দোজখের বয়ান (২য় পর্ব)
◑◑◑◑ দোজখের বয়ান (২য় পর্ব) ◑◑◑◑
সালাতুন ইয়া রাসুলুল্লাহ আলাইকুম।
সালামুন ইয়া হাবীবাল্লাহ আলাইকুম।
জিবরাইল আসিয়া বলে, নবীজীগো আর কাঁদবেন না,
আল্লাহ তা'আলা আপনার কাঁদন আর সইতে পারেন না।
সালাতুন ইয়া রাসুলুল্লাহ আলাইকুম।
সালামুন ইয়া হাবীবাল্লাহ আলাইকুম।
একদিন জিবরাঈল (আঃ), আমার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর নিকট আগমন করলেন, তখন তাঁর চেহারা ভীষণ হয়রান, পেরেশান দেখাইতেছিল। নবী জিজ্ঞাসা করলেন, ভাই ইহার কারণ কি? জিবরাঈল (আঃ) বলেন, ভাই দোজখ দেখে আসলাম, উহার ভয়ে আমার অন্তর শুকায়ে যাইতেছে। দোজখিদিগকে যে কাপড় পরানো হইবে, তার এক ইঞ্চি পরিমাণ কাপড় যদি দুনিয়ার এক প্রান্তে লটকায়ে দেওয়া হয়, তবে তার দুর্গন্ধে দুনিয়ার সব প্রাণী মরে যাবে। আর দোজখিদেরকে যে জিজির দিয়া বান্ধা হবে, তার এক তোলা পরিমাণ যদি দুনিয়ার সব চেয়ে উঁচু পাহাড়ের উপর রাখা হয় তবে পাহাড় জ্বলে ভস্ম হয়ে পৃথিবী ছেদ করে দোজখের জিঞ্জির দোজখে গিয়ে পৌঁছিবে।
আদম (আঃ) যখন প্রথম দুনিয়াতে আগমন করেন, তখন তার খাদ্য ■ পাকাবার জন্য আগুনের প্রয়োজন হইল। আল্লাহ পাকের হুকুমে জিবরাঈল - (আঃ) দোজখের দারোগা মালেকের নিকট হতে একবুট পরিমাণ আগুন লয়ে - ৭টি সমুদ্রে ৭০ বার ধুইয়া দুনিয়ার পূর্ব প্রান্তে ছাহেক পাহাড়ের উপর রাখিলেন। তখন সে পাহাড় সে আগুনের উত্তাপ সহ্য করতে না পেরে পুড়ে ভস্ম হয়ে শুধু ধূম রয়ে গেল। সেই ঘুম হইতেই দুনিয়ার আগুনের সৃষ্টি হলো। দোজখের আগুনের তেজ এত বেশী হইবার কারণ হলো, পাথর দ্বারা ইহার ইন্ধন দেয়া হয়। দোজখিদিগকে গরম পানি ও দুর্গন্ধযুক্ত পুইজ পান করতে দেয়া হবে। ইহাতে তাদের নাড়ি ভুড়ি সব খসে পড়বে। আর তাদের শরীর দুর্গন্ধে ভরে যাবে। আল্লাহ পাক বলেন-
-
لَا يَمُوتُ فِيهَا وَلَا يَحْى نی (লা-ইয়ামৃতু ফীহা ওয়ালা ইয়াহ্ইয়া)
"সেখানে তারা মরবেও না, বাঁচবেও না।"
(সূরা তা-হা, আয়াত: ৭৪)
দোজখের উত্তাপে অস্থির হয়ে বৃষ্টি প্রার্থনা করলে আকাশের কালো মেঘ দেখা দিবে, উহা হইতে অসংখ্য সাপ বিচ্ছু দোজখীদের দেহে পড়িতে থাকিবে। ঐ সমস্ত সাপ বিচ্ছু একবার দংশন করিলে হাজার বৎসর পর্যন্ত তাহার যন্ত্রণা থাকবে, অথচ সব সময়ই উহারা তাহাদিগকে দংশন করতে থাকবে।
প্রথম দোজখের নাম, "হাবিয়া"। ফেরাউন নমরুদ প্রভৃতি কাফিরগণ এই দোজখে বাস করবে। দ্বিতীয় দোজখের নাম, "ছায়ির"। মুশরিকগণ এই দোজখে বাস করবে। তৃতীয় দোজখের নাম "ছাকার"। মূর্তিপূজকগণ এই দোজখে বাস করবে। চতুর্থ দোজখের নাম "জাহীম" শয়তান ও অগ্নিপূজকগণ এই দোজখে বাস করবে। পঞ্চম দোজখের নাম "হুতামা" ইহুদীগণ এই দোজখে বাস করবে। ষষ্ঠ দোজখের নাম "লাজা” খ্রিস্টানগণ এই দোজখে বাস করবে। সপ্তম দোজখের নাম "ওয়াইল" আমাদের আখেরী নবীর উম্মৎগণের মধ্যে যারা পাপের কাজ করে বিনা তওবায় মারা যাবে তারা এই দোজখে বাস করবে।
আল্লাহ পাক দোজখ সৃষ্টি করে ১ হাজার বছর জ্বালায়ে রাখেন। ইহাতে সে টকটকে লাল হয়ে গেল। তারপর আবার ১ হাজার বৎসর রাখলে ইহাতে তার রং সাদা হয়ে গেল। তারপর আবার এক হাজার বৎসর জ্বালায়ে রাখলেন, ইহাতে তার রং জমকালো হয়ে অমাবশ্যা রাত্রের চেয়েও অন্ধকার হয়ে আছে।
وَقِيلَ لَهُمْ ذُوقُوا عَذَابَ النَّارِ الَّذِي كُنتُم بِهِ تُكَذِّبُونَ (ওয়া কীলা লাহুম যুকু আজাবান্নারিল্লাযি কুংতুম বিহি তুকায্যিবৃন)
"পাপিগণকে বলা হবে- তোমরা এখন দোজখের আগুনের স্বাদ গ্রহণ কর। আল্লাহ ও রাসূলের কথা বিশ্বাস কর নাই, কুরআন ও হাদীসকে মিথ্যা জানিয়াছ এখন তার শাস্তি ভোগ কর। দেখ কে তোমাদেরকে সাহায্য করতে আসে।"
(সূরা আস সাজদা, আয়াত: ২০)
কাফিরগণকে দোজখের দিকে তাড়ায়ে নেওয়া মাত্রই আজাবের ফেরেশতারা জিঞ্জির বেড়ী লইয়া দোজখ হতে হাঁক মেরে এসে বেড়ীগুলি তাদের মুখের মধ্যে দিয়া প্রবেশ করায়ে পায়খানার রাস্তা দিয়ে বের করবে।
আর বাম হাত বক্ষের মধ্যে দিয়া প্রবেশ করায়ে দুই কাঁধের মধ্যে দিয়া বাহির করে জিঞ্জিরের সাথে মুখের দিকে টেনে বেঁধে দিবে। ডান হাত গর্দানের উপর বেঁধে দিবে, একই জিঞ্জিরে একজনের সাথে একটি করে শয়তানকেও বেঁধে দিবে এরপর টেনে নেওয়া হবে। আর লোহার মুগুর দ্বারা পিটাতে থাকবে। ছুটাছুটি করতে চাবে, পারবে না। চিৎকার দিতে চাবে পারবে না। মুখে মোহর মারা থাকবে, তাদের চেহারা হয়ে যাবে কালো, চক্ষু হবে নীল।
হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আমার গোনাহগার উম্মতেরা যারা আল্লাহ্ পাকের নাফরমানী করে বিনা তওবায় মারা যাবে, তাদেরকেও ফেরেশতারা হাঁকায়ে দোজখের দিকে নিয়ে যাবে। তবে তাদের চেহারা কালো চক্ষু নীল হবে না। মুখে মোহর মারা হবে না এবং শয়তানের সাথে বান্ধা হবে না। জিঞ্জির বেড়ী শিকল বান্ধা হবে না। ফাতেমা (রাঃ) বলেন, তবে কিভাবে নিবে? হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, তিন প্রকার লোককে দোজখে নিক্ষেপ করা হবে। ফাসিক যে প্রকাশ্যে পাপ করে, গোনাহগার পুরুষ, বদকার নারী। বৃদ্ধ পুরুষদের সাদা দাড়ি ধরে, দোজখে নিক্ষেপ করা হবে। যুবকদের লম্বা চুল ধরে টেনে দোজখে নিক্ষেপ করা হবে। বদকার নারীদের চুলে ধরে টেনে দোজখে নিক্ষেপ করা হবে।
পাপিরা সবাই চিৎকার করে বলবে, হে মুহাম্মাদ! হে মুহাম্মদ! কিন্তু মালেক ফেরেশতার ভয়াবহ আকৃতি দেখে এই নাম ভুলে যাবে। মালেক বলবে, এরা আবার কারা এদের নাক মুখও কালো নয়, গলায়ও জিঞ্জির নাই। হে বদকারগণ! তোমরা কারা? তারা বলবে, যার উপর কুরআন শরীফ নাযিল হয়েছে। মালেক বলবে, কুরআন শরীফ তো মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উপর নাযিল হয়েছিল। তখন তারা বলবে, হায়রে নছিব, আমরা সেই মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর উম্মত। তখন মালেক বলবে, তবে তোমরা কি কুরআন শরীফে আল্লাহ্ নাফরমানী হইতে বাঁচিয়া থাকার সতর্কবানী শোন নাই?
(৩য় পর্ব আসিতেছে)
No comments