম (আঃ)-এর পাশে জমা হতে থাকবে। আর আল্লাহর নামের তসবীহ পড়তে থাকবে। এজন্য বলি, ছোট ছেলে মেয়ে মারা গেলে চিল্লা চিল্লি না করে যদি ধৈর্য ধরে থাকতে পারেন যে, মাবুদগো তোমার দেয়া সম্পদ ছিল। তুমি নিয়ে গেলা (আলহামদুলিল্লাহ)। তবে এই বাচ্চাটা হাশরের দিন আপনার বিরাট বড় একটা সম্পদ হয়ে দাঁড়াবে। নবীজী গিয়ে ইব্রাহীম (আঃ) কে সালাম করলেন। তিনি সালামের জবাব দিয়ে বললেন, হে নেককার নবী আপনাকে ধন্যবাদ। নবীজী বললেন, মৃত্যুর পর মানুষের আমল করার কিছু থাকবে না। অথচ আপনাকে দেখছি এখনও আল্লাহর যিকির করতেছেন, ইব্রাহীম (আঃ) বললেন, হে নেককার পুত্র দুনিয়াতে গিয়ে উম্মতদেরকে আমার তরফ হতে এই হাদিয়া দিবেন, سُبْحَانَ اللَّهِ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ وَلَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَاللَّهُ أَكْبَرُ وَلَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ الْعَلِيِّ

العظيم

উচ্চারণ: সুবহানাল্লাহি ওয়াল হামদুলিল্লাহি, ওয়া লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার, ওয়ালা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহিল আলিয়ি‍্যল আজীম।

ইহা যে যতবার পাঠ করবে তার জন্য বেহেশতের মধ্যে ততটি ফলের গাছ রোপণ করা হবে। তিনি সেখান হতে আরো কিছুদূর অগ্রসর হয়ে দেখলেন, একদল লোকের চেহারা অতি উজ্জল। অন্য একদল লোকের চেহারার অর্ধেক কালো, অর্ধেক সাদা, জিবরাইল (আঃ) বললেন, আপনার উম্মতের মধ্যে যারা ইসলামের বিধান পুরাপুরি পালন করে তাদের চেহারা সম্পূর্ণ উজ্জল। আর যারা কতেক পালন করে কতেক করে না, তাদের চেহারা অর্ধেক কালো অর্ধেক উজ্জল। নবীজী সেখান হতে কিছুদূর অগ্রসর হয়ে দেখলেন, বায়তুল মামুরে ফেরেশতারা ইবাদত করছে, তিনি সেখানে প্রবেশ করে ইমামতি করে দুই রাকাত নামায আদায় করে সামনে অগ্রসর হয়ে দেখলেন, এক বিরাট ফেরেশতা তিনি আল্লাহর ভয়ে কাঁদছেন, আর তার প্রত্যেক ফোঁটা অশ্রু হতে একজন করে ফেরেশতার জন্ম হচ্ছে। জিবরাইল (আঃ) বললেন, ইনি মিকাইল (আঃ) তার অশ্রু হতে যেসব ফেরেশতা জন্ম হচ্ছে, তারা সবাই আপনার উম্মতের গুনাহ্ মাফের জন্য দোয়া করতে থাকে। আর মিকাইল (আঃ) সাগরের পানির পরিমাণ নির্ধারণ, বৃষ্টি বর্ষণ, প্রত্যেক প্রাণীর জীবিকা বণ্টন ইত্যাদির দায়িত্ব পালন করেন। হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে সালাম করে সামনে অগ্রসর হয়ে দেখলেন, এক ভয়ঙ্কর ভীষণ কুশ্রী আকৃতির এক ফেরেশতা, তার চেহারা এমন বিরাট যে, মানুষ তাকে দেখা মাত্রই অজ্ঞান হয়ে যাবে। জিবরাইল (আঃ) বললেন, ইনিই দোযখের রক্ষক মালেক ফেরেশতা। নবীজী গিয়ে তাকে সালাম দিলেন। মালেক সালামের উত্তর না দিয়ে নিজ কাজে মশগুল রইলেন। তখনই আল্লাহর বাণী ভেসে আসল, হে মালেক!

আমার পিয়ারা হাবীব মুহাম্মাদ তোমাকে সালাম করেছে, তুমি উত্তর দিলে না কেন? মুহাম্মাদ নাম শুনামাত্র মালেক ফেরেশতা হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাত ধরে মোসাফাহা করে পাশে বসালেন। নবীজী বললেন, ভাই মালেক আমাকে দোযখের কিছু বর্ণনা শুনান। মালেক উত্তর করলেন, হুযুর দোযখের বর্ণনা শ্রবণ করে তা সহ্য করার

ক্ষমতা আপনার নাই। আর দোযখের শাস্তি স্বচক্ষে দেখলে, আপনি আর দুনিয়াতে ফিরে যেতে পারবেন না। আল্লাহ পাকের আদেশ আসল, হে মালেক, আমার হাবীবকে উত্তমরূপে বর্ণনা করে শুনিয়ে দাও। তখন মালেক বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ, আল্লাহ পাক গজবের দ্বারা ৭টি দোযখ সৃষ্টি করেছেন। তার প্রত্যেকটির প্রস্থ আসমান ও জমিনের দূরত্বের সমান। প্রত্যেক দোযখের মধ্যে ৭০ হাজার করে আগুনের পাহাড় আছে। প্রত্যেকটি পাহাড়ে ৭০ হাজার করে আগুনের গুহা আছে, প্রত্যেকটি গুহার ভেতরে ৭০ হাজার করে আগুনের শহর আছে, প্রত্যেক শহরে ৭০ হাজার করে আগুনের মহল্লা আছে। প্রত্যেক মহল্লায় ৭০ হাজার করে আগুনের পল্লী আছে, প্রত্যেক পল্লীতে ৭০ হাজার করে আগুনের গৃহ আছে। প্রত্যেক গৃহে ৭০ হাজার করে আগুনের কোঠা আছে। প্রত্যেক কোঠায় ৭০ হাজার আগুনের সিন্দুক আছে। প্রত্যেক সিন্দুকে ৭০ হাজার করে আগুনের সাপ ও বিচ্ছু আছে। আল্লাহ পাক ঐ আগুনকে এমন তেজময় করেছেন যে, তার ভেতরে দুনিয়ার যে কোন পর্বত নিক্ষেপ করলে তা ভস্ম হয়ে যাবে। দোযখের আগুনের এক কণা যদি দুনিয়াতে পড়ে, তবে তার উত্তাপে দুনিয়ার যাবতীয় গাছপালা, জীব-জানোয়ার ভস্ম হয়ে যাবে। দোযখের সাপ, বিচ্ছু কাউকে একবার দংশন করলে, হাজার বৎসর তার যন্ত্রণা থাকবে। অথচ সব সময় তারা দংশন করতেই থাকবে। এসব সাপের নিঃশ্বাস যদি দুনিয়াতে পড়ত, তবে গাছ-পালা, তরুলতা, মানুষ, জানোয়ার উহার বিষে জ্বলে পুরে ছাই হয়ে যেত। দোযখের পোশাকের এক টুকরা কাপড় যদি দুনিয়াতে ঝুলিয়ে দেয়া হয়, তার দুর্গন্ধে যাবতীয় প্রাণী মারা যাবে। দোযখের উত্তাপে অস্থির হয়ে বৃষ্টি প্রার্থনা করলে আকাশে কালো মেঘ দেখা দিবে তা হতে অসংখ্য সাপ, বিচ্ছু, দোযখীদের দেহে পড়তে থাকবে। দোযখের লোকদেরকে জাকুম নামক এক প্রকার বৃক্ষ আহার করতে দেয়া হবে, তা এত তিক্ত যে, এর এক টুকরা যদি দুনিয়ার পানিতে ফেলে দেয়া হয়, তবে দুনিয়ার সমস্ত পানি তিক্ত হয়ে যাবে। জাকুম গাছ আহার করলে এর কাঁটা গলায় আটকে যাবে গিলতে চেষ্টা করলে সব নাড়ি ভুঁড়ি বের হয়ে যাবে। বিষাক্ত গরম পানি ও দুর্গন্ধ পূজ পান করতে দেয়া হবে। পানির পাত্র মুখের নিকট নেয়া মাত্র মুখের গোস্ত সব ঝরে পানির পাত্রে পড়ে যাবে। কলিজা নাড়ি ভূড়ি সব গলে পায়খানার রাস্তা দিয়ে বের হয়ে যাবে। (নাউজুবিল্লাহ)

ইহা ছাড়া দোযখের মধ্যে আর একটি বরফের প্রান্তর আছে। তার মধ্যে বরফের পাহাড় আছে। প্রত্যেক পাহাড়ে ৭০ হাজার করে বরফের গুহা আছে, প্রত্যেক গুহার ভেতরে ৭০ হাজার করে বরফের শহর আছে, প্রত্যেক শহরে ৭০ হাজার করে পল্লী আছে, প্রত্যেক পল্লীতে ৭০ হাজার করে গৃহ আছে, প্রত্যেক গৃহে ৭০ হাজার করে বরফের কোঠা আছে, প্রত্যেক কোঠায় ৭০ হাজার করে বরফের সিন্দুক আছে, প্রত্যেক সিন্দুকে ৭০ হাজার আযাবের সরঞ্জাম আছে। দোযখ প্রতি বৎসর দুবার করে নিঃশ্বাস ছাড়ে, একবার আগুনের নিঃশ্বাস একবার বরফের নিঃশ্বাস। এজন্য দুনিয়াতে একবার শীত একবার গরমের সৃষ্টি হয়ে থাকে। হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দোযখের আযাবের মর্মান্তিক কাহিনী শুনে উম্মতের চিন্তায় বুক ফেটে কাঁদতে ছিলেন। মালেক বললেন, হুযুর! আপনি দোযখ দেখতে ইচ্ছা করেন কি? তিনি বললেন, দেখাও দেখি। অমনি মালেক ফেরেশতা দোযখের দরজা খুলে দিলেন। তিনি বলেন, আমি এক নজর দেখার সঙ্গে সঙ্গে আমার মানসিক অবস্থা পরিবর্তন হয়ে গেল। আগুনের লেলিহান শিখা, অসংখ্য সাপ, বিচ্ছু, জিঞ্জির, বেড়ী, শিকল আরও কত ভয়ঙ্কর জিনিস সঙ্গে সঙ্গে মালেক ফেরেশতা দোযখের দরজা বন্ধ করে দিলেন। দোযখের সীমাহীন আযাব গর্জন দেখে বিশ্বনবী উম্মতের চিন্তায় ব্যথিত মন নিয়ে কিছুদূর অগ্রসর হয়ে দেখলেন, বিরাট এক কুরসীর উপর বসা সুন্দর চেহারার এক ফেরেশতা তার শরীরের আলোতে চারদিকে আলোকিত হয়ে রয়েছে। তার ডানে বামে আরো অসংখ্য সুন্দর সুন্দর ফেরেশতা, দাঁড়িয়ে আছে। জিবরাইল (আঃ) বললেন, ইনি জান্নাতের সরদার রেদওয়ান ফেরেশতা। তিনি গিয়ে সালাম করলেন। রেদওয়ান সালামের উত্তর দিয়ে মোসাফাহা করে সম্মানের সঙ্গে পার্শ্বে বসালেন। ইতিমধ্যে আল্লাহ পাকের বাণী ভেসে আসল। হে রেদওয়ান! আমার হাবীবকে মালেক ফেরেশতা দোযখের বর্ণনা শুনিয়ে চিন্তিত ও দুঃখিত করেছে। তুমি তাকে জান্নাতের সৌন্দর্য নেয়ামতের সংবাদ শুনিয়ে আনন্দিত কর। রেদওয়ান ফেরেশতা বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ, আল্লাহ পাক বলেছেন, আপনার উম্মতগণ অন্যান্য পয়গাম্বরের উম্মতের পূর্বে বেহেশতে প্রবেশ করবে। বেহেশত পরম সুন্দর চির সুখময় স্থান। ইহা নানান প্রকার ফুলে ফলে অতুলনীয়। প্রাসাদসমূহের দ্বারা সুশোভিত। এতে অসংখ্য সুমিষ্ট, সুশীতল, সুগন্ধিযুক্ত শরবতের ঝরনা ও নদী প্রবাহিত আছে। ইহা এত সুন্দর যে, মানুষ কখনও তা কল্পনাও করতে পারে না। আল্লাহ পাক তার নেককার মুমিন বান্দাদের ইবাদতের পুরস্কার স্বরূপ এতে স্থান দিবেন। বেহেশতবাসী পুরুষগণ ৩২ বৎসরের যুবক আর মহিলাগণ ১৬ বৎসরের যুবতী হবে। বেহেশতবাসীদের বয়স যত বাড়তে থাকবে, তাদের শক্তি ও সৌন্দর্য ততই বৃদ্ধি পেতে থাকবে। তাদের কোন প্রকার দুঃখ-কষ্ট, অভাব-অভিযোগ, চিন্তা-ভাবনা থাকবে না। পায়খানা প্রস্রাবের প্রয়োজন হবে না। যে কোন ফল আহার করার ইচ্ছা করা মাত্রই ফলের গাছ ঝুকে মুখের কাছে আসবে এবং ফলগুলো বোট হতে আপনা আপনি ছুটে মুখে যাবে। একথা বলে রেদওয়ান ফেরেশতা বিশ্বনবীর হাত ধরে জান্নাতুল ফেরদাউস বেহেশতের বাগানে ভ্রমণ করতে বের হলেন। তিনি গিয়ে দেখলেন এর মাটি মেশক আম্বরের। চারদিকের দেওয়াল খাঁটি স্বর্ণের। এর ভেতরে বহু মহল আছে এবং প্রতিটি মহলে হাজার হাজার মনি মুক্তার তৈরি তাবু আছে। প্রতিটি তাবুর ভেতরে খাট পালং বিছানা, তোষক, টেবিল-চেয়ার,  পর্দা  এমনকি ঝুলান অবস্থায় রেশমি সুতার টেবিল ক্লথ পর্যন্ত দেখা যাচ্ছিল। সাজানো বিছানার উপর সুন্দর সুন্দর হুর গেলমান বসে রয়েছে। কোন কোন প্রাসাদের নিচ দিয়ে চারটি নহর প্রবাহিত হচ্ছে, তার কোনটি দুধের, কোনটি মধুর, কোনটি শরবতের, কোনটি পরিষ্কার পানির। বিশ্বনবী এ সকল শোভা সৌন্দর্য দেখে চিন্তা করতেছিলেন, যারা এই বেহেশতের অধিবাসী হবে তারা বড় ভাগ্যবান। এমনি সময় আল্লাহর বাণী ভেসে আসল, হে আমার পেয়ারা হাবীব আপনার উম্মতের জন্যই আমি এসব নেয়ামত সৃষ্টি করেছি। আপনার উম্মতের মধ্যে যারা আমার আদেশ-নিষেধ মেনে চলবে ও আপনার অনুসারী হবে, তাদের চির বাসস্থান হবে জান্নাতুল ফেরদাউস। এই সংবাদ শুনা মাত্রই নবীজী অত্যন্ত আনন্দিত হয়ে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে সামনে অগ্রসর হয়ে কিসের যেন খস্ খস্ আওয়াজ শুনতে পেলেন। জিজ্ঞাসা করলেন, হে ভাই জিবরাইল! ইহা কিসের আওয়াজ? জিবরাইল (আঃ) বললেন, ইহা কলমের আওয়াজ। তকদিরের মাঝে কলম মানুষের ভাল-মন্দ লেখতেছে। তিনি তকদিরের মাঠে গিয়ে দেখলেন, বিরাট বড় একটা কলম প্রত্যেক মানুষের ভাল-মন্দ লিপিবদ্ধ করছে। ইহা দেখার পর তিনি বোরাকে আরোহণ করে সীমান্ত এলাকায় সিদরাতুল মুনতাহায় চলে গেলেন। শেষ সীমানায় বরই গাছ দেখলেন। এই গাছের এক একটা পাতা হাতীর কানের মত এবং একটি বরই বড় বড় মটকার মত, কোটি কোটি ফেরেশতারা এই গাছের পাতায় পাতায় বসে আল্লাহ পাকের যিকির করছে। আল্লাহ পাকের নূরের জগত আর আসমানের জগতের মাঝে বড়ই গাছ দ্বারা সীমারেখা নির্ধারণ করেছে। এজন্য মানুষ মারা গেলে গরম পানিতে বড়ই পাতা সিদ্ধ করে গোসল দেয়া হয়। হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, বাড়ির দক্ষিণ পাশে বড়ই গাছ লাগান স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। যাতে রড়ই গাছের হাওয়া গায়ে লাগে।

এই বড়ই গাছের গোড়া হতে চারটি নদী প্রবাহিত হচ্ছে। জিবরাইল (আঃ) বলেন, বাতেনী নদী দুটি এই গাছের নিচ হতে প্রবাহিত হয়ে বেহেশতে গিয়ে পৌছেছে। অপর দুটি দুনিয়াতে এসে ফোরাত নদী ও নীল নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে।

বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বড়ই গাছের গোড়া হতে জাহেরী নদীর দুটির তীর ধরে সামনে অগ্রসর হয়ে মধুময় সুঘ্রাণ অনুভব করলেন। কিছুদূর চলার পর একটি প্রকাণ্ড মনি মুক্তা খচিত গেট দেখলেন। গেটের পরেই বিরাট একটি দরিয়া, দরিয়ার চার পাড়ে অসংখ্য টেবিলের উপর লক্ষ লক্ষ ইয়াকুত জমরুদের তৈরি গ্লাস সাজানো রয়েছে। গেটের উপর লেখা রয়েছে (কাওছার) জিবরাইল (আঃ) বললেন, হুযুর এই কাওছার আল্লাহ পাক আপনাকে ছেলে সন্তানের পরিবর্তে দান করেছেন।

কঠিন হাশরের মাঠে যখন সূর্য ১২টি মুখ দিয়ে মাথার সোয়াহাত উপর হতে আগুনের তেজ ছেড়ে দিবে। তখন জমিন পুড়ে তামার মত লাল হয়ে যাবে। মানুষ পাও রাখতে পারবে না, জমিনে পাও রাখবে, আর উঠাবে অমনি সঙ্গে সঙ্গে পায়ের নিচের গোশত সব ঝরে ঝরে পড়বে। ঐদিকে সূর্যের তেজে মানুষের মাথার মগজ টগবগ করে ফুটতে থাকবে, চারদিকে বুক ফাঁটা চিৎকার পানি পানি। হঠাৎ ফুটবলের মত মাথা ফুলে উঠে টাস্ টাস্ করে ফেটে যাবে আর নাক মুখ দিয়ে মগজ গলে বেয়ে বেয়ে পড়তে থাকবে। তবুও এই বিভিষীকাময় মাঠে শুধু মানুষের মুখে শুনা যাবে হায় পানি। হায় পানি। কিন্তু পানি কোথায়? এমন সময় আল্লাহ পাকের হুকুমে আপনি আপনার খাছ উম্মতদেরকে হাউজে কাওছার হতে পানি পান করাবেন। আপনার হাতের এক গ্লাস পানি পান করলে পঞ্চাশ হাজার বৎসরের মধ্যে হাশরের ময়দানে আর পানির পিপাসা লাগবে না। কিন্তু তিন ব্যক্তিকে হাউজে কাওছারের পানি দেয়া হবে না-

১. বে-নামাযী

২. বে-রোযাদার

৩. নবীর তরীকা বর্জনকারী

(৬ষ্ঠ পর্ব আসিতেছে ইনশাআল্লাহ)

No comments

Powered by Blogger.