দোজখের বয়ান (৪র্থ এবং শেষ পর্ব)

 


>>>> দোজখের বয়ান (৪র্থ এবং শেষ পর্ব) <<<<

হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, দোজখবাসীদেরকে আলকাতরার পোশাক পরান হবে এবং গন্ধকের কাপড় পরানো হবে। পোশাক পরানো মাত্র উহার তাপে শরীরের চামড়াগুলো খসে পড়বে। অন্ধ হয়ে যাবে, দেখতে পাবে না, বধির হয়ে যাবে, শুনতে পারবে না। হায়রে দুর্ভাগাগণ, বহুকাল বোবা হয়ে থাকবে, কথা বলতে পারবে না। মাথা পাহাড়ের মত বিরাট, শরীর কঙ্কালের মত কুৎসিত। চক্ষু মাটির টিলার ন্যায় উঁচু, চুলগুলি বাঁশবনের ন্যায় হবে। শরীরে ৭০টি চামড়া হবে প্রতিটি চামড়া ৪২ গজ মোটা হবে। একটি হইতে অপরটির মধ্যে ৭০ স্তর আগুন থাকবে এবং সাপ বিচ্ছু বাসা বেঁধে থাকবে এবং পেটের মধ্যেও আগুনের সাপ বিচ্ছু ভরা থাকবে। দেহ শাড়াসী দ্বারা কাটা হবে। লোহার হাতুড় গরম করে তা দিয়া মাইর পিট শুরু করবে। এমন সময় ভীষণ চিৎকার মারবে, হে পরওয়ারদিগার মাবুদগো, আগুনে আমাদেরকে ঘিরিয়া ফেলিয়াছে, আমরা নিরূপায় হয়ে পড়েছি। আমাদের দয়া কর। কিন্তু ইহাতে তাদের আজাব বন্ধ করা হবে না। কোন ফরিয়াদ শোনা হবে না; বরং যাতে তারা কথা না বলতে পারে সে জন্য গলায় বেড়ী ও আগুনের শিকল পরায়ে টেনে হেচড়ায়ে সিন্ধুকের ভিতর ফেলে দেওয়া হবে।
যাতনায় তারা চিৎকার মারবে, আবার চুপ থাকবে, তখন দেখবে আহা ধৈর্য ধরে থাকলেও আশা নাই, চিৎকার দিয়ে ডাকলেও উত্তর নাই, তখন
অধৈর্য হয়ে মৃত্যু কামনা করবে, অনুনয় বিনয় করবে। ৭০ হাজার বৎসর মালেকের নিকট ফরিয়াদ জানাবে কিন্তু মালেক কোন উত্তর দিবে না। তখন তারা আল্লাহকে ডেকে বলবে, হে প্রভুগো মালেক কোন উত্তর দিতেছে না। আগুনে আমাদের হাড় মাংস খেয়ে ফেলছে। অন্তর টুকরা টুকরা করে দিয়েছে। অন্তত একটি দিনের জন্য হলেও আমাদের আজাব কমায়ে দাও। এই সময় তাদের শরীর গলে দুর্গন্ধ হয়ে পুইজের স্রোত বেয়ে নামবে। পানি পানি বলে চিৎকার দিতে থাকবে। ৭০ ফুট উচু হয়ে পানি টগবগ করে জোস মারতেছে। ফেরেশতারা আগুনের শিকল ধরে টেনে হেচড়ায়ে ঐ পানির নিকট নিয়ে যাবে। সে পানি এত বিষাক্ত যে, হাতে লওয়া মাত্রই আঙ্গুলগুলি খুলে পড়ে যাবে। তখন গরুর মত মুখ দিয়ে খেতে থাকবে। মুখ, ঠোট, দাঁত ও চোখ খসে পড়ে ঐ পানিতে ভেসে যাবে। তখন ক্ষুধার জ্বালায় চিৎকার মারবে।
যাক্কুম নামক এক প্রকার কাটা যুক্ত বিষাক্ত গাছ খেতে দেওয়া হবে। উহা খাওয়া মাত্র কাটাগুলি গলায় বিন্ধে আটকে যাবে, আর ঐ গাছগুলি এত তিক্ত হবে যে, উহার এক টুকরা যদি দুনিয়ার সমস্ত পানিতে ফেলে দেওয়া হয়, তবে দুনিয়ার সমস্ত পানি তিক্ত হয়ে যাবে। উহা খেয়ে তারা পানি পানি বলে বিলাপ করবে। তখন ঐ গরম পানি মুখে ঢেলে দেওয়া হবে। উহা পেটে যাওয়া মাত্র নাড়ি-ভুড়ি উথলায়ে উঠবে। মাথার মগজ টগবগ করে ফেটে নাক কান দিয়ে বাহির হয়ে যাবে। আর নাড়ি-ভুড়িগুলো গলে পায়খানার রাস্তা দিয়ে ঝুপঝুপ করে দুই পায়ের নিচে পড়ে যাবে। এভাবে হাজার হাজার বৎসর দোজখের জেলখানায় শাস্তি দেওয়া হবে। সেখানে উটের ঘাড়ের মত প্রকাণ্ড বিষধর সাপ খচ্চরের মত বড় বড় বিচ্ছু পরিপূর্ণ থাকবে। উহাদের ভয়ে দোজখবাসীগণ এদিক সেদিক দোজখের মধ্যেই পালাইতে থাকবে। কিন্তু উহা তাহাদিগকে খোঁজ করে পেয়ে যাবে এবং এমনভাবে পেছন দিয়ে ধরে গ্রাস করবে যে, শুধু তাদের নখ আর মাথা বাকি থাকবে।
আর সারা শরীরের চামড়া টেনে খুলে ফেলতে থাকবে। উহার যন্ত্রনায় চিৎকার করে আল্লাহ্পাকের নিকট ফরিয়াদ করবে। কিন্তু আল্লাহপাক তাদের দিকে ফিরে তাকাবে না বরং আল্লাহ্পাক তাহাদিগকে বলবে,
فَذُوقُوا فَلَن تَزِيدَكُمْ إِلَّا عَذَابًا
(ফাযুকু ফালান নাঝিদাকুম ইল্লা আজাবা)
"হে গোনাহগারগণ! তোমরা দোজখের শাস্তি ভোগ করতেই থাক। আমি তোমাদের আজাব শুধু বাড়ায়ে দিব।"
(সূরা নাবা, আয়াত: ৩০)
দুনিয়াতে আমার কথা শুন নাই, কুরআন হাদিস মান নাই, আজ তার ফল ভোগ কর। তখন তাদের হাত-পা বলবে, দুনিয়াতে যেমন আল্লাহর হুকুম মান নাই, আজ তেমনি তার শাস্তি ভোগ কর। আবার আগুনের টুপি পরানো হবে, শরীরের জোড়াগুলোতে লোহার পেরেক মারা হবে। ঐ টুপির সাথে গলায় আগুনের শিকল বেঁধে কয়েদখানা হতে বের করে বলবে এই পাহাড়ে উঠো। তখন তারা এক হাজার বৎসর ধরে হাঁফাতে হাঁফাতে বহু কষ্ট করে ঐ পাহাড়ের উপর উঠা মাত্র ঐ ছাউত পাহাড় কাঁপতে থাকবে। ইহাতে তারা দোজখের নিচে অতল তলে গভীর সমুদ্রে পড়ে যাবে। পড়ার সময় পাহাড়ের সাথে টক্কর খেয়ে মাথা ভেঙ্গে যাবে। অতল তলে পড়তে পড়তে ৭০ বৎসর সময় লাগবে। ঐখানে পায়খানার সমুদ্রে হাবুডুবু খাবে। আর হাজার হাজার সাপ বিচ্ছু তাদেরকে পেঁচ দিয়ে ধরে দংশন করতে থাকবে। সেখানে বরফের চেয়েও হাজার গুণ ঠাণ্ডা লাগবে। তখন আগুনের কষ্ট হতেও এই কষ্ট বেশি লাগবে। ওয়াদা ভঙ্গকারী আর খেয়ানতকারীর আজাব হতে কাফিরও পানা চাহিবে। আর বেনামাজী জিনাকারী সুদখোরেরও এভাবে দূর্দশার সীমা থাকবে না।
দোজখের দারোগা মালেক ফেরেশতা হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট কসম করে বলেন, যদি শুচের আগা পরিমাণ জাহান্নামের আগুন দুনিয়াতে রাখা হতো, তবে সারা দুনিয়ার সব জীব উহার তাপে মারা যেতো। জাহান্নাম অতি ভয়ঙ্কর। গভীর আগুনের কুম্ভ পাথর আর লোহার দ্বারা উহা জ্বালায়ে রাখা হয়েছে। খাবার পানি ফুটন্ত গরম পানি পুইজ ও পঁচা রক্ত, পরণের কাপড় আলকাতরার। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, দোজখের মধ্যে সব চেয়ে কম আজাব যার হবে, তাকে মাত্র এক জোরা আগুনের জুতা পরানো হবে। উহার তাপে তার মগজ টগবগ করে মাথা ফেটে উথলাতে থাকবে। আর পেটের নাড়ি-ভুড়ি গলে ছিড়ে ছিড়ে পায়খানার রাস্তা দিয়ে পড়তে থাকবে। সে মনে করবে যে, তাকেই বুঝি সবচেয়ে কঠিন আজাব দিতেছে। আসলে সবচেয়ে তার আজাব কম।
আল্লাহ পাক আমাদেরকে রক্ষা করুক, রোযা নামায না করলে, হারাম হালাল বাছিয়া না চললে, কুরআন হাদীস না মানলে, মাতা-পিতার নাফরমানি করলে, ঝগড়া বিবাদ, চুরি, মিথ্যা অপবাদ, ওয়াদাভঙ্গ, আমানতের খেয়ানত করলে, জিনা, সুদ-ঘুষ খাইলে দোজখে যাইতে হবে। তবে খালেস তওবা করে নেক কাজ করতে থাকলে আল্লাহ পাক ক্ষমা করে বেহেশত দান করতে পারেন।
হাসিও না কান্দ বেশী ফালাও চোখের পানি,
না কান্দিলে পাইবা না যে আল্লাহর মেহেরবাণী।
আল্লাহর ভয়ে মহব্বতে কান্দিয়া যে বুক ভাসাইবে।
তাহার চোখের পানি দোজখে পড়িলে,
দোজখের আগুন তখন নিভিয়া যাইবে।
(সমাপ্ত)

No comments

Powered by Blogger.