দোজখের বয়ান (৩য় পর্ব)
>>>>>> দোজখের বয়ান (৩য় পর্ব) <<<<<<<
বোনেরা আমার, জাহান্নামের দারোগা মালেক বলবে,
(আহারে কেনগো তোমরা দোজখে আসিলে।) "তোমাদের কাছে কি কোন ভীতি প্রদর্শনকারী কেউ কি কোন দিন এসেছিল না?"
(সূরা আল মুলক, আয়াত: ৮)
কেউ কি তোদেরকে জাহান্নামের পরিণতির কথা শুনায় নাই। জাহান্নামের আগুনকে তিন হাজার বৎসর তাপ দিয়া বিষাক্ত করেছে। এখন তাহা অমাবশ্যা রাতের চেয়েও অন্ধকার হয়ে আছে। জ্বলতে জ্বলতে পুড়তে পুড়তে এখন তাহা বিষাক্ত কালো হয়ে আছে, ও বান্দারা কেন আসলি। মালেক ফেরেশতা যখন এভাবে আফসুস করে বলবে, জাহান্নামিরা তখন বলবে, হ্যাঁ আমাদের কাছে নবী, রাসূল ও আলেম এসেছিল, কুরআন শরীফ খুলে খুলে আমাদেরকে বুঝাইছে-
فَكَذَّبْنَا وَقُلْنَا مَا نَزَّلَ اللَّهِ مِنْ شَيْءٍ .
(ফাকাযযাবনা ওয়া কুলনা মা নাযযালাল্লাহু মিন শাইইন)
"আমরা মিথ্যা মনে করেছি, আমরা মনে করেছি আর বলেছি আল্লাহ তায়ালা কোন কিছুই নাজিল করেনি।"
(সূরা আল মুলক, আয়াত: ৯)
وَقَالُوا لَوكُنَّا نَسْمَعُ أَوْ نَعْقِلُ مَا كُنَّا فِي أَصْحُبِ السَّعِيرِ .
(ওয়া-কালু লাওকুন্না নাছমাউ আও না'কিলু মা কুন্না ফী আছহাবিচ্ছায়ির)
"আহারে আলেমদের মুখে যা শুনেছি, যদি আমরা মেনে চলতাম তাহলে আজকে আর জাহান্নামে আমাদের যাওয়া লাগতো না।
(সূরা আল মুলক, আয়াত: ১০)
তখন মালেক ফেরেশতা তাদেরকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করতে গেলে তারা বলবে, একটু থাম আমাদেরকে একটি ঘণ্টা কাঁদিতে সময় দাও। তখন তারা রোদন করে এত কাঁদবে যে, ইহাতে তাদের চোখের পানি শেষ হয়ে রক্ত পড়বে। তখন মালেক বলবে, হায়রে আফসোস তোমরা যদি এই কান্নাটা মাওলার দরবারে দুনিয়াতে কেঁদে আসতে, তবে আজ তোমাদেরকে জাহান্নামে যাওয়া লাগতো না। এরপর তাদের জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হলে তারা চিৎকার মেরে বলবে-
لا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ مُحَمَّدٌ رَسُولُ اللَّهِ
(লাইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ)
এ পবিত্র বাণী শুনে আগুন দূরে সরে যাবে। মালেক বলবে, হে আগুন! এদেরকে গ্রাস কর! আগুন বলবে, এমন পবিত্র বাণী পড়তেছে এই অবস্থায় কেমন করে গ্রাস করি! এমন সময় তারা মালেকের ভয়ঙ্কর আকৃতি দেখে এই কালেমা ভুলে যাওয়া মাত্রই আগুন তাদেরকে গ্রাস করতে আরম্ভ করবে। কারো পায়ের পাতা পর্যন্ত, কারো গলা পর্যন্ত গ্রাস করবে।
যখন চেহারা ধরতে থাকবে, তখন মালেক বলবে, হে আগুন তাদের চেহারা জ্বালাইওনা, ইহা দ্বারা তারা আল্লাহকে সেজদা করছে আর তাদের অন্তর জ্বালাইও না, ইহার দ্বারা তারা রমযানের রোজা রেখে ক্ষুধার জ্বালা পানির পিপাসা সহ্য করেছে। আল্লাহ পাক বলেন, ওরা যুগ যুগ ধরে জাহান্নামে থাকবে। খাবে কি শোন-
لَا يَذُوقُونَ فِيهَا بَرْدًا وَلَا شَرَابًا إِلَّا حَمِيمًا وَغَسَّاقًا
(লা-ইয়াজুকুনা ফিহা বারদাও ওয়ালা শারাবান ইল্লা হামীমাও ওয়াগাচ্ছাকা)
"সেখানে কিছু ঠাণ্ডা পানিও খেতে দেওয়া হবে না, দেওয়া হবে উত্তপ্ত রক্ত আর ক্ষতের পুইজ, পচা রক্ত।"
(সূরা নাবা, আয়াত: ২৫)
বোনেরা আমার! তখন জাহান্নামিরা তাকায়ে তাকায়ে দেখবে। ঐতো বেহেশত দেখা যায়। ঐ বেহেশতের মধ্যেইতো কত মানুষ দেখা যায়। হায়রে ওরা আমার প্রতিবেশী ছিল। দুনিয়াতে ওরা ইসলামের কাজ করতো বলে ওদেরকে গালি দিতাম, ঠাট্টা, বিদ্রুপ করতাম। আজ ওরা বেহেশতে গেল আর আমরা দোজখে এসেছি। পানির পিপাসায় টিকতে না পেরে ঐ জাহান্নামিরা বেহেশতি লোকদেরকে ডেকে বলবে ও বেহেশতিরা তোমরা তো আমাদের প্রতিবেশী ছিলে, আজ পড়ে গেছি জাহান্নামে। পানির পিপাসায় মরে যাচ্ছি, দয়া করে আল্লাহ তোমাদের যে খাবার দিয়েছে, একটু ফিকে মার আর না হয় পানির গ্লাসটা একটু দাও। একটু পানি খাই, কলিজাটা একটু ঠাণ্ডা করি, ক্ষুধার জ্বালায় আমদের নাড়িভুড়ি পুড়ে গেছে। একটু খাবার দাও।
জাহান্নামিরা এমনি করে যখন কাঁদতে থাকবে, তখন বেহেশতির। ডাক দিয়া বলবে-
قَالُوا إِنَّ اللهَ حَرَّمَهُمَا عَلَى الْكُفِرِينَ
(ক্বা-লু ইন্নাল্লাহা হাররামাহুমা আলাল কাফিরিন)
"আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কাফিরদের জন্য বেহেশতের খানা পানি সব হারাম করে দিয়েছেন।"
(সূরা আল আ'রাফ, আয়াত: ৫০)
ও মুসলমানেরা আল্লাহকে ভয় কর, নামায না পড়লে, পর্দা না করলে, জাহান্নামে যেতে হবে। আমার আল্লাহ পাক বলেছেন, এরপর বেহেশতিরা জাহান্নামিদের ডেকে বলবে-
وَنَادَى أَصْحَابُ الْجَنَّةِ أَصْحَابَ النَّارِ أَنْ وَجَدْنَا مَا وَعَدَنَا رَبُّنَا حَقًّا
(ওয়া-না-দা আছহাবুল জান্নাতি আছহাবান্নারি আন ওয়াজাদনা মা ওয়াআদানা রাব্বুনা হাক্কান)
"আল্লাহ আমাদের কাছে যে ওয়াদা করেছে, আমরা তাহা হকভাবে পেয়েছি।"
(সূরা আল আ'রাফ, আয়াত: ৪৪)
আল্লাহ্ তায়ালা ওয়াদা করছে নামায পড়বি, রোযা রাখবি, যাকাত দিবি, ওজনে কম দিবি না, হারাম হালাল মেনে চলবি, মিথ্যা বলবি না, পর্দা রক্ষা করে চলবি। আমার দ্বীনের জন্য জান মাল দিয়া জেহাদ করবি জান্নাত পাবি। আমরা ঐ সব কাজ করেছি। নামায পড়েছি, রোযা রেখেছি, যাকাত দিয়েছি, পৰ্দ্দা করেছি, হারাম হালাল মেনে চলেছি। মিথ্যা বলি নাই, ওজনে কম দেই নাই, দ্বীন কায়েমের জন্য চেষ্টা করেছি। মাদ্রাসা মসজিদে দান করেছি, তালীমের কাজ করেছি। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদের জান্নাত দিয়েছেন।
(৪র্থ পর্ব আসিতেছে)
No comments