দোজখের বয়ান

 


°°°°°°°°°°°° দোজখের বয়ান °°°°°°°°°°°

আল্লাহ পাক কুরআন শরীফে বলেন-
نَايُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا قُوا أَنْفُسَكُمْ وَأَهْلِيكُمْ نَارًا وَقُودُهَا النَّاسُ وَالْحِجَارَةُ .
(ইয়া আইউ হাল্লাযীনা আমানু কু আংফুছাকুম ওয়া আহ্হ্লীকুম নারা, ওয়া কুদুহান্নাছু ওয়াল-হিজারাহ্)
"হে ঈমানদারগণ! তোমরা দোজখের আগুন হইতে নিজেরা বাঁচ এবং তোমাদের আহালকে বাঁচাও। যে দোজখের ইন্ধন হবে মানুষ আর পাথর।"
(সূরা আত তাহরীম, আয়াত: ৬)
নিজের ঘরের সকলকে আল্লাহ পাকের আদেশ নিষেধ শিক্ষা দাও। মেয়েরা স্বামীকে অনুরোধ করে দ্বীনের পথে আন। ছেলে-মেয়েকে চাকর-চাকরানীকে আল্লাহর হুকুমমত চালাও। আল্লাহ পাক তার নাফরমান বান্দা বান্দিদের জন্য যে কঠিন আজাবের ব্যবস্থা করে রেখেছে, তার নামই দোজখ। সেখানে সুখ, শান্তি আরাম বলতে কিছুই নাই। দোজখ আল্লাহর গজবের আগুন দ্বারা জ্বালায়ে রেখেছেন, কোরআন ও হাদীসে দোজখ সম্বন্ধে যে সকল বিবরণ পাওয়া যায়, তাহা শুনিলে শরীর শিহরিয়ে উঠে। এমনকি নবী ওলিগণও দোজখের ভয়ে কাঁপিয়াছেন।
একদিন আমার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবায়ে কেরামকে নিয়া কথা বলতেছিলেন, এমন সময় তাহারা একটা ভীষণ শব্দ শুনতে পেলেন। জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইহা কিসের শব্দ। তিনি বলেন, ৭০ বৎসর পূর্বে দোজখের কিনারা হইতে নিচের দিকে একখানা পাথর নিক্ষেপ করা হয়েছিল। আজ ৭০ বৎসর পরে সেই পাথর খানা দোজখের তলায় গিয়ে ঠেকিল, ইহা তারই শব্দ। ইহা হতে দোজখের গভীরতা কিছুটা অনুমান করা যায়। হাশরের মাঠে দোজখকে ৭ তবক জমিনের নিচ হতে কোটি কোটি ফেরেশতা লাগাম ধরে টানিয়া আনিয়া আরশের বাম দিকে উপস্থিত করিবে। দোজখের ৪ খানা পা, ৩০ হাজার মাথা, প্রত্যেক মাথায় ৩০ হাজার মুখ, প্রত্যেকটি মুখে ৩০ হাজার দাঁত, প্রত্যেকটি দাঁত ৩০ হাজার ওহোদ পাহাড়ের মত বিশাল। প্রত্যেক মুখে দুইটি ঠোঁট, প্রত্যেক ঠোটে লোহার জিঞ্জির লাগানো, প্রত্যেকটি জিঞ্জিরে ৭০ হাজার কড়া, প্রত্যেকটি কড়ায় লোহার শিকল লাগানো।
হাশরের দিন আল্লাহ পাক বলবেন, হে ফেরেশতারা, জাহান্নামের শিকল ধরে টেনে হাশরের ময়দানে নিয়ে আস। নাফরমানরা একটু দেখুক, সখ - করে কোন জাহান্নাম কামাই করেছে। কিন্তু জাহান্নামকে খুব সাবধানে ভালো করে টেনে ধরে রেখ, নচেৎ নাফরমানদেরকে দেখলে ক্ষুধার্ত জাহান্নাম এক লাফে সব খেয়ে ফেলবে। হিসাব করতে দিবে না। তখন জাহান্নামের একটা শিকল ৭০ হাজার ফেরেশতা ধরবে। এভাবে কোটি কোটি ফেরেশতা যখন - জাহান্নামকে হাশরের ময়দানের দিকে নিয়ে আসবে, তখন বহুদূর থেকে • ক্ষুধার্ত জাহান্নাম নাফরমানদের দেখে এমন জোরে লাফ মারবে যে, কোটি কোটি ফেরেশতাও টেনে রাখতে পারবে না। ফেরেশতাদের বাধা পেয়ে জাহান্নাম এমন বিরাট ডাক মারবে, ডাকের চোটে হাশরের ময়দান থর থর করে কাঁপতে থাকবে। জাহান্নামের ডাকের চোটে হাশরের ময়দানে হুলুস্থল শুরু হয়ে যাবে।
• ঐদিকে জাহান্নাম লাফাতে লাফাতে আসতেছে, আর উপর ও নিচের দিকে শ্বাস-প্রশ্বাস করতেছে। শ্বাস-প্রশ্বাসের শব্দ বজ্রের আওয়াজের ন্যায় - বিকট। দোজখের পিঠ ভীষণ কালো, উহা হতে কালো ধুয়া ও আগুনের গোল্লা গর্জন মেরে ৭০ বৎসরের পথ উঁচু হয়ে আওয়াজ দিয়ে জ্বলে উঠতে • থাকবে, আর ভয়ানক ক্রোধের সাথে দৃষ্টিপাত করলে মনে হবে, যেন সে 5 এখনই হাশরবাসী সকলকে গিলিয়া ফেলার চেষ্টা করতেছে। ফেরেশতারা যদি শিকল ধরে টেনে না রাখে তবে মু'মিন, কাফের সকলকে সে খেয়ে ফেলবে। দোজখ ফেরেশতাদের বাধা পেয়ে ক্রোধে ফেটে পড়বে, আর দাঁত ~ পিষতে থাকবে। দাঁত পিষার শব্দে হাশরবাসী ভয়ে আছাড় পাছাড় খেয়ে রোদন করবে। চোখের পানি শেষ হয়ে চোখ দিয়ে রক্ত পড়বে। ৭০ হাজার ফেরেশতা গর্জন মেরে জাহান্নাম হতে জিনজির, হাত কড়া ডান্ডা-বেড়ী নিয়ে বের হবে। তাদের দাঁত মুখের বাহিরে এসে রয়েছে, চক্ষু জ্বলন্ত অগ্নি কুণ্ডের ন্যায় ধক্ ধক্ করতে থাকবে এবং নাকের ছিদ্র হতে অগ্নিশিখা ও ধুয়া বের হবে। উহা দেখে আর কাহারও হুশ থাকবে না। যত সম্মানিত ফেরেশতা, পয়গাম্বর, আওলিয়া, কুতুব সকলেই আধামরা হয়ে হামাগুড়ি দিয়ে মাটিতে লুটায়ে পড়ে যাবে, আর বলবে يَا نَفْسِى يَا نَفْسِى )ইয়া নাফছি, ইয়া নাফছি) মাবুদ গো, আমাকে বাঁচাও।
জিবরাঈল (আঃ), মিকাঈল (আঃ), ইস্রাফিল (আঃ), আজরাঈল (আঃ), এমনকি আরশ বহনকারী ফেরেশতারা পর্যন্ত ভয়ে কম্পবান হয়ে যাবে। ঈসা (আঃ), মূসা (আঃ) সিজদায় পড়ে যাবে আর সকলেই বলবে, মাবুদগো আমাকে বাঁচাও, আমাকে বাঁচাও। কোন নবীরই হুশ থাকবে না। তাদের উম্মতের কথাও মনে থাকবে না। শুধু বলবে আজ জাহান্নাম যেভাবে লাফায়ে - লাফায়ে আসতেছে, আমাদের বুঝি উপায় নাই। এই অবস্থা দেখে আমাদের - নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরশের নিচে সিজদায় পড়ে কেঁদে, কেঁদে ডাক দিবেন, ও মাবুদ, মাবুদগো। আমার উম্মতের উপায় কি? رَبِّى عَبْلِى أَمَّتِي )রাব্বি হাবলি উম্মাতি) আমাদের নবীর কান্দনে মাওলার রহমতের দরিয়ায় জোশ মারবে। মাওলা পাক বলবেন, হে হাবিব! মাথা উঠান, আপনি যাহা চাইবেন তাই শোনা হবে, আপনি আর কাঁদবেন না। আমাদের নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মাথা উঠায়ে বলবেন, ও মাবুদ মাবুদ গো, আপনি তাড়াতাড়ি জাহান্নামকে ফিরান। তখন আল্লাহ্পাক অল্প একটু পানি হাতে দিয়ে বলবেন, হাবিবগো! আপনি এই পানিটুকু নিয়া জাহান্নামের দিকে ছিটায়ে দেন। আমার নবী এই পানি পেয়ে জাহান্নামের দিকে দৌড়ে গিয়ে পানির ছিটা মারবেন, অমনি জাহান্নাম পিছন দিকে দৌড় দিবে। তখন আমার নবী জিজ্ঞাসা করবেন, মাবুদগো এটা কোন কুদরতী পানি। কোটি কোটি ফেরেশতা যেই জাহানকে টেনে ফিরায়ে রাখতে পারে না, এই অল্প পানির ছিটায় সেই জাহান্নাম ফিরে গেল।
আল্লাহ পাক বলবেন, হে হাবিব এটা কোন কুদরতী পানি নয়, এটা হল - আপনার গোনাহগার উম্মতের চোখের পানি। আপনার উম্মতেরা শয়তানের ধোকায় পড়ে গোনাহ করে ফেলেছিল, তখন আমি মাওলার কথা মনে পড়ে আমার ভয়ে, জাহান্নামের ভয়ে নিজেকে নাফরমান ভেবে যখন কান্না বিজড়িত কণ্ঠে তওবা করে চোখের পানি ছেড়ে দিয়েছিল, তখন আমি সেই পানিকে হেফাজত করে রেখেছি। হে হাবিব এই পানি যে রকম জাহান্নামের আগুন -ঠাণ্ডা করতে পারে এরকম আর কোন জিনিস আমি বানাই নাই। ডুকাহকাপূ
✓ বাচ্চা ওয়ালা মুরগির উপর যখন চিলে থাবা মারে, মুরগির মা পাগল হয়ে যায়। মুরগির মা উড়াল মারে ঐ ছাদের উপর দাঁড়ায় আবার লাফ মারে। গাছের ডালে বসে চিৎকার মারে। জমিনে পড়ে পাখা দুটো উঁচু করে - বাচ্চাদের ডাকতে থাকে। বাচ্চারা মায়ের পাখার নিচে আশ্রয় নেয়, আর মা তার ভাষা দিয়ে বলতে থাকে, আয় আয় আর কান্দিস না, আর ভয় পাইস না। আমি থাকতে তোদের একটা সন্তানকেও চিলের মুখে যাইতে দিব না। নবী আমার ডেকে বলেন, হাশরের ময়দান যেদিন শুরু হয়ে যাবে, আর আমার উম্মতেরা পানি পানি বলে যখন ডাক মারবে, চিৎকার করবে, আমি নবী বাচ্চাওয়ালা মুরগীর মতো, উড়াল মারবো। মিজানের পাল্লার গোড়ায়, আবার দৌড় মারব পুলছিরাতের গোড়ায়, আরশে আজিমের নিচে পড়ে যাবো।
• আল্লাহ্ হাবিব সিজদায় পড়ে ডাক দিবেন, ও মাবুদ, মাবুদগো আমার তায়েফের রক্তের বিনিময়ে আমার এতিম উম্মতগুলিকে তুমি আজ মাফ করে দাও। জাওয়াব আসবে না, নবী আমার ডেকে বলবেন, ও মাবুদ, মাবুদগো! জাওয়াব যদি তুমি না-ই দাও, ওহুদের ভাঙ্গা দাঁত দু'টিকে অছিলা করে ঐ ভাঙ্গা দাঁতের বিনিময়ে তুমি আমার গরিব উম্মতগুলিকে মাফ করে দাও। এইভাবে আল্লাহর হাবিব হাশরের ময়দানে কাঁদতে থাকবেন। হুজুরের চোখ ঝরা পানি গাল বেয়ে পড়া পানি যখন আল্লাহ দেখবেন, আল্লাহ ডাক দিবেন বন্ধু হে, কাঁদবেন না। وَلَلْآخِرَةُ خَيْرُلَّكَ مِنَ الأَولَى )ওয়ালাল আখিরাতু খাইরুল লাকা মিনাল উলা) দুনিয়াতে কষ্ট দিয়েছি আমি তোমাকে, দুনিয়াতে বহু কষ্ট করেছো আখেরাতের ময়দান তোমার কষ্টের নয়। বন্ধু কেঁদনা এটা আমি আল্লাহ দেখব, সবুর করুন হাবিব, চোখের পানি গুলি মুছে ফেলেন, আপনি শাফায়াত করতে থাকেন। আজকে শাফায়াত করার অধিকার দিলাম। فَاشْفَعْ لِمَنْ شِئْتَ )ফাশফা লিমান শিতা) যাকে খুশি তাকে লইয়া বিনা হিসাবে জান্নাতে প্রবেশ করুন। বলেন, (আল হামদুলিল্লাহ)।
(২য় পর্ব আসিতেছে)

No comments

Powered by Blogger.