বেনামাজীর শাস্তির বয়ান: (১নং পর্ব)

 



📖 বেনামাজীর শাস্তির বয়ান: (১নং পর্ব)

• নামাজ ত্যাগ করিলে, রীতিমত আদায় না করিলে তাহার উপরে ১৫ টি আজাব নাজিল হইবে: দুনিয়াতে ৬টি, মৃত্যুর সময় ৩ টি, কবরের মধ্যে ৩ টি, হাশরের মাঠে ৩ টি।
• দুনিয়াতে ৬টি আজাব হলো- (১) বেনামাজীর হায়াত কমিয়া যাইবে। (২) বেনামাজীর জীবনে বরকত হইবে না। (৩) বেনামাজীর চেহারার সৌন্দর্য থাকিবে না। (৪) বেনামাজীর কোন দোয়া কবুল হইবে না। (৫) 'বেনামাজীর সব নেকী বরবাদ হইবে, ভাল কাজের ছাওয়াব উঠাইয়া নেওয়া হইবে। (৬) বেনামাজীর নিকট হইতে সব রহমতের ফেরেশতা ভাগিয়া যাইবে এবং এক সময় ইসলাম হইতে খারিজ হইয়া যাইবে।
-মৃত্যুর সময় ৩টি আজাব হলো- (১) বেনামাজী মরিবার সময় অপমানিত, লাঞ্ছিত ও শিদ্দাত (অতিকষ্ট) দিয়া। জান বাহির করা হইবে। (২) • বেনামাজী ক্ষুধার্ত অবস্থায় মরিবে। (৩) বেনামাজীর মৃত্যুর সময় এত - পিপাসা হবে যে, মনে চাইবে ৭ দরিয়ার পানিও যদি মুখে ঢালিয়া দেয়, তবুও • বুঝি পিপাসা যাইবে না।
কবরের মধ্যে তিনটি আজাব হলো- (১) বেনামাজীর কবর চাপিয়া আসিয়া তাহাকে পিষিতে থাকিবে। ইহাতে তাহার এক পাজরের হাঁড় ভাঙ্গিয়া অপর পাজরের হাঁড়ের সহিত মিশিয়া যাইবে। (২) বেনামাজীর কবরে দাউ দাউ করিয়া আগুন জ্বলিবে। (৩) বেনামাজীর কবরে বিরাট বিরাট সাপ আসিয়া ভরিয়া যাইবে এবং এক ফেরেশতা আসিয়া জোরে জোরে গুর্জ মারিতে থাকিবে।
১ হাশরের মাঠে তিনটি আজাব হলো- (১) বেনামাজিকে আল্লাহ পাক
গজবের সহিত ডাকিবেন এবং বিরাট এক সাপ আসিয়া তাহাকে খোঁজ করিতে থাকিবে। (২) ত্রিশ হাজার বৎসরের পুলছেরাতের রাস্তা হিরার চেয়ে ধারাল, চুলের চেয়ে চিকন, অমাবশ্যার রাত্রের চেয়ে অন্ধকার বেনামাজী যখন সেই পুলের উপরে পা রাখিবে সংগে সংগে পা কাটিয়া টুকরা টুকরা -হইয়া দোজখে পড়িয়া যাইবে। (৩) বেনামাজীর জন্য ওয়াইল নামক দোজখ ঠিক করিয়া রাখিয়াছেন, ফেরেশতারা কেয়ামতের দিন দোজখে ফেলিয়া দিন ৭০ গজ জিঞ্জিরে বান্ধিয়া বহুত আজাব দিবেন।
• দুনিয়ার বেনামাজী বাদশাহকে বলা হবে কেন নামাজ পড় নাই। সে বলবে ব্যস্ততার জন্য সময় পাই নাই। বলা হবে, সোলায়মান (আঃ) সারা বিশ্বের রাজত্ব পাইয়াও কোন দিন নামাজ ত্যাগ করে নি, তুমি মিথ্যা ওজর করছ। হে ফেরেশতারা! ওকে জাহান্নামে নিয়া যাও। রোগী বলবে, রোগের জ্বালায় নামাজ পড়তে পারি নাই। বলা হবে, আইয়ুব (আঃ)কে ১৮ বৎসর পোকায় খেয়েছে তবুও সে নামাজ ছাড়ে নি। মিথ্যাবাদীকে জাহান্নামে ■ ফালাও। আর একজনে বলবে, সন্তান অনেক ছিল তাদের সেবায় ব্যস্ত ছিলাম, বলা হবে ইয়াকুব (আঃ) এর ছেলে মেয়ে তোমার চেয়েও বেশী ছিল। ইউছুফের জন্য কাঁদতে কাঁদতে অন্ধ হয়ে গিয়েছিল, তবু নামাজ ছাড়ে নি। মিথ্যাবাদীকে জাহান্নামে নাও।
✔ বেনামাজী স্ত্রী লোককে হাজির করা হবে। সে বলবে স্বামীর কাজের চাপে তাহার ভয়ে নামাজ পড়তে পারি নাই। বলা হবে ফেরাউনের বিবি আছিয়ার স্বামী বড় জালিম না তোমার স্বামী বড় জালিম? জালিমের বিবি হয়েও আছিয়া নামাজ ছাড়ে নি। তুমি মিথ্যা ওজর করছ, হে ফেরেশতারা ওকে জাহান্নামে নিক্ষেপ কর।
- আমার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, বেনামাজীর দুই হাত জিঞ্জির দ্বারা বান্ধা হইবে। অতঃপর ফেরেশতাগণ তাহার মুখমণ্ডলে ও পৃষ্ঠে আঘাত মারিতে থাকিবে। তখন বেহেশত তাহাকে ডাকিয়া বলিবে, ওহে আল্লাহর শত্রু! আমার সহিত তোমার কোন সম্পর্ক নাই। আমিও তোমার নই এবং তুমিও আমার নও, তখন দোজখ তাহাকে ডাকিয়া বলিবে। আস! আস! আমার নিকটে আস! আমি তোমার তুমিও আমার।
• হাদীসে আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, জাহান্নামে "লমলম” নামে একটি জায়গা আছে দেখিতে উটের গর্দানের মত দেখায় এবং এক মাসের পথের ন্যায় দীর্ঘ, ভয়ঙ্কর ভয়ঙ্কর সাপ দ্বারা ঐ জায়গাটা পরিপূর্ণ, সেখানে বেনামাজীদেরকে ফালাইয়া দেওয়া হইবে। লক্ষ লক্ষ ভয়ঙ্কর সাপগুলো বেনামাজীদেরকে পেঁচ দিয়া ধরিয়া মনের আনন্দে দংশন করিতে থাকিবে।
• বোনেরা আমার! আল্লাহ পাকের কাছে পানাহ চাও আর পিছনের নামাজ কাজা কর। অন্য এক হাদীসে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, দোজখের মধ্যে 'জুব্বুল হুযুন' নামে বিরাট আকারের একটি ময়দান আছে, উহা শুধু বিচ্ছু দ্বারা পরিপূর্ণ। এক একটি বিচ্ছু খচ্চরের মত উঁচু ও মোটা। বেনামাজীদেরকে দংশন করার জন্যই উহাদিগকে সৃষ্টি করা হইয়াছে।
ফজরের নামাজ তরককারীকে ফেরেশতাগণ বলেন, হে দুষ্কৃতিকারী! জোহরের নামাজ তরককারীকে বলেন, হে ক্ষতিগ্রস্ত! আছরের নামাজ তরককারীকে বলেন, হে মহাপাপী! মাগরিবের নামাজ তরককারীকে বলেন, হে অকৃতজ্ঞ! এবং এশার নামাজ তরককারীকে বলেন, হে আল্লাহ্ পাকের হক নষ্টকারী। এই সব বলিয়া ফেরেশতারা লানত করিতে থাকেন।
✔ আল্লামা শারানী (রহঃ) বলেন, যে সকল এলাকার লোক নামাজী নহে সকল প্রকার বালা মুসিবত সেখানে নাযিল হইয়া থাকে এবং ঐ সকল জায়গায় ভূমিকম্প, বজ্রপাত এবং বাঁড়ী ঘর ধসিয়া পড়িতে পারে। সেখানকার কেহ যেন এরূপ ধারণা না করে যে, আমি তো নামাজি অপরে নামাজ পড়ুক বা না পড়ুক তাহাতে আমার কি? হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যখন অন্যায় ও পাপাচার ছড়াইয়া পড়িবে, তখন নেককার লোকদের কর্তব্য অন্য সব লোকদিগকে সাধ্যানুযায়ী অন্যায় কাজ হইতে বিরত রাখা ও সৎ কাজের আদেশ করা। কেননা, বালা-মুসিবত যখন নাযিল হয়, তখন ব্যাপকভাবেই নাযিল হয়।
• হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন যে, কোন ব্যক্তি জানিয়া শুনিয়া কোন এক ওয়াক্ত নামাজ ছাড়িয়া দেয়, তাহার নাম জাহান্নামের দরওয়াজায় লিখিয়া রাখা হয়। জিব্রাইল (আঃ) মুছা (আঃ)-এর নিকট অহী নিয়া আসিয়া বলিলেন, যে ব্যক্তি জানিয়া শুনিয়া ইচ্ছা করিয়া নামাজ পড়ে না, ঐ ব্যভিচারিণী ও অন্যায়ভাবে আপন জারজ সন্তান হত্যাকারিণী মহিলার চেয়েও বড় পাপী ও নিকৃষ্ট।
(২য় পর্ব আসিতেছে ইনশাআল্লাহ)

No comments

Powered by Blogger.