Thursday, January 30, 2025

মেরাজের বয়ান ৯ম/শেষ পর্ব:



মেরাজের বয়ান ৯ম/শেষ পর্ব:

সালাতুন ইয়া রাসুলুল্লাহ আলাইকুম 
সালাতুন ইয়া হাবীবাল্লাহ আলাইকুম। 
কালিমা তাইয়্যিবা জান্নাতের ফুল, 
সে ফুলের নাম দিয়েছে মুহাম্মাদ রাসুল (সা:)
সালাতুন ইয়া রাসুলুল্লাহ আলাইকুম 
সালাতুন ইয়া হাবীবাল্লাহ আলাইকুম। 
ইচ্ছা করলে নবীজী থাকতে পারতেন আরশে,
উম্মতের মায়ায় নবীজী মদিনায় শুইয়াছে।
সালাতুন ইয়া রাসুলুল্লাহ আলাইকুম 
সালাতুন ইয়া হাবীবাল্লাহ আলাইকুম। 

الصَّلَوةُ مِعْرَاجُ الْمُؤْمِنِينَ

উচ্চারণ: আসসালাতু মেরাজুল মুমিনিন।

নবী আমার ডেকে বলেন, সাহাবীরারে! ঈমানদারেরারে! ও মুসলমানেরা গো! তোমাদের মেরাজ হল নামায। রজবের চাঁদে উম্মতের নাজাতের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামায রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিয়ে আসলেন। আপনারা পারবেন এই ওয়াদা দিতে? যতদিন দুনিয়াতে বেঁচে থাকব, শরীয়তের উজর ছাড়া আর কোন ওয়াক্ত নামায জীবনে ইচ্ছা করে ছাড়ব না। আল্লাহ পাক পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের উসিলা করে আমাদের কবুল করুক। বলেন আমিন।

বোনেরা আমার! আপনার মৃত্যুর কি গ্যারান্টি আছে আপনার কাছে? আজ রাত্রে যদি আপনার মউত এসে যায়, কাল এমন সময় আপনি কবরের বাসিন্দা হয়ে যাবেন। ঐ মসজিদের কোনা থেকে আপনার দরজায় খাট চলে আসবে। আজরাইল (আঃ) চলে আসলে ৫০ হাজার কোটি টাকা ঘুষ দিলেও ফিরাতে পারবেন না। তাই বলি (জিন্দিগিও, জিন্দিগিও, জিন্দিগি, জিন্দিগি থাকতে কর বন্দেগী) ফজরের নামাযের সময় মুয়াজ্জিন যখন বলতে থাকে,

الصَّلَوةُ خَيْرٌ مِنَ النَّوْمِ.

উচ্চারণ: আসসালাতু খাইরুম মিনান নাউম।

এর অর্থ হলো, উঠো মুমিন মুসলমানো ঘুম হতে নামায ভাল। যাক অতঃপর আমার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাথী জিবরাইল (আঃ)-সহ বোরাকে আরোহণ করে মুহুর্তের মধ্যে জমিনে বায়তুল মোকাদ্দাসের ঠিক সেই স্থানে অবতরণ করে বোরাক হাকিয়ে মক্কার পথে ছুটে চলছেন। পথের মধ্যে বহু ঘটনা ঘটে ছিল। রাওহা নামক স্থানে মক্কার এক দল বণিকের তাবুতে প্রবেশ করে এক গ্লাস পানি পান করে বেরিয়ে আসলেন। মক্কার নিকট তনঈম নামক স্থানে আরেক দল বণিকের উট হারিয়ে যাওয়ার ক্রন্দনের আওয়াজ শুনে, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে নেমে তাদের কান্নার কারণ জেনে, তাদের হারিয়ে যাওয়া উটের সন্ধান করে দিলেন। এর পর মক্কায় পৌছে তিনি বোরাক থেকে অবতরণ করলেন। জিবরাইল (আঃ) স্বর্গীয় বোরাক নিয়ে বিদায় হয়ে গেলেন। হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যম যম কুয়ার সামনে, যেখানে মেরাজে যাওয়ার সময় ওযু করেছিলেন, সেখানে ওযুর পানি তখনও গড়িয়ে যাচ্ছে দেখে, উম্মে হানীর ঘরে প্রবেশ করে দেখেন, মেরাজে যাওয়ার সময় ঘর থেকে বের হতে দরজা খুলতে যে দরজার পাল্লা নড়ে ছিল, এখনও তা নড়তেছে। বিছানায় গিয়ে দেখেন, বিছানা এখনও গরম রয়েছে। তিনি চমকে গেলেন। তার মনে হলো মেরাজের পুরা ২৭ বছরের সফরটাই যেন, দু এক সেকেন্ডের ব্যাপার ছিল। উম্মে হানী জাগ্রত হয়ে নবীজীকে চিন্তাযুক্ত দেখে বললেন, আপনার কি হয়েছে? আপনি কি ভাবছেন? এমন সময হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মে হানীর কাছে মেরাজের সব ঘটনা বর্ণনা করলেন। উম্মে হানী বললেন, হুযুর আপনি একথা কারো নিকট বলবেন না। কুরাইশ কাফেরগণ কেউ ই বিশ্বাস করবে না। যে আপনি এক রাত্রিতে মক্কা হতে বায়তুল মোকাদ্দাস হয়ে সাত আসমান পার হয়ে লৌহ মাহফুজ, বেহেশত, দোযখ, ভ্রমণ করে আল্লাহর সাথে দীদার করে আসছেন। ইহা শুনে সবাই আপনাকে ঠাট্টা করবে। উম্মে হানীর এই যুক্তি পূর্ণ কথাগুলি যুক্তি সঙ্গত মনে করলেন। তথাপি হক কথা গোপন রাখতে তিনি রাজি হলেন না। তিনি বললেন, আল্লাহ পাক আমাকে যা আদেশ করেছেন ও আমি যা স্বচক্ষে দেখেছি, তা সবাইকে অবশ্যই জানাতে হবে। মানুষের ঠাট্টা বিদ্রূপে আমার কিছুই আসে যায়না। আমার কর্তব্য ও দায়িত্ব আমি পালন করে যাবই। অতঃপর তিনি খানায়ে কাবায় ফজরের নামায আদায় করে সাহাবীদেরকে মেরাজের ঘটনা শুনাতে লাগলেন। সকলে উহা শুনে যেন তাদের সহসা বিশ্বাস করতে ইচ্ছা হতে ছিলনা অথচ তারা সকলেই জানেন যে, হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জীবনে কোন দিন এক বিন্দু মিথ্যা কথা বলেন নাই। আবু লাহাব, আবু জাহেল এই ঘটনা শুনে হেসে উড়িয়ে দিল। অন্যান্য সাহাবাগণ ক্রমে ক্রমে সকলেই বিশ্বাস করল। যারা মেরাজের ঘটনা শুনে উহাকে সত্য বলে বিশ্বাস করবে, তারা আবু বকর রাঃ এর দলভুক্ত হবে। আর যারা উহাকে মিথ্যা জানবে, তারা আবু জাহেলের আবু লাহাবের দলভুক্ত হবে।

মেরাজের ঘটনা শুনে এক ইহুদি উহাকে মিথ্যা মনে করে ঠাট্টা করতে করতে বাজারে চলে গেল। সে বাজার হতে বড় একটি মাছ কিনে বাড়ি নিয়ে তার স্ত্রীকে বলল, তুমি মাছটা তাড়াতাড়ি রান্না কর। আমি নদীতে গোসল করতে যাই, এসে তোমাকে একটা গল্প শুনাব। ইহুদির স্ত্রী তখন চরকায় সুতা কাটতে ছিল। সে মনে করল, হাতে যে সুতাটুকু আছে উহা শেষ করে রান্না করতে যাব। ইহুদি নদীর তীরে গিয়ে শরীরের জামা খুলে রেখে নদীতে গোসল করতে নামল। একটি ডুব দিয়ে উঠে নিজের শরীরের প্রতি নজর করে দেখল সে মেয়েলোক হয়ে গেছে। চিন্তিত হয়ে নদীর কিনারায় একটি ঝোপের আড়ালে চুপ করে বসে নিজের দুভার্য্যের কথা চিন্তা করতে লাগল। এক ব্যক্তি ঘোড়ায় আরোহণ করে ঐ স্থান দিয়ে যাবার সময় তাকে জোর করে ঘোড়ায় তুলে নিয়ে গেল। বাড়িতে গিয়ে তাকে বিবাহ করল। সাত বৎসর স্বামী স্ত্রী সংসার করল। তিনটি সন্তান প্রসব করল। একদিন সে কয়েকজন মেয়ে লোকের সাথে নদীতে গোসল করতে গেল। সে নদীতে নেমে ডুব দিয়ে উঠে দেখল সে পুরুষে পরিণত হয়ে গেছে। তখন তার সাত বৎসরের পূর্বের কথা মনে হল। সে আরও বিস্মিত হল যে, সাত বৎসর পূর্বে নদীর ঘাটে যে জামা খুলে রেখেছিল, সেই জামা এখনও সেখানেই রয়েছে। সে তা পরে বাড়িতে গিয়ে দেখল, তার স্ত্রী তখনও বসে চরকায় সুতা কাটতেছে এবং মাছটি তখনও মাটিতে পড়ে নড়াচড়া করতেছে। মাছটি তখনও মরে নাই। এই আশ্চার্য ঘটনা গোপন রেখে সে স্ত্রীকে ধমক দিয়ে বলল, এখনও রান্না কর নাই কেন? স্ত্রী লোকটি বলল, তুমি যে এত তাড়াতাড়ি গোসল করে আসবে, তাতো আমি ধারণাও করতে পারি নাই। আমার হাতে যে সুতাটুকু ছিল তা শেষ করে উঠব বলে মনে করতেছি, এর মধ্যে তুমি কিরুপে গোসল করে আসলে? এই কথা শুনে ইহুদী আরও বিস্মিত হয়ে ভাবতে লাগল আমি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মেরাজকে বিশ্বাস না করে হেসে উড়িয়ে দিয়েছিলাম, এ জন্যই আল্লাহ পাক আমাকে উহারই প্রতিফল দেখালেন। এখন আমার এ ঘটনার কথা লোকের নিকট বললে কেহই বিশ্বাস করবে না বরং হেসে উড়িয়ে দিবে। এখন বুঝতে পারলাম, আল্লাহর অসাধ্য কিছুই নাই। মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সত্যই আল্লাহর নবী। ইহুদী তখনই তার স্ত্রীকে নিয়ে হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট দৌড়ে গিয়ে সাহাবীদের সামনে আরো বহু কাফেরদের সামনে বসে সব ঘটনা বর্ণনা করল। আর বলল, হুযুর গো আর দেরী নাই আপনি সত্য নবী। মুহুর্তের ভিতরে আমাকে পড়িয়ে দেন,

لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ مُحَمَّدٌ رَسُولُ اللَّهِ

উচ্চারণ: লা ইলাহ ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ

ইহুদী স্বপরিবারে ইসলাম গ্রহণ করল। ইহা শুনে বহু কাফের এবং বহু ইহুদী কালেমা পাঠ করে মুসলমান হয়ে গেল এবং ইসলামের সুশীতল ছায়ায় আশ্রয় গ্রহণ করল।

(সমাপ্ত)

No comments:

Post a Comment