সাহাবী দাহিয়াতুল কালবীর ঘটনা
******সাহাবী দাহিয়াতুল কালবীর ঘটনা********
বোনেরা আমার! দাহিয়াতুল কালবী আমার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ভীষণ সুন্দর এক সাহাবী ছিলেন। আইয়ামে জাহিলিয়াতের ইতিহাস খুললে দেখবেন নারীরা সমাজে কলংকিনী ছিল। আল্লাহর নবী স্বাধীনতা দিয়াছেন মেয়েদেরকে। মর্যাদা দিয়াছেন আমাদেরকে। নারীদেরকে জিন্দা কবর দেওয়া হতো। বাপ হইয়া নিজের মেয়েকে জিন্দা কবর দিয়া দিত। মায়া লাগতো না, দয়া লাগতো না। তাহলে দেখুন নবীর সাহাবী, দাহিয়াতুল কালবী নিজ হাতে নিজের মেয়েকে জিন্দা কবর দিয়েছেন। তিনি মুসলমান হওয়ার পর আমার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, দাহিয়াতুল কালবী তুমি মুসলমান হয়েছ, সাহাবী হয়েছ। আল্লাহ্পাক তোমার সব গোনাহ্ মাফ করে দিয়াছে। নবীর সাহাবী দাহিয়াতুল কালবী দুই চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে বলেন, হুজুরগো সব গোনাহ্ মাফ হতে পারেগো, একটা গোনাহ্ আমার মাফ হবে না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, কী মারাত্মক পাপ করেছো তুমি?
এবার সাহাবী দাহয়াতুল কালবী রোদন করে কাঁদতেছেন, ঝর্ণার মত গাল বেয়ে বেয়ে পানি পড়তেছে। চোখের পানিগুলি ছেড়ে দিয়ে এতিমের মত কাঁদেন আর বলেন, হুজুরগো আমার সন্তান, মেয়ে আমাকে আব্বু আব্বু বলে ডাকে, তার মাকে আম্মু আম্মু বলে ডাকে। আমি সফর থেকে চার বৎসর পর বাড়ি এসে দেখি মেয়েটা আমার বেশ কিছু বড় হয়েছে। আমি তার মাকে ধমক দিতে লাগলাম, কেন এই মেয়েকে ছোটকালে জিন্দা কবর দেওয়া হয় - নাই। সে বলে স্বামীগো তুমি নজর করে দেখ তোমাকে আল্লায় যেমন সুন্দর করে বানিয়েছে তোমার মেয়েকেও আল্লায় তোমার মত সুন্দর করে বানিয়েছে। সেই জন্য আমি তার নাম রেখেছি জামিলা (সুন্দরী)। এত সুন্দর - মেয়েকে আমি কেমনে জিন্দা কবর দেই। এবার রাতে যখন বিছানায় শুইতে গেলাম আমি আর আমার স্ত্রী মাঝখানে ঐ মেয়েটা আমাকে আব্বু বলে -একবার আমার দিকে ফিরে, আম্মু বলে তার মায়ের বুকের দিকে ফিরে। আমি চিন্তা করতে লাগলাম এত সুন্দর মেয়ে! আহা কি ঘৃণার কথা মেয়ের বাপ হয়েছি! তখন মনে মনে সিদ্ধান্ত করেছি আগামীকাল সকালে আমি - পাহাড়ের কিনারে গর্ত করে মেয়েকে জিন্দা কবর দিব। সকালে উঠে স্ত্রীকে বললাম, জামিলাকে গোছল করায়ে কিছু খাওয়ায়ে দাও, জামিলাকে নিয়া বেড়াইতে যাব। আমার স্ত্রী মেয়েকে গোছল করায়ে নুতন জামা পরায়ে দেয় এবং জনমের মত দুই লোকমা খানা তার মুখে দিয়া দেয়। আমি মেয়েটাকে নিয়া রওয়ানা করলাম। নবীগো, বহুদূরে পাহাড়ের পাশে গিয়া আমি গর্ত করতে লাগলাম। গর্ত করার সময় মাটির ছোট ছোট টুকরা আমার দাড়ির উপরে এসে লেগে যায়। আমার জামিলা আমার পাশে দাড়াইয়া নিজের হাতে দাড়িগুলি ছাফ করে আর বারবার বলে বাবাগো এটা কিসের গুহা? এটা কিসের গর্ত, কার জন্য করতেছ? এত গভীর করে। নবীগো আমি বলি যাও বেটি দূরে গিয়া খেল, কিছুক্ষণ পরে তুমি বুঝতে পারবা এটা কিসের গর্ত।
গর্ত যখন হয়ে গেল আমি ডাকলাম, "জামিলাগো, মাগো আয়গো, দেইখা যাগো গুহার ভিতরে কি দেখা যায়"। মেয়েটি আমার আব্বু আব্বু বলে দূর থেকে দৌড়ে গর্তের পাশে এসে বলে আব্বু কৈগো? গর্তের ভিতর কি দেখা যায়? নবীগো আমি কত নিষ্ঠুর পিতা, আমি কত বড় নির্দয় পিতা, আমার যে একটু মায়া লাগলো না, আমি পিছন দিক দিয়া ধাক্কা মেরে জামিলাকে গর্তের ভিতরে ফেলে দিয়া চারি দিকে পাথর মাটি যখন চাপা দিতে থাকি, জামিলা আমার দিকে নজর করে বলে আব্বাগো বারবার মায়ের কাছে বলতাম, মাগো আমার আব্বা কবে আসবেগো মা? এক নজর তোমাকে দেখার জন্য একবার তোমাকে আব্বা বলে ডাকার জন্য। হে বাবা তুমি আমার আজরাঈল হইয়া আসবা তা আমি আগে জানতামনা গো। বাবা মাইরোনাগো বাবা মাইরোনা। কোনদিন আর তোমাকে বাপ বলে ডাকবো না। এই মুখ কোন দিন তোমাকে দেখাবো না। দেশে দেশে ভিক্ষা করে খাইবোগো তবু আমাকে প্রাণে মাইরো না। আমার জানটা বাঁচাও! দাহিয়া বলে হুজুরগো জামিলা গুহায় পড়ে হাত দুটো উঁচু করে কত চিৎকার মেরে কাঁদলো আর বললো, আব্বুগো তোমার মত নিষ্ঠুর পিতা এই দুনিয়ায় নাই। আমি কোন কথা না শুনে চাঁপা মাটি দিয়া চলে আসি।
হুজুরগো আল্লায় সব গোনাহ্ মাফ করলেও এই গোনাহ্ মাফ দিতে পারে না। হুজুর আজও পর্যন্ত নিশিরাত্র যখন হয়ে যায়গো, রাত্রি শেষ হয়ে যায়, আমার ঘুম আসে না। আমি ঘুমাইলেও স্বপ্নের ভিতরে দেখি মেয়েটি আমার গুহার ভিতরে চিৎকার করে কাঁদতেছে আর বলতেছে, আব্বাগো! তোমার মত নিষ্ঠুর পিতা এই দুনিয়ায় নাই। হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ও ছাহাবী শোন তুমি যেই দিন অন্যায় করেছ তখন তুমি কাফের ছিলে তুমি বোঝো নাই। আজ যখন তুমি মুসলমান হয়েছ, কালিমা পড়েছ, আমার সাহাবী হয়েছে, ইসলামের সুশীতল ছায়ার নিচে আশ্রয় নিয়েছ, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এত বড় অন্যায়ও ক্ষমা করে দিয়েছেন। যেহেতু তুমি পড়েছ,
لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ مُحَمَّدٌ رَسُولُ اللَّهِ
(লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ্)
সেই যুগে মেয়ে হয়ে আসলে লোকেরা মনে করতো এটা পাপ হয়ে আসছে, সেহেতু জন্মের সাথে সাথে পিতা হয়ে মেয়েকে জিন্দা কবর দিয়া দিত।
হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নবুওত পাওয়ার পর ঘোষণা করে দিলেন নারীরা মুক্ত। নারীরা চির আজাদ। মেয়েদেরকে তোমরা এভাবে জিন্দা কবর দিতে পার না। ইসলাম আমাদেরকে স্বাধীনতা দিয়েছে, তাই সব মা বোনদের জন্য দায়িত্ব এটাই যে, আল্লাহ্ আইনকে জানা, আল্লাহ্ রাসূলকে বোঝা এবং সেভাবে নিজের জীবনকে গড়া। আপনি মুসলমান, কুরআন হাদীস জানা আপনার জন্য ফরজ। কিয়ামতে জিজ্ঞাসা করা হবে। এই জীবন জীবন নয়, আর একটা জীবন আসবে, সেই জীবনে আমাদের উঠতে হবে। এই যৌবন এই স্বাস্থ্য থাকবে না। শেষ হয়ে যাবে। কবরে থাকার পর উঠতে হবে। হাশরের মাঠে যাবার আগে তৈরী হন। বোনেরা - আমার সারা জীবন দ্বীনের কাজ বাদ দিয়া দুনিয়ার কাজ নিয়া ব্যস্ত রইলেন, যখন (মৃত্যু) এসে যাবে তখন একজন আলেম এসে বললো-
بِسْمِ اللهِ عَلَى مِلَّةِ رَسُولِ اللَّهِ
(বিছমিল্লাহি আলা মিল্লাতি রাসূলিল্লাহ)
কবরের মধ্যে রেখে দিল রাসূলের গাড়িতে। আপনার যখন যৌবনও চিন্তা শক্তি ছিল তখন আপনি রাসূলের গাড়িতে উঠেন নাই। মরা দেহ তুমি তুলে দিলে রাসূলের গাড়িতে, কছম করে বলি, তোমার ঐ মরা শরীর আল্লাহর রাসূল গ্রহণ করবেন না।
• যুবতী মেয়েরা ফিরে আস, ফিরে আস, তোমাদের চিন্তা শক্তি ভালো হোক। দোয়া করি আল্লাহর কাছে। এবাদত শুধু নামায রোজা হজ্জ যাকাত নয়। এবাদত হল জীবনের সমস্ত কাজ আল্লাহর হুকুম মত সঠিকভাবে পালন করা। যেই আল্লাহ নামায পড়তে বলেছে, ঐ আল্লাহই পর্দা করতে বলেছেন। যেই আল্লাহ্ হজ্জ করতে বলেছেন, সেই আল্লাহই যিনা করতে নিষেধ করেছেন। যেই আল্লাহ যাকাত দিতে বলেছেন, সেই আল্লাহই মিথ্যা কথা, শেকায়েত, গীবত, রিয়া, হিংসা-নিন্দা, অহংকার করতে নিষেধ করেছেন। মানুষের উপর জুলুম অত্যাচার করতে নিষেধ করেছেন। মা বাপের নাফরমানি করতে নিষেধ করেছেন। কিছু কথা মানবো আর কিছু মানবো না, উহাতে মুসলমান হওয়া যাবে না। এবাদত হলে জীবনের সকল ক্ষেত্রে আল্লাহর আইন মানতে হবে। মুসলমান সে ব্যক্তি যার হাতের দ্বারা ব্যবহার দ্বারা মানুষ নিরাপদ থাকবে। মানুষ উপকার পাবে। আপনার নামাযের সাথে আপনার চরিত্রের সাথে মিল থাকা উচিত। নামায, রোজা, হজ্জ, যাকাত এটাতো করতেই হবে, কিন্তু এটাই শেষ নয় এটা করেই মনে করবেন না যে, সব করে ফেলেছি। মুসলমান, মুসলমানকে গালি দেয় না, আমার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার তামাম জিন্দিগিতে কাউকে গালি দেন নাই। কুরআন শরীফে আল্লাহ্ পাক বলেছেন, খবরদার কাউকে গালি দিও না। কারো নাম বিকৃত করো না, কাউকে ঠাট্টা করো না, কোন বংশকে বিদ্রুপ করো না, কাউকে খাটো করে দেখ না।
সালাতুন ইয়া রাসুলুল্লাহ আলাইকুম,
সালাতুন ইয়া হাবীবাল্লাহ আলাইকুম।
রাসুলের বিধান মানিবে যখন,
আল্লাহ হবে তোমার আপন।
এই জগতে কি ছাড় লৌহ-কলম,
সকলেই হবে তোমার আপন।
সালাতুন ইয়া রাসুলুল্লাহ আলাইকুম,
সালাতুন ইয়া হাবীবাল্লাহ আলাইকুম।
No comments