বেনামাজির শাস্তির বয়ান: (২য় এবং শেষ পর্ব)
📖বেনামাজির শাস্তির বয়ান: (২য় এবং শেষ পর্ব)
হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ফরজ নামাজ তরককারীর উপর হইতে আল্লাহ্ পাকের জিম্মা ও দায়িত্ব উঠিয়া যায়। (হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেন, যে ব্যক্তি নামাজ কাজা করে, যদিও সে পরে তাহা পড়িয়া লয়, তবুও সময় মত না পড়ার কারণে এক হোকবা পরিমাণ সময়কাল জলন্ত আগুনে জ্বলতে হবে। আশি বৎসরে এক হোকবা। নামাজে অবহেলাকারী শয়তানের ন্যায় অভিশপ্ত। এক আল্লাহর ওলি শয়তানকে জিজ্ঞাসা করেছিল যে, তোমার মত অভিশপ্ত কাহারা, শয়তান বলিল, যে নামাজে অবহেলা করে এবং সত্য-মিথ্যার পরোয়া না করে কসম খাইতে থাকে, সে আমার মত শয়তান।
- হুজুর সাল্লাল্লাহু মালাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, বেনামাযীর জীবন ও জীবিকার বরকত কাড়িয়া নেওয়া হয়। বেনামাজির চেহারা হইতে নেকের নূর 'মুছিয়া ফেলা হয়। নেককারদের দোয়ায় বেনামাযীর কোন হক বা অংশ থাকে না। বেনামাযীর কবর তন্দুরের আগুনের মত হইবে, ঐ আগুনের ঢেউয়ের শিখার উপর দিন রাত্র উলট পালট হইয়া জ্বলিতে থাকিবে এবং ঐ কবরে 'শুজায়ে আকরা' নামে একটি ভয়ঙ্কর বিষধর অজগর সাপ পাঠানো হইবে। উহার চক্ষু দুইটি আগুনের, নখগুলি লোহার তৈরি, এক একটি নখের এক প্রান্ত হইতে অন্য প্রান্তে যাইতে একদিন সময় লাগে।
অজগরটি বজ্রের ন্যায় কঠিন আওয়াজে বলবে, আমি টাক পড়া অজগর সর্প, আমাকে আমার প্রভু আদেশ করেছেন, ফজরের নামাজ না পড়ার কারণে সূর্য উদয়ের পর পর্যন্ত তোকে দংশন করিতে। জোহরের নামাজ না পড়ার কারণে আছর পর্যন্ত, আছরের নামায না পড়ার কারণে সূর্যাস্ত পর্যন্ত, মাগরিবের নামাজ না পড়ার কারণে এশা পর্যন্ত এবং এশার নামাজ না পড়ার কারণে ফজর পর্যন্ত তোকে দংশন করিতেই থাকিব। এই রকম বিকট আওয়াজ করিয়া অজগরটি যখনই বেনামাযীকে দংশন করিবে তখন প্রতি দংশনের আঘাতে বেনামাযী সত্তর গজ মাটির নিচে ডাবিয়া যাইবে। আবার অজগর সাপ নখ দিয়া বেনামাযীকে টানিয়া লইবে। এই রূপে কিয়ামত পর্যন্ত বেনামাযী কবরের আজাব ভোগ করিতে থাকিবে।
• হাশরের মাঠে অত্যন্ত কড়াকড়ির সহিত বেনামাযীর হিসাব লওয়া হইবে এবং আল্লাহ পাকের গজবের কহরের শাস্তি তাহার উপর নাযিল করা হইবে এবং অত্যন্ত অপমানের সাথে লাঞ্ছিতভাবে বেনামাজীকে জাহান্নামে নিক্ষেপ একরা হইবে। বেনামাযীর কপালে তিনটি লাইন লেখা থাকিবে, প্রথম লাইনে লেখা থাকিবে “হে আল্লাহর হক নষ্টকারী"। দ্বিতীয় লাইনে লেখা থাকিবে, -"হে আল্লাহর গজবের পাত্র"! তৃতীয় লাইনে লেখা থাকিবে, "হে দুনিয়াতে যেভাবে তুমি আল্লাহর হক নষ্ট করিয়াছ আজ তেমনি তুমি আল্লাহর রহমত হইতে বঞ্চিত"।
✓ আল্লাহ পাক বলেন, আমি কোন কোন জায়গায় আজাব নাযিল করার ইচ্ছা করি, কিন্তু যখন সেখানে এমন লোকদেরকে দেখি যাহারা একত্র হয়ে আমার গুণগাণ করে, আমাকে স্মরণ করে এবং আমার মুহাব্বতে একে অন্যকে ভালোবাসে ও শেষ রাত্রে উঠে আমার নিকট গোনাহ মাফের জন্য কান্দাকাটি করে তখন আমি সেই আজাব নাজিল করি না, স্থগিত রাখিয়া দেই। এইজন্য বলি, বোনেরা আমার! যতদিনই আপনি বাঁচিয়া থাকুন না কেন একদিন নিশ্চয়ই আপনার ইহকাল ত্যাগ করিতেই হইবে এবং যাহাকে ইচ্ছা ভালবাসিতে পারেন, কিন্তু একদিন তাহার সহিত আপনার বিচ্ছেদ হইবেই এবং ভাল মন্দ যাহাই আমল করেন না কেন একদিন উহার প্রতিফল অবশ্যই পাইবেন। পরহেজগার সৎ লোকের কাছে বসিবেন, আপনাকে সং উপদেশ দিবে, ঐ উছিলায় আপনি ভাগ্যবান হয়ে পার হয়ে যেতে পারবেন। আখিরাতের কাজে সাহায্যকারী ছাড়া অন্যের সহিত বন্ধুত্ব করা বোকামী ছাড়া আর কিছুই নয়।
হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ওগো আমার উম্মাতগণ যদি বাঁচতে চাও আলেম হও। যদি আলেম হইতে না পার, তবে আলেমের সঙ্গে সঙ্গে থাকিয়া আলেমের সাগরেদ হও। যদি তাহা না পার তবে আলেমের থেকে শুনিয়া শুনিয়া আমল কর। যদি তাহাও না পার, তবে আলেমকে মুহাব্বত কর, পঞ্চম ব্যক্তি হইওনা, হালাক হয়ে যাইবা, জাহান্নামে যাইবা।
যাহারা। আলেমের সাথী হয় নাই শয়তান তাদের সাথী হয়ে থাকিবে। শয়তান দুই প্রকার: জ্বিন শয়তান, আর মানুষ শয়তান। আল্লাহর নামের জিকির করার সাথে সাথে জ্বিন শয়তান ভাগিয়া যায়, কিন্তু মানুষ শয়তান ভাগে না। ঐ মানুষ শয়তানের কাছে কখনো বসিও না তোমার ঈমানকে লুটিয়া নিবে। মাওলানা কেরামত আলী সাহেব (রহঃ) বলেন, বদকার বন্ধু হইতে ভাগিয়া যাও। বদকার বন্ধু কাল সাপের চেয়েও খারাপ। কাল সাপ শুধু তোমার প্রাণ নষ্ট করবে, আর বদকার বন্ধু তোমার জান, ঈমান ও আখিরাত বরবাদ করবে।শেখ সাদী (রহঃ) বলেন, "কয়লাওয়ালার সাথে থাকিলে কিছু কালি লাগবেই, আর আতর ওয়ালার সাথে থাকিলে কিছু আতরের ঘ্রাণ আসবেই।" মৃত্যুর সময় শয়তানকে যখন প্রস্রাব হাতে নিয়া বাম পার্শ্বে দাঁড়ানো দেখিবে, তখন দুনিয়ার দুষ্ট বন্ধুকে ডান পাশে দেখিয়া জিজ্ঞাসা করিবে, দোস্ত এই পেয়ালার পানি খাব কিনা? সে বলিবে ইচ্ছা হইলে খাও, তখন দুষ্ট দোস্তের পরামর্শে শয়তানের প্রস্রাব খাইয়া বেঈমান হইয়া ইহকাল ত্যাগ করিতে হইবে। আজাব দেখিয়া দুঃখে কলিজা ফাটাইলেও কোন কাজ হইবে না। দুনিয়াতে কোন নেককার ঈমানদারের সাথে দুস্তি না থাকিলে ঐ বিপদের সময় কোন ঈমানদারকে ডান পার্শ্বে পাইবে না।
প্রত্যেক মানুষের উপর ৫টি মামলা দায়ের হয়ে আছে। মামলাগুলি হলো-(১) মওত (২) কবর (৩) হাশর (৪) মীযান (৫) পুলছেরাত। দুনিয়ার মামলার জন্য যেমন দুনিয়ার উকিল মোক্তারের পিছে দৌড়ান, ঐরূপ আখিরাতের উকিল মোক্তার হইবে আমলদার আলেম বুজুর্গগণ। তাই তাহাদের পিছনে দৌড়ানো লাগবে। একমাত্র তারাই হাশরের ময়দানে শাফায়াত করিতে পারিবেন। যতবড় রাজা বাদশাহ দুনিয়াতে থাকুক না কেন তাহারা কাহাকেও শাফায়াত করিতে পারিবেন না। বাদশাহর বাদশাহী তখন ও মালদারের মাল দৌলত ছাড়িয়া কবরে একা চলিয়া যাইতে হইবে সংগে -কিছুই নিতে পারিবে না। আল্লাহ পাকের ওলী, আওলিয়াগণ বহু মালামাল সঙ্গে নিয়া যাইবেন এবং আখিরাতে বাদশাহী করিবেন।
• বোনেরা আমার! দুনিয়ার মা, বাবা যাহা কিছু মাল-দৌলত, টাকা পয়সা ধন সম্পদ দিয়াছেন, আপনি দুনিয়া ছাড়িয়া যাইবার সময় কোন একটি মাল সঙ্গে নিয়া যাইতে পারিবেন না। আপনার খালি হাতেই দুনিয়া ছাড়িয়া যাইতে হইবে, আর আপনার আখিরাতের মুরুব্বি ওস্তাদ যাহা দিবেন ইহাই হইবে আখিরাতের সম্বল। আল্লাহ পাক কুরআন শরীফের মধ্যে বলেন,
كُونُوا مَعَ الصَّادِقِينَ ٧٠٩
"তোমরা সত্যবাদী মু'মিনগণের সাথী হও।” (তাওবা, আয়াত: ১১৯)
যেখানেই খাঁটি আলেম পাও, তাহাদের সঙ্গে যাতায়াত, চলাফিরা, কথাবার্তা এতবেশি কর যেন হাশরের মাঠে দেখামাত্রই তিনি তোমাকে চিনিতে পারেন। আল্লাহ পাক আরো বলেন,
✓ وَابْتَعُوا إِلَيْهِ الْوَسِيلَةَ
(য়াবতাগু ইলাইহিল ওয়া-ছিলাতা)
"আমাকে পাইবার জন্য ওছিলা ধর।"
(সূরা মায়েদা, আয়াত: ৩৫)
যেই আলেমের মধ্যে এলমে শরীয়ত ও এলমে মারেফত দুই এলেম আছে, সেই আলেমকেই নবীর ওয়ারেছের মধ্যে ধরা হইবে।
No comments