যিলহজ মাসের প্রথম দশদিনের ফযীলত
যিলহজ মাসের প্রথম দশদিনের ফযীলত
وَالْفَجْرِ وَلَيَالٍ عَشْرٍ “শপথ ফজরের ও শপথ দশরাত্রির।"
এর দ্বারা যিলহজ মাসের প্রথম দশদিনের ফযীলত বুঝিয়েছেন। রাসূলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেন:
"আল্লাহ তাআলার নিকট যিলহজ মাসের প্রথম দশদিনের ইবাদত অপেক্ষা অধিক পছন্দনীয় আর কোন ইবাদত নেই। এর প্রতিদিনের রোযা এক বছরের রমাযানের সমতুল্য। আর প্রত্যেক রাতের ইবাদত লাইলাতুল কদরের ইবাদতের সমতুল্য। বিশেষভাবে ৯ তারিখ আরাফার রোযা। আমি আল্লাহ তাআলার দরবারে আশা রাখি, আরাফার দিবসে রোযা রাখলে তিনি পূর্ববর্তী ও পরবর্তী বছরের গুনাহ মাফ করে দেবেন।"
(سنن الترمذى، الصوم ماجاء في العمل في أيام العشر، ١٥٨/١ رقم : ٧٥٨)
উক্ত আয়াত ও হাদীছের আলোকে আমাদের করণীয় হলো, এ যিলহজ মাসের প্রথম দশদিন যথাসাধ্য নফল রোযা রাখা এবং রাত জেগে ইবাদত-বন্দেগী করা। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে এ মহান মাসের হক অনুযায়ী আমল করার তাওফীক দান করুন। আমীন!
যিকরের নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ বলেন:
وَاذْكُرُوا اللَّهَ فِي أَيَّامٍ مَعْدُودَاتٍ فَمَنْ تَعَجَّلَ فِي يَوْمَيْنِ فَلا إِثْمَ عَلَيْهِ وَمَنْ تَأَخَّرَ فَلَا إِثْمَ عَلَيْهِ لِمَنِ اتَّقَى *
"তোমরা নির্দিষ্ট সংখ্যক দিনগুলিতে আল্লাহর যিকির করবে। যদি কেউ তাড়াতাড়ি করে দুদিনে চলে আসে তবে তার কোনো পাপ নেই, আর যদি কেউ বিলম্ব করে তবে তারও কোনো পাপ নেই, এ তার জন্য যে তাকওয়া অবলম্বন করে।'
এ নির্দেশের ভিত্তিতে হাজীগণ ৯ তারিখে আরাফার মাঠে, ১০ তারিখে মুযদালিফা ও মিনার মাঠে হজ্জের আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে আল্লাহর যিক্র সম্পন্ন করার পর ১১, ১২, ও ১৩ অথবা ১১ ও ১২ই যুলহাজ্জ মিনার প্রান্তরে অবস্থান করে আল্লাহ যিক্র করেন। আর যারা হজ্জে যান না অর্থাৎ সারা বিশ্বের সকল মুসলিম এ আয়াতের নির্দেশ অনুসারে যুলহাজ্জ মাসের ৯ তারিখ আরাফার দিবস থেকে ১৩ তারিখ পর্যন্ত প্রত্যেক সালাতের পরে আল্লাহর যিক্র করেন। আল্লাহর যিক্র অর্থ ইচ্ছামত আল্লার নাম জপ করা নয়। বরং যেখানে যেভাবে যিকর করতে রাসুলুল্লাহ শিক্ষা দিয়েছেন সেভাবে যিকর করা। সুন্নাতের শিক্ষা অনুসারে এ ২৩ ওয়াক্ত সালাতের শেষে "আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ। ওয়া আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার ওয়ালিল্লাহিল হামদ" বাক্য একবার সশব্দে বলতে হবে।

আরও একটি জরুরী বিষয় হচ্ছে, তাকবীরে তাশরীক্ব। তাকবীরে তাশরীকু বলা হয় ঐ তাকবীরকে যা আইয়্যামে তাশরীকু অর্থাৎ, ৯ই যিলহজ ফজর থেকে ১৩ই যিলহজ আছর পর্যন্ত ২৩ ওয়াক্ত ফরয নামায এবং ঈদের নামায ধরলে মোট ২৪ ওয়াক্ত ফরয নামাযের সালাম ফিরানোর পর সাথে সাথে ইমাম, মুক্তাদি, মুকীম, মুসাফির, মুনফারিদ, গ্রামবাসী শহরবাসী সকলের উপর একবার উচুস্বরে-
اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَاللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ وَلِلَّهِ الْحَمْدُ
এই তাকবীর বলা ওয়াজিব। মহিলাদের জন্যও একবার আস্তে, নিচু স্বরে পাঠ করা ওয়াজিব। যদি কেউ কোন ওয়াক্তে ভুলে যায়, তা হলে এর কাযা নেই। তবে এজন্য অনুতপ্ত হবে এবং সামনে না ছুটে সেদিকে সজাগ দৃষ্টি 'রাখবে।
এই তাকবীরে তাশরীকু আল্লাহ'র তিনজন সম্মানিত ও নৈকট্যপ্রাপ্ত নবী, রাসূল ও ফেরেশতার মুখনিঃসৃত বাণী। হযরত ইবরাহীম আ. যখন সজোরে সুতীক্ষ্ণ ছুরি হযরত ইসমা'ঈল আ.-এর গলায় চালানো শুরু করলেন, এমন সময় হযরত জিবরাঈল আ. আসমান থেকে দুম্বা নিয়ে সেখানে হাজির হয়ে এ ভয়াবহ
দৃশ্য দেখে বলে উঠলেন: اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ
হযরত ইবরাহীম আ. যখন আসমানী কুরবানী দেখলেন, তখন তিনি বলে
لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَاللَّهُ أَكْبَرُ :
এদিকে হযরত ইসমা'ঈল আ. যখন ঘটনা উপলব্ধি করতে পারলেন তখন
وَاللَّهُ أَكْبَرُ وَلِلَّهِ الْحَمْدُ :
অর্থাৎ, এর মাধ্যমে আমাদের শিক্ষা দেয়া হলো যে, বিপদে-আপদে, আনন্দে ও খুশীতে সর্বাবস্থায় আল্লাহ'র বড়ত্ব বর্ণনা করা আর নিজের সবকিছুকে আল্লাহ'র নিকট সোপর্দ করা উচিত।
No comments